সময় বুঝি থমকে রয়েছে এখানে।
বেলফাস্ট থেকে এক ঘণ্টা দূরের শহর ডুঙ্গানন। আলস্টার প্রদেশে নদী-জঙ্গলে ঘেরা ছবির মতো উত্তর আয়ার্ল্যান্ডের কাউন্টি টাইরোনের প্রত্যন্ত ডুঙ্গাননেই জন্মান ভগিনী নিবেদিতা। ১৮৬৮-এর ২৮ অক্টোবর।
দীর্ঘ অবহেলার পরে অবশেষে ২০০৭ সালে আলস্টার হিস্ট্রি সার্কেলের উদ্যোগে চিহ্নিত হয় নিবেদিতার জন্মস্থানটি। যদিও কাজটি মোটেই সহজ ছিল না। নিবেদিতার জন্মের পর কেটে গিয়েছে ১৪৬ বছর। ফলে জন্মভিটের খোঁজ পাওয়াটা আদপে সহজ কাজ ছিল না বিশেষজ্ঞদের কাছে।
বিভিন্ন ঐতিহাসিক নথি-মানচিত্র ঘেঁটে জানা যায় ১৬, স্কচ স্ট্রিটের বাড়িতে রিচমন্ড নোবেল ও মেরি ইসাবেলের ঘরে জন্ম নেন মার্গারেট এলিজাবেথ নোবেল। আজ যেখানে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে একটি ‘পাউন্ডশপ’ বা খুচরো পণ্য বিক্রয় কেন্দ্র। বাড়ি খুঁজে পাওয়ার পরে সেখানে নিবেদিতার স্মৃতি রক্ষায় নীল ফলক (ব্লু প্লাক) লাগানোর সিদ্ধান্ত নেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষ (ব্রিটেনে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা যে বাড়িতে থেকেছেন, সেখানে তাঁদের স্মৃতি রক্ষার্থে বসানো হয় সম্মানসূচক ব্লু প্লাক)।
কিন্তু ব্রিটেনের বঙ্গ সমাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ, স্বামী বিবেকানন্দের এই শিষ্যা সম্পর্কে কোনও দিনই খুব একটা উৎসাহ দেখাননি তাঁরা। বর্তমান প্রজন্মের কাছে নিবেদিতাকে নতুন করে তুলে ধরতে সক্রিয় হয়েছেন আইরিশ গবেষকরাই। নিবেদিতার বাড়ি খুঁজে বার করার পাশাপাশি তাঁকে নিয়ে বছর কয়েক আগে একটি নাটকও লিখে ফেলেন কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা জিন ম্যাকগিনেস। ‘অ্যাওকেনিং অফ এ নেশন’ নামে ওই নাটকে তিনি তুলে ধরেছেন, কী ভাবে নিবেদিতা পরাধীন বাঙালি তথা ভারতীয়দের স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন।
নিবেদিতা যে চারুকলা, শিল্প, সাহিত্যের মতো ক্ষেত্রেও স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেছেন, তা এত দিন অজানা ছিল আয়ার্ল্যান্ডবাসীর। ২০১০ সালে ম্যাকগিনেসের নাটকের দল ‘নোবেল থেস্পিয়ান্স’ নাটকটি মঞ্চস্থ করে ডাবলিনের স্যামুয়েল বেকেট থিয়েটারে। দারুণ সাড়া পায় এই কাজ। সেই থেকে প্রতি বছর ২৮ অক্টোবর, নিবেদিতার জন্মদিনে ওই নাটকটি অভিনীত হয়ে আসছে আয়ার্ল্যান্ড ও ব্রিটেনের নানা থিয়েটার হলে। চলতি বছরেও নিবেদিতার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আইরিশ রাজনীতিবিদ এবং সাংবাদিক মরিস হেয়েজ। ছিলেন ডুঙ্গাননের মেয়র শন ম্যাকগিগান। কানাডা, আমেরিকা ও ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্তের বহু আইরিশ ও ভারতীয়ও দেখেছেন এই নাটক। এ ভাবেই গোটা আয়ার্ল্যান্ডে নিবেদিতাকে ছড়িয়ে দিতে চান ম্যাকগিনেস। তবে আয়ার্ল্যান্ডের সর্বত্র না হলেও ভগিনী নিবেদিতা সম্পর্কে জানতে যথেষ্টই আগ্রহী ডুঙ্গানন। শহরের সংগ্রহশালায় রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে নিবেদিতার ছবিও। নিবেদিতার ভূমিকায় যিনি অভিনয় করেছেন, ডুঙ্গাননের সেই ক্যারেন করিগান বলেন, “এ এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা। এমন এক জন অসাধারণ নারীর কথা সারা পৃথিবীর মানুষ জানবে, এটাই আমাদের একমাত্র স্বপ্ন। তিনি শুধু আইরিশই নন। তিনি আমার গ্রামেরই মেয়ে!” |