ভোর থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় করে চলে বিকিকিনি। সব্জি আনা, নিয়ে যাওয়া, ঝাড়া মোছা একের পর কাজে ফুরসত পান না চাষিরা। অথচ সব্জি বাজারে ঢোকার রাস্তা অপরিসর, আড়তদারের ছোট ছাউনিতে পর্যাপ্ত আলোর অভাবে কাজ করতে হয় তাঁদের। কালনা ২ ব্লকের জিউধরা এলাকার নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির পাইকারি সব্জি বাজারের পরিকাঠামো এতটাই বেহাল বলে অভিযোগ চাষি থেকে আড়তদার সকলের।
কালনা শহর লাগোয়া এসটিকেকে রোডের গা ঘেঁষে রয়েছে নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির ভবন। এর মধ্যেই সব্জি বাজার। শুধুমাত্র কালনা ১ ও ২ ব্লকের চাষিরাই নন, হুগলি, নদিয়া থেকেও চাষিরা গাড়ি করে সব্জি নিয়ে আসেন এখানে বিক্রি করতে। এরপর আড়তদারের হাত ঘুরে সেই সব্জি চলে যায় ফড়েদের কাছে। কালনা থেকে ট্রাকে করে সব্জি যায় শিয়ালদহ, আমতলা, আসানসোল, দুর্গাপুর, শিলিগুড়ি, মালদহ, রায়গঞ্জ, ধানবাদ, ঝাড়খণ্ড, এমনকী দিল্লির বাজারেও। |
এই ছোট ছাউনিতেই কাজ চলে রাতভর। —নিজস্ব চিত্র। |
কিন্তু ওই নিয়ন্ত্রিত বাজারে সব্জি বিক্রি করতে আসা চাষিদের অভিযোগ, উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভেঙে পড়েছে বাজারের পরিকাঠামো। তাঁদের ক্ষোভ, বাজার সমিতির ভবনের ভেতর সব্জি বাজারে ঢোকা ও বেরোনোর রাস্তা সংকীর্ণ। বহু দিন সংস্কার না হওয়ায় উঠতে শুরু করেছে রাস্তার মোরাম। এছাড়া বাজারের মধ্যে আড়তদারদের ঘরের সামনের যে ছাউনিতে দিনভর সব্জি ঝাড়াইয়ের কাজ চলে তা আয়তনে অতটাই ছোট যে আড়তদারেরা ছাউনির সামনে পলিথিনের আস্তরণ লাগিয়ে রেখেছেন। কিন্তু তাতেও স্থানাভাব হওয়ায় পলিথিনের আস্তরণের বাইরে গিয়ে সব্জি ঝাড়াইয়ের কাজ করতে হয় চাষিদের। রোদ-জলে কাজ করতে গিয়ে সব্জির গুণগত মানও কিছুটা কমে যায় বলে অভিযোগ চাষিদের। এছাড়া কাঁধে করে বাজারে সব্জি আনা-নেওয়ার কাজ করেন এমন কয়েকজনের অভিযোগ, সব্জির ছাউনি পর্যন্ত লরি বা অন্য গাড়ি এসে পৌঁছয় না। রাস্তা এতটাই সরু যে সব্জির ছাউনি থেকে বেশ কিছুটা দূরেই থামে গাড়িগুলি। ফলে গাড়ি থেকে সব্জি নামিয়ে বাকিটা কাঁধে করে নিয়ে যেতে হয় তাঁদের। এমনই একজন নগেন মণ্ডলের অভিযোগ, “পাইকারি বাজারে ট্রাক, লরিতে মাল ওঠানো-নামানোর কাজ করি। রাত ১টা পর্যন্ত কাজ চলে। সব্জির এক একটা ঝাঁকায় সাত-আট মণ মাল থাকে। ছাউনিতে লরি না ওঠায় এই সমস্ত ভারী ঝাঁকা আমাদের মাথায় করেই গাড়িতে তুলতে হয়।” চাষি, মজুরদের আরও অভিযোগ, ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজ চলে। অথচ বিশ্রামাগার না থাকায় একটু পা ছড়িয়ে বসারও জায়গা পান না তাঁরা।
পাইকারি বাজার নিয়ে ক্ষোভ চাষিদের একার নয়, আড়তদারেরাও বেশ কিছু বিষয় নিয়ে ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, সব্জি ঝাড়াইয়ের কাজ করার সময় পর্যাপ্ত আলো না থাকায় সমস্যা হয়। রাতে কাজ করতে হলে বাড়তি আলোর ব্যবস্থা করতে হয় তাঁদের। এছাড়া ছাউনি ছোট হওয়ায় সব্জি ঝাড়া-বাছার জন্য যথেষ্ট জায়গা থাকে না। ফলে পলিথিন দিয়ে ছাউনির সামনে কিছুটা অংশ ঢেকে দিতে হয় তাঁদের। এক আড়তদার তারক বৈরাগ্যের কথায়, “দু’টি সব্জির ছাউনির মাঝে বেশ কিছুটা জায়গা পড়ে রয়েছে। ওই জায়গায় নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতি বড় ছাউনি তৈরি করে দিলে চাষিদের পণ্য বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সুবিধা হয়।” তারকবাবুর দাবি, আলো এবং পানীয় জল মেলার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের নজর দেওয়া উচিত। আড়তদারেরা আরও জানান, ওই পাইকারি বাজারে একটি হিমঘর রয়েছে। বছরখানেক আগে মুখ্যমন্ত্রী উদ্বোধন করে গেলেও এখনও তালাবন্ধই পড়ে রয়েছে সেটি। বিষয়টি নিয়ে নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতির চেয়ারম্যান তথা কালনার মহকুমাশাসক শশাঙ্ক শেঠিকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, “নিয়ন্ত্রিত বাজার সমিতিতে নতুন রাস্তা, গোডাউনের মত বেশ কিছু কাজ হয়েছে। তবে অন্য সমস্যাগুলির ব্যাপারে জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখব।” সমস্যা থাকলে দ্রুত সমাধানের নির্দেশ দেওয়া হবে বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। |