মেয়ের ধর্ষণ-খুনের বিচার চেয়ে এ বার কামদুনি-খোরজুনার পথই নিল বর্ধমানের নবাবহাট। বৃহস্পতিবার বিডিও তাঁদের বাড়িতে গিয়ে সরকারি সাহায্য দেওয়ার কথা বললেও নিহত ছাত্রীর পরিবার তা প্রত্যাখ্যান করল। যার জেরে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকায় মৃতার পরিবারের অনাস্থা ও অসন্তুষ্টি কার্যত প্রকাশ্যে এসে গেল।
গত ২৫ অক্টোবর শিক্ষকের কাছে পড়ে নবাবহাটের বাড়িতে ফেরার পথে অন্ধকার সেচখালের ধারে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীটিকে। তিন দিন পরে খালের জলে তার বিবস্ত্র দেহ মেলে। যদিও তার আগে ওই জায়গায় খোঁজ চালিয়েও কিছু পায়নি পুলিশ। এখনও পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে ছ’জন। বুধবার ওই খালেই মেয়ের কামিজ খুঁজে পেয়ে জেলাশাসককে জানান ছাত্রীটির বাবা। সে ক্ষেত্রে পুলিশ তা পেল না কেন, তার সদুুত্তর এখনও মেলেনি।
এ বর্ধমান-১ বিডিও দেবদুলাল বিশ্বাস ছাত্রীটির বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারকে আর্থিক সাহায্য ও খাদ্যশস্য দেওয়ার প্রস্তাব দেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, মেয়ের মৃত্যুর শোকে পরিবারের কেউ কাজ করতে পারছেন না, তাই এই সাহায্য। কিন্তু তার বাবা-মা দু’জনেই এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। বরং তাঁরা বলেন, “আমরা সরকারি সাহায্য নয়, দোষীদের সাজা চাই।”
বৃহস্পতিবারই ছাত্রীর মা অনুযোগ করেছিলেন, দেহ মেলার পরে পাঁচ দিন কেটে গেলেও পুলিশ তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। তাঁর প্রশ্ন ছিল, “যে কাজ পুলিশের করার কথা, তা আমরা করছি। পুলিশ তাহলে কী করছে?” এ দিন তিনি বলেন, “গত রাতে বিডিও বাড়িতে এসে আমাদের ১০ হাজার টাকা আর চাল-ডাল নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু আমরা তা নিতে পারিনি।”
ইতিমধ্যে ওই এলাকায় ১০০ দিন প্রকল্পে রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত কিছু এখনও সেখানে পড়ে থাকতে পারে এই আশঙ্কায় পুলিশ গিয়ে বাধা দেয়। পরে বিডিও বলেন, ওই ধরনের কিছু পেলে তাঁকে সঙ্গে-সঙ্গে খবর দেওয়ার জন্যপ্রকল্পের সুপারভাইজারদের তা বলে দেওয়া হয়েছে। তাঁর দাবি, “ওই এলাকায় মূল রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল। জোরকদমে সেটি সংস্কার করা হচ্ছে। দু’তিন দিনের ভেতরেই তা চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে।”
নিহত ছাত্রীর পরিবারের সাহায্য প্রত্যাখ্যান সমর্থন করে সিপিএমের জেলা সম্পাদক অমল হালদার বলেন, “এটাই ঠিক পদক্ষেপ। আমাদের গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি দ্রুত কিনারা চেয়ে বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। এলাকাবাসীও ক্ষুব্ধ। পুলিশ দ্রুত ঘটনার কিনারা করুক।” রাজ্যের মন্ত্রী তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি (গ্রামীণ) স্বপন দেবনাথের বক্তব্য, “সরকারি সাহায্য নেওয়া বা না নেওয়া ওঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা জোর করতে পারি না। তবে পুলিশ দেখছে আরও কেউ জড়িত ছিল কি না। দলের কর্মীদেরও বলেছি, পরিবারটির পাশে দাঁড়াতে।” |