মাছের টকেই দেবীর ভোগ
মাটির হাঁড়িতে মাছের টক। থালায় ভেজা মুগের ডাল চুড়ো করে মাথায় বসানো রয়েছে নারকেল নাড়ু, পায়েস, চিনি, কদমা ও সন্দেশ। দীর্ঘদিন ধরেই এই রীতি চলে আসছে কালনার ধাত্রীগ্রামের বাধাগাছি গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের কালীপুজোয়। এ বার এই পরিবারের পুজো পড়ল ২৭১ বছরে।
এসটিকেকে রোড ধরে কালনা শহর থেকে ছয় কিলোমিটার গেলেই ধাত্রীগ্রাম পোস্ট অফিস মোড়। এখান থেকে একটু গেলেই বাধাগাছি গ্রাম। কালীপুজোর কারণে এখানে এক ডাকে চেনে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যদের। শুক্রবার সকালে এই বাড়িতে গিয়ে চোখে পড়ল চুড়ান্ত ব্যস্ততা। কোথাও চলছে বাড়ি পরিষ্কার করা। কোথাও তৈরি হচ্ছে ভোগের উনুন। বাড়ির পাশে লাগানো হচ্ছে আলো। এসে গিয়েছে জেনারেটর।
চট্টোপাধ্যায় পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, নদিয়া জেলার মাটিয়ারা গ্রামের সংস্কৃতের পণ্ডিত সদারাম চট্টোপাধ্যায়ের মামার বাড়ি ছিল বাধাগাছি গ্রামে। সেই সূত্রে তিনি বিবাহ করেন এই গ্রামে। বিয়ের কিছু দিন পরে শ্বশুরবাড়ির গ্রামেই আলাদা বাড়ি করে স্ত্রীকে নিয়ে থাকতে শুরু করেন তিনি। ১১৫০ বঙ্গাব্দ নাগাদ নিজের বাড়িতে শুরু করেন কালীপুজো। আর্থিক সমস্যার কারণে প্রথমে হয় ঘটপুজো। পুজো হল শাক্ত মতে। মাটির পাত্রে ভোগ হিসেবে দেওয়া হল মাছের টক। সেই শুরু।
২৭১ বছরের পুরনো হাঁড়ি-কলসি। —নিজস্ব চিত্র।
পরিবারের সদস্যদের দাবি, পুজো শুরু হওয়ার পর থেকে পরিবারে আর্থিক শ্রীবৃদ্ধি ঘটতে শুরু করে। ১২০০ বঙ্গাব্দ থেকে ঘটের বদলে মূর্তিপুজো শুরু হয়। মূর্তিপুজোর সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় পাঁঠাবলি। তবে এখন অবশ্য পাঁঠাবলি বন্ধ রয়েছে। পরিবারের সদস্য সুনীল কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “ত্রিশ বছর আগে পাঁঠাবলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে। এখন আম, ছাঁচিকুমড়ো, কলা নিবেদন করা হয় দেবীর উদ্দেশ্যে।” সুনীল চট্টোপাধ্যায়, শ্যামল কুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কিছু নিয়ম অবশ্যই বদলেছে। কিন্তু পুজোর বেশিরভাগ রীতিই ধরে রাখা হয়েছে। ২৭১ বছর আগে পিতলের যে ঘট ও হাঁড়িতে দেবীর পুজো হয়েছিল আজও সেগুলি সযত্নে ব্যবহার করা হয়।”
এই পরিবারের সদস্যরা বেশির ভাগই কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। কিন্তু তাঁরা সবাই বাড়ি আসেন পুজোতে। কলকাতার সন্তোষপুরের থাকা চট্টোপাধ্যায় পরিবারের সদস্য সুশান্ত চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এই দিনগুলোর জন্য আমরা সারা বছর অপেক্ষা করি। কালীপুজোর দু’দিন আমাদের পরিবারের কাছে বিশেষ।” পরিবারের সবথেকে প্রবীণ সদস্যা ৯২ বছরের অমিয়া চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “ছেলে, বউ, নাতিনাতনিকে একসঙ্গে কাছে পাই এই সময়। তাই কালীপুজো কাছে পারিবারিক মিলনোৎসবও বটে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.