সদ্যোজাতের মৃতদেহ খুবলে খাচ্ছে কুকুর! শুক্রবার সাত সকালেই পুরুলিয়া সদর হাসপাতালের মর্গের পিছনের দিকে পুরসভা চত্বরে এমন দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছিলেন বাসিন্দারা। কী ভাবে হাসপাতালের ‘ডিস্ক নম্বর’ লাগানো সদ্যোজাতের দেহ কুকরের মুখে এল, তা নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে ঘটনার রিপোর্ট চেয়েছেন।
পুরুলিয়া পুরসভার বিরোধী দলনেতা, কংগ্রেসের বিভাস দাস বলেন, “তখন সকাল সাড়ে ৮টা। পুরসভার পিছনের দিকে হইচই শুনে গিয়ে দেখি, একটা কুকুরের মুখে সদ্যোজাতের দেহ। বাচ্চার কপালে হাসপাতালের ‘ট্যাগ’ও লাগানো ছিল। তবে, ধুলোবালি লেগে থাকায় কী লেখা রয়েছে, বোঝা যাচ্ছিল না। আমরা নিশ্চিত, এই সদ্যোজাতের দেহ কুকুর মর্গ থেকেই তুলে এনেছে। লোকজন কুকুরটিকে তাড়া করতেই সে সদ্যোজাতর দেহ ফেলে পালায়।” জায়গাটি জেলা পরিষদের ক্যান্টিনের পাশে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। শিশুটির দেহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বিভাসবাবু বলেন, “মাস দেড়েক আগেও এই চত্বরে কুকুরের মুখে সদ্যোজাতের দেহ দেখা গিয়েছিল। সেই শিশুর কপালে হাসপাতালের স্টিকার না থাকায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দায় অস্বীকার করার একটা জায়গা পেয়েছিলেন। এ বার তো আর অস্বীকার করতে পারবেন না!”
পুরুলিয়ার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মানবেন্দ্র ঘোষ বলেন, “এ রকম একটি অভিযোগ পেয়েছি। কী সদ্যোজাতের দেহ ওখানে গেল, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” সদ্যোজাত শিশুটির পরিচয় অবশ্য জানা যায়নি। হাসপাতাল সূত্রের খবর, গত ২৪ ঘণ্টার কিছু বেশি সময়ে মোট ছ’টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এই শিশুটি সেই ছয় শিশুর একটি কি না, তা-ও খতিয়ে দেখার দাবি উঠেছে। জেলাশাসকের নির্দেশে অতিরিক্ত জেলাশাসক (উন্নয়ন) প্রবালকান্তি মাইতি হাসপাতালে সরেজমিন তদন্তে যান। মর্গে পৌঁছে তিনি দেখেন, ঘরের জানালায় একটি বড় ফাঁক রয়েছে। সেখান দিয়ে শিশুর দেহ তুলে কুকুরের পক্ষে গলে যাওয়া সম্ভব। হাসপাতালের সুপার নীলাঞ্জনা সেন বলেন, “মর্গের ঘরের জানালায় এক জায়গায় ফাঁক ছিল। কোন জালও লাগানো ছিল না। সেই ফাঁক দিয়ে কুকুর কোনও ভাবে ঢুকে মৃতদেহ তুলে নিয়ে গিয়ে থাকতে পারে। তবে, আমরা এ দিনই ওই অংশটা জাল দিয়ে ঢেকে দিয়েছি।” হাসপাতাল সূত্রে জানা যাচ্ছে, যে ছ’টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে হাসপাতালে, তাদের মধ্যে তিনটি শিশুর জন্ম সেখানেই হয়েছে। বাকি তিনটিকে বাইরে থেকে আনা হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের অনেকটা আগেই জন্ম হওয়ায় (প্রি-ম্যাচিওর বেবি) ছ’টি শিশুর ওজন অত্যন্ত কম ছিল।
এ দিন পুরসভার আর এক কংগ্রেস কাউন্সিলর আনন্দ চৌধুরী দাবি করেন, বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ জেলা পরিষদ চত্বরে আরও একটি সদ্যোজাতের মৃতদেহ দেখা গিয়েছে। সেটিও সম্ভবত কোনও কুকুর মুখে করে তুলে নিয়ে এসেছিল। যদিও মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বা হাসপাতালের সুপার দু’টি সদ্যোজাতের দেহের কথা মানতে চাননি। জেলা সভাধিপতি সৃষ্টিধর মাহাতোর প্রতিক্রিয়া, “হতে পারে বাইরের কেউ বাচ্চা ফেলে দিয়ে গিয়েছে! তবে, আমি মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে গোটা ঘটনা তদন্ত করে দেখতে বলেছি।” জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, “আমি জেলা স্বাস্থ্য দফতরের কাছে রিপোর্ট চেয়েছি। কেন না ইতিপূর্বেও এ রকম অভিযোগ শোনা গিয়েছিল। স্বাস্থ্য দফতর খতিয়ে দেখবে, কারও তরফে কোনও গাফিলতি রয়েছে কি না। গাফিলতি প্রমাণিত হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে হবে।” |