বট গাছের মূল কাণ্ডটি আর খুঁজে পাওয়া যায় না। গাছের থেকে নেমে আসা ঝুড়িই এখন মোটা গুড়ির আকার নিয়েছে। গাছটিকে নিয়ে কোনও গবেষণা না হলেও, ঐতিহাসিক বা গবেষকরা জানিয়েছেন, গাছটির বয়স নিদেনপক্ষে দেড়শ বছরের বেশি। ওই গাছ ঘিরে চারপাশে আরও গাছগাছালি। রদ্রাক্ষ, অশ্বত্থ, সেগুন নানান রকমের গাছ। ভর দুপুরেও চারদিকে আলো-আঁধারি পরিবেশ। বিকেল নামলেই পাখিদের ডানার শব্দে চারপাশে যেন অসংখ্য রহস্য তৈরি হয়। মধ্যে শ্মশান কালী মন্দির। ওই মন্দিরে পুজো দিয়েই এক সময়ে ডাকাতিতে বের হতেন দেবী চৌধুরানি। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসে দেবী চৌধুরানির যে কয়েকটি কালী মন্দিরে পুজো দেওয়ার কথা জানা যায়, তার মধ্যে জলপাইগুড়ি শহর লাগোয়া এই মন্দির অন্যতম বলে অনেকেরই দাবি।
বেশ কয়েক বছর আগে ৩১ ডি জাতীয় সড়কের ধারে জলপাইগুড়ির গোশালা লাগায়ো ওই মন্দির চত্বরে একটি সুরঙ্গ-মুখও খুঁজে পাওয়া যায় বলে জানা গিয়েছে। সম্প্রতি মন্দির সংস্কার করে, এলাকাটিকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে মন্দির কমিটি। কালীপুজোর প্রাচীন প্রথায় কোনও সংস্কার বা রদবদল ঘটেনি। মন্দিরের বয়স অন্তত তিনশ বছর পেরিয়ে গিয়েছে বলে জানা যায়। সেই সময়ের প্রথা এখনও অটুট। কালীপুজোর দিন মন্দির চত্বরের সামনে খাটানো হয় অতিকায় সামিয়ানা। পুজোর সপ্তাহখানেক আগে থেকে রং শুরু হয় মন্দিরের সামনে থাকা হাড়িকাঠও।
রাতভর মন্দিরে পুজো হয়। তন্ত্রমতে এই পুজো দেখতে রাত বাড়ার সঙ্গে ফি বছর শহরবাসীর ভিড়ও বাড়তে থাকে। পুজোর পাশাপাশি চলে পেল্লায় হাঁড়ি-কড়াইতে খিচুড়ি রান্না। মন্দির কমিটির সম্পাদক দেবাশিস সরকার বলেন, “কয়েকশো বাসিন্দাকে প্রসাদ বিলি করা হয়। রীতি মেনেই পুজো হয়। পুজোর পাশাপাশি মন্দিরের থেকে বেশ কিছু সামাজিক উদ্যোগও গ্রহণ করা হয় প্রতিবছর।”
পুজো দেখতে দর্শনার্থীদের ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশকর্মীদের কিছুটা সমস্যায় পড়তে হয় শহরের যোগোমায়া কালীমন্দিরেও। শহরের অন্যতম পুরোনো এই কালীমন্দিরে সন্ধ্যা থেকেই দর্শনার্থীদের ভিড় শুরু হয়ে যায়।
একই ভাবে রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম, শান্তিপাড়া কালীবাড়ি, মোহন্তপাড়া কালীবাড়িতেও পুজোর সময় বাসিন্দাদের উপস্থিতি নজর কাড়ে। শহরের নতুন-প্রাচীন কালীমন্দিরের পাশাপাশি শহরের বিগ বাজেটের সর্বজনীন পুজোমণ্ডপে ভিড়তো রয়েইছে। তবে জেলা পুলিশের এক কর্তা বলেন, “কালীপুজোর দিন দর্শনার্থীদের ভিড় থাকে শহরের কালীমন্দিরগুলিতেই। তবে পুজোর পর দিনগুলিতে বিগবাজেটের পুরো মণ্ডপগুলিতে রাতভর ভিড় সামলাতে হয়।” |