ভিন জেলার কারিগররাই এবারের শিলিগুড়ির কালীপুজো মাতাচ্ছে। শিলিগুড়ির বড় বাজেটের একাধিক পুজোর কারিগর তারাই। যেমন শিলিগুড়ির উল্কা ক্লাব, এলিট ক্লাব এবং বিবেকানন্দ ক্লাবের মণ্ডপ তৈরিতে ব্যস্ত নবদ্বীপের কারিগররা। তেমনি রামকৃষ্ণ ব্যায়াম শিক্ষা সঙ্ঘের মণ্ডপ তৈরি করছেন মেদিনীপুরের কাঁথির কারিগররা। জিটিএস ক্লাবের মণ্ডপসজ্জার দায়িত্ব বর্তেছে বনগাঁর শিল্পীর হাতে। মণ্ডপসজ্জায় ও বৈচিত্রে ভিন্ন আঙ্গিক তৈরি করলেও পুজো উদ্যোক্তারা একমত দক্ষিণবঙ্গের শিল্পীদের হাতের জাদুতেই প্রাণ পাবে শিলিগুড়ির পুজো।
শিলিগুড়ির উল্কা ক্লাবের পুজো এবারে ৩৬ বছরে। শাস্ত্রীনগর পাটেশ্বরী জুনিয়র হাইস্কুল ময়দানে কাল্পনিক মন্দিরে দেবীর অধিষ্ঠান। নজর কাড়বে ৮৫ ফুট উঁচু মন্দির চূড়া। চটের উপরে রেকসিনের সজ্জা মন্দিরের শোভা বাড়াবে। ৬ টি বিশাল দরজা শহরবাসীকে আহ্বান জানাবে। নবদ্বীপের কারিগররা দূর্গাপুজোর সময় থেকেই মণ্ডপ তৈরিতে ব্যস্ত। পুজো কমিটির সহ সভাপতি অজিত পাল চৌধুরী বলেন, “শনিবার সন্ধ্যায় এই পুজোর উদ্বোধন করবেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেব।”
শিলিগুড়ির হাকিমপাড়ার বিবেকানন্দ ক্লাব শহরের অন্যতম সেরা পুজোর একটি। তাঁদের পুজোর এবারে আকর্ষণ উদয়পুরের রাজবাড়ির আদলে তৈরি মণ্ডপ। ৭ লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মান হচ্ছে এবারের পুজো মণ্ডপটি। এবারে ক্লাবের ৬৬ তম বর্ষের পুজোর কারিগররা সকলের নবদ্বীপের। ক্লাবের সম্পাদক নিলয় চক্রবর্তী জানান, “নবদ্বীপের কারিগররা বেশ দক্ষ, সে কারণেই তাঁদের উপরেই ভরসা রাখছি। কাজ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তাদের দক্ষতা।” প্লাইউডের উপরে ফাইবার দিয়ে তৈরি হচ্ছে মূল মণ্ডপ।
সেবক রোডের পরেশ নগরের এলিট ক্লাবের পুজোয় এবারে কাল্পনিক মন্দিরকেই সাজিয়ে তোলা হয়েছে। প্লাইউডের উপরে কাঠের সুচারু কাজ দর্শক টানবে বলে আশা পুজো কমিটির সম্পাদক বাপি দেবের। পুজোকে কেন্দ্র করে এলাকায় বসে গিয়েছে মেলা। পুজো ও মেলা মিলিয়ে জমজমাট এলিটের পুজো। বাপিবাবুর মতে, “যে শিল্পীরা কাজ করছে তাঁদের মত দক্ষ কর্মী পাওয়ায় কাজের সুবিদা হচ্ছে।
পানিট্যাঙ্কি মোড়ের রামকৃষ্ণ ব্যয়াম শিক্ষা সঙ্ঘের পুজোর এবার ৪৬ তম বর্ষ। তাঁদের অভ্র, রাংতা, অ্যালুমিনিয়াম গ্রিল ও টিনের জাল নিয়ে মণ্ডপ সাজাচ্ছেন কাঁথির কারিগররা। মণ্ডপটি একটি বিশাল পদ্ম। ১২ লক্ষ টাকা বাজেটের পুজোয় পদ্মের বুকে রয়েছে কালী মূর্তি। তাঁদের পুজোর থিম, ‘তমস শক্তির বিনাশনে, মাতৃশক্তি কমলাসনে।’ পুজো কমিটির সম্পাদক সৌমিত্র কুণ্ডু বলেন, “অন্যান্য বছরের মত এবারেও আমাদের পুজো সেরার মধ্যেই থাকবে। শিল্পীরা যথেষ্ট দক্ষ। সে কারণেই ওঁদের আনা হয়েছে।” শিলিগুড়ির মহকুমা পরিষদের উল্টোদিকে জিটিএস ক্লাবের পুজোর আদল কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রক। উত্তর দিনাজপুরের বনগাঁ থেকে আসা শিল্পীরা দিনরাত পরিশ্রম করে মূল মণ্ডপটি তৈরি করেছেন। এবারে ক্লাবের পুজো ৫২ বছরে পা দিল। ক্লাবের অন্যতম যুগ্ম সম্পাদক উৎপল চক্রবর্তী বলেন, “প্লাইউড ও বিদ্যুতের পরিবাহী প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে মণ্ডপ হচ্ছে। আলোয় বিবেকানন্দ রকের পরিবেশও ফুটিয়ে তুলছেন শিল্পীরা।” |