সামনে হাওড়া-সহ পাঁচটি পুরসভার ভোট। তার পরে আরও বড় লড়াই লোকসভা নির্বাচনে। শাসক দলের কার্যকলাপ যেমনই হোক, এই অবস্থায় লড়াইয়ের ময়দান ছেড়ে সরে আসা বন্ধ করতে দলে কড়া বার্তা জারি করতে চাইছে আলিমুদ্দিন। আগামী রবিবার দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকেই এই সংক্রান্ত রূপরেখা বেঁধে দিতে চান সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব। যাতে কোনও জেলা নেতৃত্ব হঠাৎ কোনও সিদ্ধান্ত নিয়ে দলকে আর বিড়ম্বনায় না ফেলেন!
গত সেপ্টেম্বরে ১২টি পুরসভার ভোটের পরে সিপিএমের প্রথম রাজ্য কমিটির বৈঠক বসছে রবিবারই। সে বার ভোটের দিন তণমূলের সন্ত্রাসকে দুষে প্রার্থী প্রত্যাহার করার ঘোষণা হয়েছিল বর্ধমান ও চাকদহ পুরসভায়। ভোট বয়কটের ওই সিদ্ধান্তকে ঘিরে প্রবল বিতর্ক চলেছে সিপিএমে। বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব প্রথম দিকে তাঁদের সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি সাজালেও শেষ পর্যন্ত দলেই পিছু হঠতে হচ্ছে তাঁদের। দফায় দফায় আলোচনার পরে দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বড় অংশই এখন মনে করছেন, ভোটের ময়দান ছেড়ে ওই ভাবে সরে এসে কোনও লাভ হয়নি। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য এই মতের প্রবল প্রবক্তা। ইতিমধ্যে দলের রাজ্য কেন্দ্রের সাধারণ সভা এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা কমিটির বর্ধিত বৈঠকে গিয়ে সেই মত স্পষ্ট করে দিয়ে এসেছেন তিনি। বুদ্ধবাবুদের যুক্তি মেনেই এ বার কড়া বার্তা দিয়ে রণে ভঙ্গ দেওয়ার মানসিকতা বন্ধ করতে চাইছে আলিমুদ্দিন। দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “মানুষের মনের ভাব জোর করে চেপে রাখা হচ্ছে অনেক জায়গায়, এ কথা ঠিক। কিন্তু সেই দিন বর্ধমান হঠাৎ করে সরে না-দাঁড়ালে আমরা আরও কিছু ভোট পেতাম! ওই জেলারই গুসকরা পুরসভার ফল অন্য রকম হতে পারত!”
বস্তুত, লড়াই না চালিয়ে সরে দাঁড়ানোর পথ ঠিক ছিল কি না, তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বর্ধমান জেলা সিপিএমের অন্দরেও। দলকে চাঙ্গা করতে সংগঠনের খোলনলচে বদলানোর দাবিও উঠেছে জেলা নেতৃত্বের একাংশের মধ্যে। জেলা থেকে প্রকাশিত পুজো সংখ্যায় জেলা সম্পাদক অমল হালদার-সহ জেলা নেতৃত্ব মেনেও নিয়েছেন যে, সংগঠনকে লড়াইয়ের উপযুক্ত করে গড়ে তোলাই এখন চ্যালেঞ্জ। দলের অন্দরে এখন তাঁরা এ কথাও বলছেন, নেতৃত্ব এবং সংগঠনে রদবদল করলেই ভাল হবে বলে যদি দল মনে করে, তা হলে সেই পথই ভাবতে হবে।
এ বারের রাজ্য কমিটির আলোচ্য সাংগঠনিক বিষয়ই। রাজ্য কমিটির একাধিক সদস্যের মত, শুধু বর্ধমান বলে নয়, যেখানে যেখানে প্রয়োজন, সেখানে আর দেরি না-করে রদবদল সেরে ফেলা উচিত। কেন্দ্রীয় কমিটির কাছ থেকে এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট বার্তা আসার পরেও উত্তর ২৪ পরগনা ছাড়া আর কোনও জেলা এখনও সংগঠনে তেমন কোনও ঝাঁকুনির রাস্তায় যায়ইনি! এই প্রেক্ষিতেই সংগঠনে রদবদলের দাবি এ বারের রাজ্য কমিটিতে ফের ওঠার সম্ভাবনা। |