আফসোস আর রইল না রাজ্য সরকারি কর্মীদের!
পালাপার্বণের ছুটি তিন দিন কমে যাওয়ায় অন্য তিন দিন ছুটি দেওয়ার বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল আগেই। কিন্তু তাতেও মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি মতো ১ জানুয়ারি ছুটির কথা ছিল না। ফলে হতাশ হয়েছিলেন অনেকেই।
শুক্রবার জানা গেল, নতুন বিজ্ঞপ্তি জারি করে সেই হতাশা কাটিয়ে দিয়েছে রাজ্য। সরকারি কর্মীরা বলছেন, যাক, বছরটা তা হলে খানিক রয়েসয়েই শুরু করা যাবে!
কিন্তু বছরের প্রথম দিনটাই ছুটির অমেজে কাটালে মানসিক দিক থেকে সেটা কি এ রাজ্যের কর্মসংস্কৃতিতে কোনও রকম ছাপ ফেলতে পারে?
ছাপ যে ফেলবেই, মনোবিদ মোহিত রণদীপ তা মনে করেন না। তাঁর মতে, শুধু সরকারি কর্মী কেন, সর্বত্রই দু’ধরনের মানুষ থাকেন। কেউ কাজের ব্যাপারে একশো ভাগ আন্তরিক। কেউ কেউ সুযোগ পেলে ফাঁকি দিতে কসুর করতে করেন না। বছরের প্রথম দিন ছুটি থাকলেও তাঁদের মানসিকতা পাল্টাবে না।
তবে নববর্ষের সূচনাতেই ছুটি যোগ হওয়ায় সরকারি দফতরের ভাবমূর্তি ধাক্কা খাবে বলে মনে করছেন অনেকেই। তাঁদের বক্তব্য, যে মুখ্যমন্ত্রী বন্ধের বিরুদ্ধে এত সরব, কোনও অবস্থাতেই কর্মদিবস নষ্ট হতে দিতে চান না, তাঁর নির্দেশেই এই বাড়তি ছুটি কর্মসংস্কৃতির পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন নয়।
ঘটনা হল, ১ জানুয়ারির অভূতপূর্ব ছুটি ছাড়া সরকারি কর্মীদের জন্য আরও উপহার রয়েছে। সরকারি সর্বজনীন ছুটির তালিকায় আনা হয়েছে ফতেহা-দোয়াজ-দাহম দিনটিকেও। আগে ওই দিনে সরকারি ছুটি থাকলেও রেজিস্ট্রার এবং স্ট্যাম্প রেভিনিউয়ের অফিস খোলা থাকত। আগামী বছর ওই দিনে সব সরকারি অফিসই ছুটি থাকবে।
দিনক্ষণ দেখে আগামী বছরেও পুজো বা দিওয়ালির মরসুমে কিছু ফাউ পাইয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে সরকার। তাই আগামী বার দুর্গাষ্টমীর দিনে গাঁধীজয়ন্তী পড়লেও ক্ষতিটা পুষিয়েই যাচ্ছে সরকারি কর্মীদের। আবার তিথি অনুযায়ী নবমী-দশমী পড়েছে একই দিনে। এ বারের পুজোয় ত্রয়োদশীর দিন ছুটি দিয়ে সরকারি কর্মীদের টানা ১০ দিন পুজোর ছুটির ব্যবস্থা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। আগামী বছর ত্রয়োদশীর দিনে পড়েছে ঈদুজ্জোহা। এই তিন দিনের ঘাটতি পূরণের জন্য ষষ্ঠী আর লক্ষ্মীপুজোর পরের দিন ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। ছুটি থাকছে কালীপ্রতিমা বিসর্জনের দিনেও।
দেখা যাচ্ছে, ২০১১ সালে বাম জমানার অবসানের পরেই সরকারি কর্মীদের ছুটির বরাত খুলে গিয়েছে। ওই বছরের ছুটির তালিকা করেছিল ফ্রন্ট সরকারই। তখন বছরে ছুটি ছিল ২৭ দিন। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে সরকারি কর্মীদের ছুটি বেড়েছে। ২০১২ সালে ছুটি বেড়েছিল এক দিন। এ বার ছুটির সংখ্যা বেড়ে হয় ৩০। আগামী বছরের জন্য সংশোধিত বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যাচ্ছে, ছুটি ৩১টি।
বিরোধীদের ব্যাখ্যা, ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা না-মেলায় সরকারের বিরুদ্ধে যখন ক্ষোভ জমছে, আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে, তখন এই বাড়তি ছুটি আসলে নাকের বদলে নরুন দিয়ে কর্মীদের মন রাখার চেষ্টা। সাধারণ সরকারি কর্মীরা যে এই ব্যাখ্যা উড়িয়ে দিতে পারছেন, তা নয়। তবে কলকাতার মিঠে শীতে ১ জানুয়ারি ছুটির মেজাজটাই আলাদা! পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা এই ছুটির প্রাপ্তিটুকু বেশ তারিয়ে তারিয়েই উপভোগ করছেন সরকারি কর্মীরা। |