পুস্তক পরিচয় ২...
নিজেও উত্তর লিখতেন ছাত্রদের সঙ্গে

জলার্ক-এ (সম্পা: মানব চক্রবর্তী) এ বার প্রধান আকর্ষণ রামচন্দ্র প্রামাণিকের স্মৃতিকথা ‘হাথক দরপণ’: ‘নলিতে প্রথম যে-রস আসে— শীতের গোড়ায়— তার গুড়কে বলে নলেন গুড়। বিক্রি হয় দামে। গুড় ছাড়া গাঁয়ের লোক খেজুররস কেনে পায়েস করার জন্য। কাঁচা রস নিয়ে যায় ভোরবেলা। বেলা করে এলে পাবে ফোটানো রস, মানে পাকা রস। বাড়িতে খাওয়ান-দাওয়ান থাকলে, অতিথি-অভ্যাগত এলে, কিংবা সরস্বতীপুজোর শ্রীপঞ্চমীতে হয় রসের পায়েস। রস বিক্রি হবে ভাঁড়ে ভাঁড়ে। রস লাগে পিঠের জন্যও— আস্কে পিঠে, রসবড়া, রসপুলি।’
‘অস্ট্রেলিয়ার অ্যাবওরিজিনাল মহিলা কবিদের কবিতা’ অনুবাদের শুরুতে অংশুমান কর জানাচ্ছেন ‘প্রায় চল্লিশ হাজার বছর ধরে অস্ট্রেলিয়াতে বসবাস করলেও অ্যাবওরিজিনাল মানুষরা ও দেশে আজ দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। ব্রিটিশ কলোনাইজারদের হাতে তৈরি আজকের আধুনিক অস্ট্রেলিয়া। তারাই প্রায় দুশো বছরেরও বেশি সময় ধরে এই অ্যাবওরিজিনাল মানুষগুলোকে করে রেখেছে নিজভূমে পরবাসী।’ উত্তর-পূর্ব ভারতের কবিতা বাংলায় পুনর্নির্মাণ করেছেন শৈবাল দত্ত, কবিতাগুচ্ছটি প্রসঙ্গে ভূমধ্যসাগর-এর সম্পাদক জয়া মিত্র তাঁর ‘ডেস্ক থেকে’তে লিখছেন: ‘উত্তর পূর্বাঞ্চল, যে রাজ্যগুলো এদেশের এবং এদেশের নয়ও। বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র এই ভারতবর্ষে কাশ্মীর ছাড়া এই উত্তরপূর্বের নাগাল্যান্ড মণিপুরে দশকের পর দশক ধরে বহাল আছে সামরিক বাহিনীর বিশেষ অধিকার আইন, যার বলে যে কোন ব্যক্তিকে কেবল সন্দেহবশতই গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ, শারীরিক অত্যাচার, এমনকি হত্যা পর্যন্ত করা যায়। দিনরাত্রের যে কোন সময়ে সার্চ, আনুষঙ্গিক লুটপাট, বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া— সবকিছুই আইনসঙ্গত।’
হিরণ মিত্রের প্রচ্ছদ-সহ জীবনানন্দ দাশের অপ্রকাশিত কবিতার সঙ্গে শঙ্খ ঘোষ আলোক সরকার উৎপলকুমার বসু ভূমেন্দ্র গুহ সুধেন্দু মল্লিক প্রমুখের কবিতা আদম-এ (সম্পা: গৌতম মণ্ডল)। কবিতাকে ছুঁয়েই গদ্য লিখেছেন সৌরীন ভট্টাচার্য কালীকৃষ্ণ গুহ রামচন্দ্র প্রামাণিক নিতাই জানা। সত্তর দশকের ভারতীয় কবিদের বাংলা কবিতা নিয়ে ক্রোড়পত্র সংখ্যাটিতে। আলোচনার সঙ্গে সে সময়ের কবিদের জীবন ও গ্রন্থপঞ্জি। সত্তরের পত্র-পত্রিকা, সংকলন ও কবিতার বইয়ের প্রচ্ছদও ছাপা হয়েছে এ-সংখ্যায়।
প্রবন্ধের শিল্পরূপ নিয়ে এবং মুশায়েরা-র (সম্পা: সুবল সামন্ত) ‘গদ্যকার সংখ্যা’। সম্পাদকীয়’তে গেওর্গ লুকাচ উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে ‘রূপদক্ষ গদ্যকার শিল্পীর মতোই অন্তত প্রবন্ধের মুদ্রা রচনা করেন।’ আবু সয়ীদ আইয়ুব, বুদ্ধদেব বসু, শিবনারায়ণ রায়, অম্লান দত্ত, রবীন্দ্রকুমার দাশগুপ্ত, শিশিরকুমার দাশ, অশোক মিত্র, আনিসুজ্জামান, আহমদ শরীফ, সুধীর চক্রবর্তী, অশ্রুকুমার সিকদার, অলোক রায়, রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য বা শঙ্খ ঘোষের মতো বিশ শতকের বিশিষ্ট গদ্যকারকে নিয়ে আলোচনা। সুকুমারী ভট্টাচার্যের গদ্য নিয়ে গোপা দত্ত ভৌমিক লিখেছেন: ‘নানা প্রসঙ্গে তিনি আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছেন ভারতবর্ষে প্রাচীন কাল থেকেই কন্যাজন্মকে অভিশাপ বলে মনে করা হত। পুত্রজন্মই ছিল বিবাহের উদ্দেশ্য। যে স্ত্রী পুত্রের জন্ম দিতে পারে না সে সমাজে মান পায় না। একথা প্রাচীন যুগে যেমন, আজও তেমনি সত্য।’
রক্তমাংস-এ (সম্পা: গৌতম ঘোষদস্তিদার) ‘সুনীলকবিতাপাঠ’। বিশিষ্ট কবিরা নতুন করে পড়লেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পুরনো কবিতা। স্মৃতিচারণ থেকে বেরিয়ে শুরু হল তাঁর মূল্যায়ন।
ভাষাবন্ধন-এ (প্রধান সম্পা: নবারুণ ভট্টাচার্য) জ্যোতিরিন্দ্র নন্দীর অগ্রন্থিত গল্প ‘জীয়ন্ত’। ‘বিজনবাবুই প্রথম দেখালেন কি করে জনতার প্রতি দায়িত্বশীল হতে হয়, কি করে সম্মিলিত অভিনয় ধারার প্রত্যাবর্তন করা যায় এবং কি করে বাস্তবের একটা অংশের অখণ্ডরূপ মঞ্চের উপর তুলে ধরা যায়।’— লিখেছেন ঋত্বিক ঘটক, তাঁর ‘বিজন ভট্টাচার্য: জীবনের সূত্রধার’ রচনাটি পুনর্মুদ্রিত হল এ-পত্রে।
কারুকথা এইসময়-এ (সম্পা: সুদর্শন সেনশর্মা) প্রয়াত সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ‘স্মরণ’। অলোক রায়ের ‘মিশনারি কেরীর ভারতপ্রেম ও ভাষানীতি’, কৌশিক সান্যালের ‘চিনের নাট্যচর্চা’।
কৌরব ১১৬-র গদ্যসংখ্যা-য় অননুকরণীয় ভঙ্গিতে গল্প-গদ্য-উপন্যাস লিখেছেন কমল চক্রবর্তী-সহ ধারালো কলমের অধিকারীরা। ‘সিনেমার সঙ্গে ভাব-ভালোবাসা’ নিয়ে সোহিনী দাশগুপ্ত তাঁর ব্যক্তিগত গদ্যে লিখেছেন ‘সিনেমার জন্যই না খেয়ে থাকা যায়, রোদ্দুরে পোড়া যায়, জলে ভেজা যায়।’
কবিকৃতি’তে (সম্পা: সুজিত সরকার) সম্পাদক-কৃত রত্নেশ্বর হাজরার সাক্ষাৎকার। গৌরকিশোর ঘোষের অপ্রকাশিত রচনা। কবি সঞ্চয়িতা কুণ্ডুর চমৎকার আত্মকথা ‘দামোদরের হাঁড়িকুড়ি’। ‘শচীন্দ্রনাথ গঙ্গোপাধ্যায়— হারিয়ে-যাওয়া বন্ধু’কে নিয়ে লিখেছেন সুতপা ভট্টাচার্য: ‘শিক্ষক-ছাত্রের ঊর্ধ্ব-অধঃ বিন্যাস শচীন সচেতনভাবে ভাঙতে চাইতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন বিদ্যা এমন একটি আলোচনাবিষয়, যা ছাত্র-শিক্ষক সমবেতভাবে করতে পারে। তাই মূল্যায়নও হতে পারে উভয়েরই। শচীন... ছাত্রদের প্রশ্ন দিয়ে লিখতে বলে নিজেও সেই প্রশ্নের উত্তর লিখতেন ছাত্রদের সঙ্গে। লেখা শেষ হলে তিনি ছাত্রদের মূল্যায়ন করতেন আর ছাত্রদের বলতেন তাঁর লেখার মূল্যায়ন করতে।’ আর অমিয় দেব তাঁর অনবদ্য ‘আমার রবীন্দ্রসংগীত শোনার এক ভাঙাচোরা গল্প’-এ লিখেছেন ‘রবীন্দ্রনাথের গান মুখ্যত কথাকে ভর করে সুর বা সুরকে ভর করে কথা, অর্থাৎ কথা ও সুর বা সুর ও কথা— যেন অর্ধনারীশ্বর।’
অন্তঃসার-এ (সম্পা: রত্নাংশু বর্গী) সত্য মণ্ডল, মনোরঞ্জন ব্যাপারী, মানিক ফকির ও শিউলি রায়ের বৃত্তান্তগুলি পাঠকের মনকে নাড়া দেবে। নারায়ণচন্দ্র চন্দের ‘বাল্যের স্মৃতি’। গোর্খাল্যান্ড নিয়ে সন্তোষ রাণার রচনা। ‘কোয়ান্টাম-হিঁদুয়ানি, রবীন্দ্রনাথ...’ নিয়ে লিখেছেন আশীষ লাহিড়ী। ‘ভাঙা দেশের গল্পকথা’য় রুশতী সেন প্রায় আবিষ্কার করেছেন সত্যপ্রিয় ঘোষকে: ‘দেশভাগ আর সেই ভাঙনের পরম্পরাকে যে লেখক এতখানি বহন করেছেন শরীরে মনে এবং সৃজনে, তিনি কিন্তু প্রায় অনুপস্থিত দেশভাগকেন্দ্রিক সাহিত্যের বিচার বিশ্লেষণে।’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.