ঐতিহ্য-হালফিলের ফ্যাশনে শক্তির আরাধনায় শিল্পাঞ্চল
দীপাবলির আলোর রোশনাই অনেকটাই ঢেকে দিয়েছে ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কালো মেঘ।
দক্ষিণেশ্বর থেকে হালিশহরে রামপ্রসাদের ভিটে— ঐতিহ্য আর প্রাচীনত্বের পাশাপাশি হাল ফ্যাশনের থিমের কালীপুজোর ছড়াছড়ি। আলোর উৎসবে এ বার নতুন আমদানি জাপানি আলোর কারিগরি। পুজোর মেজাজে জমজমাট ব্যারাকপুর মহকুমার নৈহাটি ও মণিরামপুর।
পুরনো পুজোর আভিজাত্যের সঙ্গে পাল্লা দিচ্ছে হালফিলের নান ধিম। নৈহাটি ৬ নম্বর বিজয় নগরের নিউ স্টার ক্লাবের পুজোয় এ বার মূল আকর্ষণ আলোর খেলা। জাপানি কারিগরিতে আলোর রকমারি খেলা দেখা যাবে কাঁসা, পিতল, তামার বিভিন্ন সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি মণ্ডপে। গোটা কালীপুজোটাই দেখা যাবে লেজার শো’তে। এছাড়াও থাকবে রাজ্যের বিভিন্ন দ্রষ্টব্য। ৭ নম্বর বিজয়নগর অধিবাসীবৃন্দের পুজোয় থিম সোনার বাংলা। ৬৩ বছরের পুজোয় ধান, গম, মুগ, মুসুর, বিউলির ডাল-সহ বিভিন্ন শস্যদানা দিয়ে তৈরি মণ্ডপ। বাংলার চালচিত্র মণ্ডপের ভিতরে ও বাইরে।
হালিশহরে রামপ্রসাদ সেনের কালী।—নিজস্ব চিত্র।
তেঁতুলতলা যুবক সঙ্ঘের ৫৭ বছরের পুজোয় রঙের বৈচিত্র্য। বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের যাবতীয় রং উপচে পড়ছে এখানকার মণ্ডপে। তুলির আঁচড়ে এক রং আরেক রংকে মিলিয়ে দিয়েছে। মণ্ডপে সাবেক চালচিত্রে শক্তিরূপিণী কালী। নৈহাটি গোপাল স্মৃতি সঙ্ঘের পুজোর এবার ৪৯ বছর। পাটকাঠি দিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাঙ্ককের একটি বুদ্ধ মন্দির। লোহাঘাট অ্যাসোসিয়েশনের ৫০ বছরের পুজোয় শুকনো ফল, বীজ, গাছের ছাল দিয়ে তৈরি হয়েছে রাজস্থানের জয়পুরের একটি মহল। প্রতিমার গড়নেও জয়পুরী ছাপ। ঘাঘরা-চোলি পরিহিত দেবীর আরাধনা।
নৈহাটির সবেচেয়ে বড় প্রতিমা ২৯ হাত কালী নামে পরিচিত। দেউলপাড়ার এই পুজো এবার ৫০ ব ছরে পা দিয়েছে। পুজোয় মেলাও বসে। বিশালাকায় এই কালী প্রতিমা দেখতে দূরদূরান্ত থেকে ভিড় করেন ভক্তের দল। পুজো শেষে এই প্রতিমা বিসর্জন দিতে দমকল ডাকতে হয়। হোস পাইপের জলের তোড়ে মাটির প্রতিমা গলিয়ে ফেলা হয়। ঐতিহ্যের দিক থেকে অবশ্য নৈহাটিতে সবার উপরে গঙ্গার ধারে অরবিন্দ রোডে বড়মা’র পুজো। ২১ হাত উঁচু কালী মূর্তি গড়ে কয়েক লক্ষ টাকার সোনার গয়না পরানো হয় পুজোর দিন। সুসজ্জিতা বড়মাকে জাগ্রত বলেই মানেন সকলে। বহু মানুষ মানত করেন দেবীর কাছে। রীতি অনুসারে বড়মার বিসর্জনের আগে নৈহাটিতে কোনও পুজোর বিসর্জন হয় না। গোটা অরবিন্দ রোড জুড়ে একের পর এক কালীপুজো। স্থানীয় ব্যবসায়ীরাই এই পুজোগুলির উদ্যোক্তা। কালীপুজোর আরেক পীঠস্থান ব্যারাকপুর মণিরামপুরে পঞ্চাশটির মতো পুজো হয়।
হালিশহরে সাধক রামপ্রসাদের ভিটেয় ১২৯ বছর ধরে পূজিতা হচ্ছেন দক্ষিণা কালী। পুজোর দিন ভিটেবাড়ি সাজানো হয়। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বাজতে থাকে রামপ্রসাদ সেনের শ্যামা সঙ্গীত। আলোক মালা সাজানো হয় পঞ্চবটি। হালিশহরে শ্যামাসুন্দরীতলার কালীও খুব জাগ্রত। দেবী এখানে মাতৃরূপিণী। শক্তি ও শান্তি’র সহাবস্থান। শ্যামনগর মুলাজোড় কালীবাড়ির পুজো ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলে বিখ্যাত। দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণীর আদলে কালো পাথরের মূর্তি। দেবী এখানে ব্রহ্মময়ী। পাথুরিয়াঘাটার গোপীমোহন ঠাকুর নিজের মেয়ের নামে এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। জনশ্রুতি, পৌষ মাসে পুজোর সময় এক জোড়া মুলো মা’কে দিলে মনস্কামনা পূর্ণ হয়। মাদ্রাল জয়চন্ডী মন্দিরে পুজো হয় ডাকাত কালীর। রণ-পা পরা ডাকাতেরা এই পুজোর প্রচলন করেছিল।
শিল্পাঞ্চলের প্রান্তিক শহর কাঁচরাপাড়ায় রয়েছে ইতিহাস প্রসিদ্ধ রঘু ডাকাতের কালী। বীজপুর থানার কাছে পাঁচ চূড়া বিশিষ্ট মন্দিরটি ডাকাত কালীর মন্দির বলে পরিচিত। ৫০০ বছরেরও বেশি প্রাচীন কাঞ্চনপল্লি বলে পরিচিত কাঁচরাপাড়ার এই মন্দিরে একটি নিম গাছের গুঁড়ি আছে। কথিত আছে, একসময় রঘু ডাকাত এই নিম গাছের নীচে বসেই দেবীর আরাধনা করতেন।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.