পিছিয়ে নেই বসিরহাটও
ঝলমলে আকাশে শুক্রবারই মণ্ডপে ঢল বারাসতে
ন্ধ হয়েছে নাছোড় বৃষ্টি। পুজোর আমেজও ফিরে এসেছে। তাই আজ, কালীপুজোর দিন থেকেই বারাসত-মধ্যমগ্রাম ও রাজারহাটে রেকর্ড ভিড় হবে বলেই মনে করছেন উদ্যোক্তারা। পাশপাশি দর্শনার্থীদের চাপ সামলাতে ব্যাপক প্রস্তুতিও নিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশ-প্রশাসন। শহরের চারদিকে বিভিন্ন রাস্তার মোড়ে শুক্রবার সকাল থেকেই দেখা গিয়েছে ‘নো এন্ট্রি’।
বারাসতের পায়োনিয়ার ক্লাবের মণ্ডপ রাজস্থানের জলমহল।
শুক্রবার রাতে জোরকদমে চলছে কাজ। ছবি: সুদীপ ঘোষ।
কিছুদিন আগে বারাসত থানাকে ভাগ করে আরও নতুন থানা হয়েছে। কমেছে অপরাধ। তাই কিছুটা স্বস্তি নিয়েই শুক্রবার রাত থেকে মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় করতে শুরু করেন দর্শনার্থীরা। আজ শনিবার, পুজোর দিনে দর্শনার্থীর সংখ্যা যে লক্ষ্য ছাড়াবে তা ভেবে নিয়ে সেরার লড়াইয়ে পাল্লা দিতে তৈরি পুজো উদ্যোক্তারাও। বারাসতের অন্যতম পুজো কেএনসি রেজিমেন্ট-এ শিল্পী বুবু সিংহ রায়ের তৈরি ভ্যাটিকান সিটির আদলে মণ্ডপ নজর কাড়বে। ভিতরে রয়েছে ৫৪টি অনবদ্য স্থাপত্য। প্রতিমার থিম বিশ্বশান্তি। রয়েছে নরনারায়ণ সেবা।
টানা বর্ষায় টইটম্বুর পুকুরের মধ্যে যে ভাবে রাজস্থানের জলমহলের অনুকরণে মণ্ডপ তৈরি করেছে পাইওনিয়ার অ্যাথলেটিক ক্লাব তাতে ঙিড় যে খোনে উপচে পড়বে তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। মহলের একাংশ থাকবে জলের নীচে। জলের উপর দিয়ে মণ্ডপে ঢুকলে চোখে পড়বে শিল্পী শংকর পালের তৈরি অপরূপ মহল। প্রতিমার পাশাপাশি নজর কাড়বে রাজস্থানী শিল্পকর্ম ও বিশাল ঝাড়বাতি। মাঠ জুড়ে চলবে মেলা। ১১ নম্বর রেলগেট সংলগ্ন সন্ধানী’র থিম, শব্দ তরঙ্গ।
অশোকনগরের ১ এর ৩ পশ্চিমপল্লির প্রান্তিক-এর মণ্ডপ। ছবি: শান্তনু হালদার।
বিশাল ঘণ্টার মধ্যে দিয়ে ঢুকলে চোখ টানবে ঝিনুকের কাজ। সাতটি বিশাল আলোর গেট পেরিয়ে ঢুকতে হবে রেজিমেন্ট-এ। টিন-পাইপ ও তামায় তৈরি নেপালের তাম্রমন্দিরে দেবীর একদিকে রামের হরধনু ভঙ্গ অন্যপাশে দেখা যাবে কৃষ্ণের লীলা। নবপল্লি সর্বজনীনে চেন্নাকেশর মন্দিরের আদলে তৈরি মণ্ডপ ও দেবী মূর্তি নজর কাড়বে। থাকবে দ্রাবিড়ীয় সভ্যতার নিদর্শন ও রাস্তাজুড়ে আলোর কারসাজি। নবপল্লি ব্যায়াম সমিতির থিম, ভূতের ভবিষ্যৎ। থাকবে বিভিন্ন ভূতের কাণ্ডকারখানা। প্রতিমার মাথায় রয়েছে ১৪ কেজি রূপোয় তৈরি মুকুট। সর্বাঙ্গে সোনার অলঙ্কার। শক্তিমন্দিরের ভাবনায় এ বার তাহাদের কথা। পুরোটাই বাঁশ দিয়ে তৈরি গ্রাম্য পরিবেশে কালীপুজো। দূষণমুক্ত পরিবেশে বাঁশের অপরূপ শিল্পকর্ম নজর কাড়বে। শতদল সঙ্ঘের থিম, স্বপ্ন। ৬টি ঋতুতে স্বপ্নের নানা মডেল তুলে ধরা হবে। টাকি রোড জুড়ে আলোকমালা। বাংলার কুটির শিল্পকে বাঁচানোর দাবি তুলে মোটা মাদুর ও হোগলা পাতা দিয়ে ব্যাঙ্ককের পটায়ার মন্দির তৈরি করেছে বিদ্রোহী। পরিবেশ দূষণ নিয়ে তরুছায়া-র থিম মুক্তি। থাকবে, বিভিন্ন গাছপালা, পশুপাখি ও মূকাভিনয়ের মাধ্যমে প্রতিবাদ। সাম্য সঙ্ঘের থিম, জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল ইস্টিকুটুমের বাহামনি সরেনের জন্মস্থান পলাশবনি গ্রাম। মণ্ডপ চত্বরে আয়োজন করা হয়েছে সাঁওতালি নাচ-গানের।
সেলাম সচিন। বসিরহাটের কাছারিপাড়ার সৃষ্টির মণ্ডপ। ছবি: নির্মল বসু।
বিশাল জলাশয়ের চারদিক ঘিরে সাউথ ভাটরায় তৈরি হয়েছে চিতোরগড় কেল্লা। মডেলের সাহায্যে দেখানো হয়েছে কামান, প্রহরীর পাশাপাশি সমস্ত হিন্দু দেবদেবী। কৈলাসনগর মৈত্রী সঙ্ঘের নানা রঙের আলোয় থিম, দিনের শেষে আলোর দেশে। নেপালের মন্দির তৈরি করেছে হাটখোলা নাইন স্টার। এ ছাড়াও মেঘদূত শক্তি সঙ্ঘ, বামনমুড়া ইয়ং স্টার অ্যাসোসিয়েশন, আগুয়ান সঙ্ঘ, স্টুডেন্টস গ্রুপ, ইউনাইটেড ক্লাব ও ছাত্রদলের মতো পুজোও দেখার মতো।
জেলার আর এক মহকুমা বসিরহাটও কালীপুজোর রোশনাইয়ে পিছিয়ে নেই। বাহারি মণ্ডপ, আলোয় সেজেছে মহকুমা শহর ও হাসনাবাদের বহু এলাকা। তবে কলকাতায় সচিনের ১৯৯ তম টেস্ট ম্যাচের জ্বর কলকাতা থেকে ছড়িয়েছে জেলাতেও। সচিনকে শ্রদ্ধা জানাতে বসিরহাটের কাছারিপাড়ার ‘সৃষ্টি’ মণ্ডপ তৈরি করেছে ক্রিকেট ব্যাট, বল ও উইকেটের অনুকরণে। সচিনের ক্রিকেট জীবনের নানা ছবি দিয়ে সাজানো মণ্ডপটি নজর কেড়ে নেবে সচিনভক্তদের। দশনার্থীদেরও।
বারাসতের কেএনসি রেজিমেন্টের মণ্ডপ, ভ্যাটিকান সিটির আদলে।—নিজস্ব চিত্র।
টাউনহল মাঠে গুঞ্জন-এর আকর্ষণ জামশেদপুরের রাজবাড়ি। চটের উপরে রঙ, প্যারিস লাগিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ৭৫ ফুট উঁচু মণ্ডপ। প্রাসাদের নিখুঁত রূপ ফুটিয়ে তুলতে রাতদিন কাজ করে চলেছেন শিল্পী বাবলু কারিগর। মৈত্রবাগানের নবারুণ সঙ্ঘের অন্যতম আকর্ষণ চন্দননগরের আলো। আলোয় দেখা যাবে সার্কাসে জীবজন্তু, ট্রাপিজের খেলা। হরিশপুরের ফ্রেন্ডস ক্লাব, সতীর্থ সঙ্ঘ, স্টার ক্লাব, ইয়ুথ রিক্রিয়েশন সেন্টার, নবোদয় সঙ্ঘ, বাণী সঙ্ঘ, নবদূত, ফ্রেন্ডস ক্লাব, অগ্রণী সঙ্ঘ, সতীর্থ, স্পোর্টস ক্লাব, সুভাষ সঙ্ঘ, বিজ্যুৎ সঙ্ঘর মতো পুজো কমিটিগুলিও বাহারি মণ্ডপ ও প্রতিমা নিয়ে দর্শক টানতে ময়দানে নেমে পড়েছে।
পায়োনিয়ার অ্যাথলেটিক ক্লাবের প্রতিমা। —নিজস্ব চিত্র।
হাসনাবাদের লস্করনগর চৌরঙ্গীমোড় ব্যবসায়ী সমিতির পুজোর এ বারের আকর্ষণ উত্তরাখন্ডের বিধ্বস্ত কেদারনাথ মন্দির। পাহাড়ের মাথায় উঠে মন্দির দর্শন ও ধসে উল্টে পড়া বাড়ি, গাছ নজর টানবে দর্শকদের। মণ্ডপে থাকছে উদ্ধারকারী দল। চট, ম্যাসোনাইট বোর্ড দিয়ে সুন্দর মণ্ডপ বাসস্ট্যান্ড বাজার কমিটির। মণ্ডপের কারুকাজ ভাল লাগবে। এখানে যুব গোষ্ঠীর মণ্ডপেও দেখা যাবে ইষ্টিকুটুম টেলি ধারাবাহিকের পলাশবনি গ্রাম। প্রগতি সঙ্ঘর আকর্ষণ বৃদ্ধাশ্রমে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের জীবনকাহিনী। ইছামতী সাংস্কৃতিক সঙ্ঘের থিম যমালয়ে জীবন্ত মানুষ। নবোদয় সাংস্কৃতিক সঙ্ঘের মণ্ডপে থাকছে ছোটদের জনপ্রিয় ছোটা ভীম। এখানে পুকুরের সামনে প্রায় ৫০ ফুট লম্বা কুমিরের মুখ চিরে দিচ্ছে ছোটা ভীম। টাকির অগ্রদূত সঙ্ঘের মণ্ডপে আলোয় তুলে ধরা হয়েছে শ্রীচৈতন্যর জীবন। রাজীব বিগ্রেড, রেলগেট বাজার কমিটি, ভারত সঙ্ঘ, ক্যারম ঘর, সুভাষ সঙ্ঘ-র মণ্ডপ, প্রতিমাও নজর কাড়বে।
হিঙ্গলগঞ্জের পুকুরিয়া, দুলদুলি সর্বজনীন শ্যামাপুজো কমিটি, মালোপাড়া যুবক সঙ্ঘ পুজো উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.