|
|
|
|
লক্ষ্য সমন্বয়ের মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়ন |
জঙ্গলমহলের চারটি পঞ্চায়েতকে ‘মডেল’
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
উন্নয়নই পারে পরিবেশ-প্রতিবেশ বদলে দিতে। সেই সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পরীক্ষামূলক ভাবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে ‘মডেল’ হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। শীঘ্রই এই কাজ শুরু হবে বলে জানিয়ে জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারির বলেন, “সরকারি সব ধরনের প্রকল্প তো চলছেই। তার সঙ্গে উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা ৪টি গ্রাম পঞ্চায়েত চিহ্নিত করেছি। সেগুলির সার্বিক উন্নয়ন ঘটিয়ে তা ‘মডেল’ করে তোলা হবে।” এই প্রকল্পে সাফল্য এলে তা জেলা জুড়েই বাস্তবায়িত করা হবে। ‘মডেল’ হিসাবে বেছে নেওয়া জঙ্গলমহলের চারটি গ্রাম পঞ্চায়েত হল ঝাড়গ্রামের সাপধরা ও পাটাশিমূল এবং বিনপুর ১ ব্লকের লালগড় ও রামগড় গ্রাম পঞ্চায়েত। এই প্রকল্পের সরকারি নাম ‘পাইলট প্রোজেক্ট অফ লাইভলিহুড ইন্টারভেনশন ইন পশ্চিম মেদিনীপুর’। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি নিয়ে সমীক্ষারও কাজ শেষ। ঝাড়গ্রামের পাটাশিমূল গ্রাম পঞ্চায়েতে ৪৩টি মৌজার মধ্যে ৩২টিতে মানুষের বসবাস, বাকিগুলি জঙ্গল এলাকা। মোট এলাকা ৩৫৬৪.২১ হেক্টর। ১৯২৪টি পরিবারের ৯০৩৪ জনের বসবাস। মোট ২১৭টি স্ব-সহায়ক দল রয়েছে। ১৫১টি মহিলাদের ও ৬৬টি পুরুষদের। একই ভাবে সাপধরার ৩৮টি মৌজার মধ্যে ৩২টিতে মানুষের বসবাস রয়েছে। ৬১০৯.০৯ হেক্টর এলাকা। ২১৬৪টি পরিবারের ১০৪১৪ জনের বসবাস। ১৭৯টি স্ব-সহায়ক দলের মধ্যে ১৬৪টি মহিলাদের ও ১৫টি পুরুষের। একই ভাবে সমীক্ষা হয়েছে লালগড় ও রামগড়েরও। ওই সমীক্ষায় দেখা হয়েছে কোন গ্রামে কত মানুষের বসবাস। তাঁদের শিক্ষার হার কত, মহিলা শিক্ষার হার কত, তফসিলি উপজাতির বসবাস কত, গ্রামের বেশির ভাগ মানুষের জীবিকা কী, চাষের পাশাপাশি ক্ষুদ্র শিল্পের সঙ্গে কত জন যুক্ত, প্রাণিপালনের সঙ্গে কারা যুক্ত, ইত্যাদি। ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, নারী শিক্ষার হার খুবই কম। কোনও গ্রামে ৪-৫ শতাংশ তো কোনও গ্রামে ১০-১২ শতাংশ। ২০ শতাংশের বেশি সাক্ষর এমন গ্রামের সংখ্যা আঙুলে গোনা যাবে। বেশির ভাগ গ্রামই তফসিলি উপজাতি অধ্যুষিত এবং হতদরিদ্র। সাধারণ ভাবে মজুর খেটে বা জঙ্গল থেকে শালপাতা তুলে তা বিক্রি করে সংসার চালায়। স্ব-সহায়ক দল থাকলেও তাদেরও তেমন কোনও অগ্রগতি ঘটেনি। ক্রেডিট লিঙ্ক দূরের কথা, বেশির ভাগ দলেরই দ্বিতীয় গ্রেডিং হয়নি।
এমন পিছিয়ে পড়া গ্রামে কী ভাবে উন্নয়ন করা হবে?
প্রশাসন জানিয়েছে, যে ব্যক্তি যে কাজে যুক্ত সেই কাজেই তাঁকে যুক্ত করা হবে। যিনি চাষ করেন তিনি চাষ করবেন, যিনি শালপাতার থালা তৈরি করেন তিনি তা-ই করবেন। তবে এর সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। সঙ্গে ব্যাঙ্ক ঋণেরও ব্যবস্থা থাকবে। যেমন, যিনি ধান চাষে উৎসাহী, তাঁকে এসআরআই পদ্ধতিতে ধান চাষ করানো হবে। তাঁর সঙ্গে কৃষি দফতরের সমন্বয় গড়ে দেওয়া হবে। যে কোনও সমস্যা হলেই কৃষি দফতরের আধিকারিকেরা ঘটনাস্থলে যাবেন। পরামর্শ দেবেন। যিনি মুরগি, গরু পালনে ইচ্ছুক তাঁকে মুরগি ও গরু কেনার জন্য ঋণের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। প্রাণিবন্ধুর সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ দেওয়া হবে। তাতে কোনও ধরনের রোগ এলেই সঙ্গে সঙ্গে সাবধনতা অবলম্বন করা যাবে। তেমনই ক্ষুদ্রশিল্পী, যাঁরা বাঁশের কাজ করেন, সাবাই ঘাস দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী বানান বা পাথর কেটে মূর্তি তৈরি করেন, তাঁদের শিল্প কর্মে আধুনিকতার ছোঁয়া আনতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি তা বিক্রির জন্য মার্কেটং সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় গড়ে তোলা হবে। প্রশাসনের আশা, একবার হতদরিদ্র মানুষগুলি নিজেদের উন্নয়ন ঘটাতে পারলে এলাকার মানুষও উৎসাহ পাবেন। তাঁরাও নিজের তাগিদেই শিখতে শুরু করবেন কী ভাবে উন্নত পদ্ধতিতে চাষ, প্রাণিপালন করা যায়। পুরো বিষয়টি দেখভাল করবে জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতর।
কিন্তু এত দিনও তো সরকারের সব দফতরই ছিল। এত দিনেও যেখানে সে ভাবে উন্নয়ন ঘটানো যায়নি এ বার কী তা সম্ভব? এক প্রশাসনিক কর্তার কথায়, “সেই জন্যই তো মডেল করে দেখিয়ে দেওয়া হবে, একটু চেষ্টা ও উদ্যোগ থাকলেই সার্বিক উন্নয়ন করা যায়। কোনও পঞ্চায়েতকে মডেল করা হলে অন্য গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার মানুষকেও তা দেখানো যাবে। তাতে সকলেই উৎসাহিত হবেন। ধীরে ধীরে জেলার সর্বত্রই তা ছড়িয়ে পড়বে।”
পরিকল্পনা প্রস্তুত। দেখার এটাই, বাস্তবায়িত হওয়ার পর ‘মডেল’ কতটা ‘মডেল’ হল। |
|
|
|
|
|