|
|
|
|
দীপাবলিতেও আঁধারে শিলাবতীর অন্য পাড়
নিজস্ব সংবাদদাতা • ঘাটাল |
একই শহরের দুই চিত্র। আলোর উৎসব কালীপুজোয় ঘাটাল শহরের শিলাবতী নদীর এক প্রান্ত যখন রঙিন, তখন অন্য প্রান্তে শুধুই অন্ধকার।
জল নামতে শুরু করলেও ঘাটালের সব এলাকা থেকে শুক্রবারও জল সরেনি। শিলাবতীর এক প্রান্তে শহরের ১২টি ওয়ার্ড এখনও জলমগ্ন। ওই সব এলাকার বাসিন্দারা এখনও নৌকা করেই যাতায়াত করছেন। একই চিত্র ব্লকের দশটি পঞ্চায়েতের। মহকুমার প্রধান সড়ক এখনও জলের তলায়। ফলে দুর্গাপুজোর মতো কালী পুজোতেও প্লাবিত শহরের বাসিন্দাদের আনন্দ ম্লান করে দিয়েছে সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি। সরকারি তথ্য বলছে, এ বার অনুমোদিত পুজোর প্রায় ষাট শতাংশই বন্যা পরিস্থিতির জন্য কোনও রকমে পুজো সারছেন।
এগারো বর্গ কিলোমিটার এলাকার ঘাটাল পুরশহরে মোট ১৭টি ওয়ার্ড। শিলাবতী নদীর এক পাড়ে ১২টি ওয়ার্ড, অন্য পাড়ে ৫টি। একমাত্র বাঁধ ভাঙলে শহরের পাঁচটি ওয়ার্ডে জল ঢুকতে শুরু করে। সচরাচর জলমগ্ন হয় না কুশপাতা, কোন্নগর, গোবিন্দপুর প্রভৃতি এলাকাগুলি। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ফলে আলোর উৎসবে মেতেছে এলাকাগুলি। অন্য পাড়ে পরিস্থিতি ঠিক উল্টো। সেখানে প্রায় অর্ধেকেরও বেশি এলাকা এখনও জলমগ্ন। বেশির ভাগ এলাকা বিদ্যুৎহীন। এক হাঁটু জলে অন্ধকারে ডুবে রয়েছে ঘাটালের আড়গোড়ার একটি অংশ ছাড়াও শুকচন্দপুর, রঘুনাথচক, গম্ভীরনগর, চাউলি, সিংহপুর, কৃষ্ণনগর। এক কথায় এগারো বর্গ কিলোমিটার এলাকার প্রায় আট বর্গ কিলোমিটার এমন উৎসবের দিনেও ভরসা কেরোসিন তেল আর মোমবাতি। |
নৌকোয় চেপে মণ্ডপের পথে কালী প্রতিমা।—নিজস্ব চিত্র। |
এ দিকে জল না কমায় সাধারণ মানুষের যেমন মন ভার, তেমনই উদ্বিগ্ন পুজো কমিটিগুলিও। জল না নামায় অনেক জায়গায় পুজোর আগের দিনও বাঁধা হয়নি মণ্ডপ। কিন্তু, পুজো বন্ধ করতে কে চায়!
প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও প্রতিমা কী ভাবে আনা হবে, আনলেও কোথায় পুজো হবে সে সব চিন্তা কুরে-কুরে খাচ্ছে কমিটির কর্তাদের।
শহরের গড় প্রতাপনগর এলাকার শিবশক্তি ক্লাবের পক্ষে সঞ্জীব শাসমল বলেন, “ফি বছরই থিমের পুজোর পাশাপাশি গোটা এলাকা রঙিন আলোয় মুড়ে ফেলা হয়। মেলা বসে। এলাকার ছেলেমেয়েদের নিয়ে নানা অনুষ্ঠান হয়। এ বার সব বন্ধ। ছোট মণ্ডপে নমো নমো করে পুজো সারছি।” স্থানীয় রামচন্দ্রপুরের নাইটিঙ্গেল ক্লাবের সম্পদক সিদ্ধার্থশঙ্কর চৌধুরী বলেন, “আমাদের কালীপুজোয় ফি বছরই বড় মণ্ডপ হয়। সারাদিন ফুটবল খেলা, নানা অনুষ্ঠানে দিন কাটে। জল না নামায় এ বার সবই ভেস্তে গেল।” ঘাটাল শহরেরই চাউলির খুদে-খুদে ছেলেরা প্রায় বছর চারেক ধরে পুজো করে আসছে। মন খারাপ তাদেরও। করুণ গলায় সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়া শোভন কোটাল বলে, “গতবার আমদের সাতশো টাকা চাঁদা উঠেছিল। একশো টাকার ঠাকুর আর তিনশোরও বেশি টাকার মোমবাতি, মাটির প্রদীপ জ্বেলে মণ্ডপকে সাজিয়ে ছিলাম। কত লোক দেখতে এসেছিল। এ বারে গতবারের জমানো টাকা আর চাঁদা মিলিয়ে প্রায় দু’হাজার টাকা উঠেছিল। কিন্তু পুজো হবে কী করে! মাঠ থেকে তো এখনও জলই নামল না!”
সব মিলিয়ে, দুর্গাপুজোর মতোই আলোর উৎসব কালীপুজোতেও মন খারাপ ঘাটালের। |
|
|
|
|
|