একাধিক পদক্ষেপ করেও শব্দবাজির তাণ্ডব রোখা যায়নি গত বছর। এ বার গোদের উপরে বিষফোঁড়া হিসেবে বাজারে হাজির ১২৫ ডেসিবেলের বাজিও। মাথায় হাত দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ ও পুলিশের। কন্ট্রোল রুম খুলে সারা রাত শহরবাসীর অভিযোগ শোনা, ভ্রাম্যমাণ দল পাঠিয়ে রাতভর তল্লাশি, বাদ যাচ্ছে না কিছুই। তবু শব্দাসুরের দাপাদাপি কতটা রোখা যাবে, সে নিয়ে সংশয় গোপন রাখছেন না সরকারি কর্তারা।
আইন করে শব্দবাজি নিষিদ্ধ করা হয়েছে প্রায় দেড় দশক আগে। কালীপুজো ও দীপাবলির মরসুমে শব্দবাজির রমরমা ঠেকাতে তৎপরতা নজরে আসে প্রতি বছরই। গত বছর শহরের নানা এলাকা থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছিল বহু শব্দবাজি। তবু বাজির তাণ্ডব ঠেকানো যায়নি। বেনাচিতি, সিটি সেন্টার, বিধাননগর প্রভৃতি এলাকায় বাজি ফাটে গভীর রাত পর্যন্ত। বাসিন্দাদের অভিযোগ, শিল্প-কারখানার দূষণে জেরবার দশা। তার উপরে বাজি পুড়ে বাতাসে অতিরিক্ত মাত্রায় সালফার-ডাই-অক্সাইড যোগ হওয়ায় দূষণের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। |
বর্ধমানের রানিগঞ্জ বাজারে বসেছে বাজির পসরা। —নিজস্ব চিত্র। |
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দুর্গাপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তিন দিনের জন্য বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সেখানে যে কেউ অভিযোগ জানাতে পারেন। ১ নভেম্বর সেই কন্ট্রোল রুম খোলা ছিল রাত ১২টা পর্যন্ত। ২ ও ৩ নভেম্বর তা খোলা থাকছে পর দিন সকাল ৬টা পর্যন্ত। পাশাপাশি, দু’টি ভ্রাম্যমাণ দল তৈরি করা হয়েছে। রাতভর শহরে ঘুরে বেড়াবে সেই গাড়ি দু’টি। অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে পৌঁছে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে পর্ষদ সূত্রে জানানো হয়েছে।
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের এক আধিকারিক জানান, এ বার তাঁদের অন্যতম মাথাব্যথার কারণ হল বাজারে ১২৫ ডেসিবেলের শব্দবাজির প্রবেশ। তিনি জানান, আদালতের একটি নির্দেশের পরে শব্দবাজির ডেসিবেল কত হবে তা নিয়ে সংশয় ছিল বেশ কিছুদিন। পরে পর্ষদ নির্দেশ জারি করে, এ রাজ্যে ৯০ ডেসিবেল শব্দসীমার বেশি আতসবাজি ব্যবহার করা যাবে না। জাতীয় পরিবেশ আদালত তাকেই বৈধ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু এরই মাঝে বাজি প্রস্তুতকারকদের অনেকেই চড়া ডেসিবেলের বাজি তৈরি করে ফেলেছেন। তা বাজারে চলেও এসেছে। সেই সব শব্দবাজি প্রস্তুত করা হয়েছিল ১২৫ ডেসিবেলের মাত্রার কথা মাথায় রেখে। কাজেই অন্য বারের থেকে শব্দাসুরের তাণ্ডব যে আরও বাড়বে, সে ব্যাপারে এক প্রকার নিশ্চিত পর্ষদ। সে জন্য বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই আধিকারিক। |
পুলিশ জানায়, বড় বড় পুজো মণ্ডপে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া ইভটিজিং ও জুয়ার ঠেক রুখতে কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে শহরের বেশ কিছু এলাকায়। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব জানান, কালীপুজোর রাতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের বিশেষ টহলদার বাহিনী ঘুরে বেড়াবে। শব্দবাজির রমরমা বা অন্য কোনও অপরাধমূলক কাজকর্মের খবর পেলেই পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে পৌঁছবে বলে তাঁর আশ্বাস।
আশ্বাস কাজে পরিণত হল, না কি গত বারের ছবিই আবার ফিরে এল, আগামী কয়েক রাতেই পরিষ্কার হয়ে যাবে শহরবাসীর কাছে। |