কালীপুজোর মুখে অভিযান চালিয়ে পুলিশ কয়েক লক্ষ টাকার শব্দবাজি আটক করেছে। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রায় ২৫ জন বাজি বিক্রেতাকে। তারপরেও কালীপুজোর রাতে শব্দবাজি থেকে রেহাই পাওয়া নিয়ে সংশয়ে বহরমপুরের পুর-নাগরিকরা। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “পুজো মণ্ডপ চত্বরে সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন থাকবে। কোথাও নিষিদ্ধ শব্দবাজি ফাটানো হলেই গ্রেফতারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।”
বহরমপুরের বিভিন্ন আবাসনের ছাদে বাজি ফাটানোর অভিযোগ রয়েছে। পশব্দবাজির পাশাপাশি শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে বলে পুলিশ সুপার জানান। তিনি বলেন, “কালীপুজোয় সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত পুলিশের মোবাইল ভ্যান ও র্যাফ টহল দেবে।”
মাস খানেক আগে দুর্গাপুজোয় শব্দবাজির তাণ্ডবে কেঁপে উঠেছিল শহর। বহরমপুর কৃষ্ণনাথ কলেজের অধ্যক্ষ সোমেশ রায় বলেন, “শব্দবাজি রুখতে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়াতে প্রচার চালানোর প্রয়োজন রয়েছে। এর পাশাপাশি শব্দবাজি ফাটলে প্রশাসনিক স্তরে পদক্ষেপ করতে হবে। পুলিশ ও প্রশাসন কড়া হাতে মোকাবিলা না করলে কালীপুজোয় ফের শব্দ তাণ্ডব শুরু হবে। এতে মানুষ আতঙ্কিত বোধ করেন। রাজনৈতিক দলগুলিও এ ব্যাপারে তাদের ভূমিকা অস্বীকার করতে পারে না।” তাঁর কথায়, “এখন তো আবার শব্দের আওয়াজ ৬৫ ডেসিবেলেরও বেশি জোরে হলেও আপত্তি নেই। মহালয়া থেকে শুরু হয়েছে। দুর্গাপুজোতেও ফেটেছে। কালীপুজোতেও ফাটবে— এই ভাবনায় জারিত এখন আমাদের মন। তবে শব্দদূষণের বিষয়ে যদি সচেতনতা না আসে, তবে ভবিষ্যতে
ভুগতে হবে। ”
বহরমপুরে যে কয়েকটি বড় বাজেটের কালীপুজো হয়ে থাকে, তার মধ্যে অন্যতম বহরমপুর স্যান্টাফোকিয়া। ওই পুজো কমিটির কর্তা অতীশ সিংহ (কাল্টু) বলেন, “আমাদের কালীপুজোয় কোনও শব্দবাজি ফাটানো হয় না। তবে শব্দবাজির পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখভালের জন্য স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করা হয়েছে।” বহরমপুরের চালতিয়া বিলে শাস্ত্রী স্মৃতি সংঘের কালীপুজোয় বাজির প্রদর্শনী দেখতে মানুষের ঢল নামে। ওই পুজো কমিটির পক্ষে সত্যেন চৌধুরী বলেন, “আগামী ৭ নভেম্বর চালতিয়া বিলে বাজির প্রদর্শনী হবে। পুজোর সময়ে আমাদের মণ্ডপ চত্বরে বাজি ফাটানো রুখতে ক্লাব সদস্যরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।”
তবে শব্দবাজি বাড়ির পোষ্যদের উপরে ভয়াবহ প্রভাব ফেলে। বাজির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পোষ্যরা ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলেও পড়ে। পশু চিকিৎসক অভিজিৎ দত্ত বলেন, “বাড়ির পোষ্য, বিশেষ করে কুকুর সুপারসনিক ও সাবসনিক শব্দ শুনতে পায়। শব্দবাজি ফাটলে বিভিন্ন কম্পাঙ্কের আওয়াজে তাদের কানের পর্দার উপরে চাপ পড়ে। অনেক সময়ে তাদের শুনতে অসুবিধা হয়। এছাড়াও শরীরের ভারসাম্য রক্ষার যন্ত্রককলিয়া, তাও কখনও কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শব্দবাজির প্রভাবে ‘রাইটিং’ রিফ্লেক্টও নষ্ট হয়ে যায়। আচমকা অতিরিক্ত শব্দের কারণে ‘শক্’ হয়ে হৃদরোগেও আক্রান্ত হতে পারে কুকুর।” |