নেহাত .৩০৩ রাইফেল হাতে নিছক ‘আম-শিকারি’ নয়, সম্প্রতি কাজিরাঙায় হানা দেওয়া শিকারিদের পোশাক ও রণসজ্জা বনকর্তাদের চমকে দিয়েছে। একেবারে সামরিক পোশাক ও অ্যাসল্ট রাইফেলে সজ্জিত সেই শিকারিদের সঙ্গে সম্প্রতি তিন দফার যুদ্ধেও এঁটে উঠতে পারেননি বনরক্ষীরা। কাজিরাঙার বুড়াপাহাড় রেঞ্জে সম্প্রতি একাধিকবার শিকারি ও বনরক্ষীদের মধ্যে লড়াই হয়েছে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রেই শিকারিদের ধরতে বা মারতে সক্ষম হননি রক্ষীরা। রক্ষীদের সাক্ষ্য ও বন্যপ্রাণীর গতিবিধি নজরে রাখার জন্য জঙ্গলে বসানো ক্যামেরা থেকে জানা গিয়েছে, এখনকার শিকারিদের হাতে থাকছে একে-৪৭।
পশু চিকিৎসক ভাষ্কর চৌধুরীর মতে, এই ধরনের রাইফেল গন্ডার মারার জন্য আদর্শ নয়। কিন্তু ‘ফায়ার পাওয়ার’ বেশি থাকায় একই সঙ্গে শিকার ও বনরক্ষীদের মোকাবিলার জন্যই একে-৪৭ বেশি ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক সময় গন্ডার মারার জন্য শিকারিরা .৩০৩ রাইফেল আনলেও, বনরক্ষীদের হাতে .৩০৩ ও এসএলআর রাইফেল তুলে দেওয়ায় তার মোকাবিলার জন্য শিকারির দল সঙ্গে অন্তত একটি করে একে-৪৭ রাখছে।
বনকর্তারা জানান, বুড়াপাহাড়ে শিকারি ও রক্ষীদের মধ্যে সাম্প্রতিক একাধিক সংঘর্ষে শিকারিদের বাগে পেয়েও রক্ষীরা শিকারিদের মারতে পারেনি। মান্ধাতার আমলের রাইফেলের জন্যই বাগে পেয়েও শিকারি ফস্কাচ্ছে। সেই সঙ্গে উধাও হচ্ছে ক্যামেরাও।
জঙ্গলে প্রাণীদের গতিবিধি নজরে রাখার জন্য বন দফতর যে ক্যামেরাগুলি বসিয়েছিল তারও বেশ ক’টি উধাও হয়েছে। কাজিরাঙার অধিকর্তা এন কে ভাসু জানান, জঙ্গলে বেশ কয়েকটি ক্যামেরা চুরি হয়েছে। এই ধরণের ক্যামেরার সামনে দিয়ে কিছু
নড়াচড়া করলেই ফ্ল্যাশ হয়। ছবি উঠে যায়। এই ক্যামেরায় শিকারিদেরও একাধিক ছবি উঠেছে। ফ্ল্যাশ হওয়ায় শিকারিরা ক্যামেরার অবস্থান জেনে যাচ্ছে। খড়্গের পাশাপাশি ক্যামেরাও তারা নিয়ে যাচ্ছে। তবে এখন অবধি ক্যামেরায় পাওয়া শিকারিদের ছবি দেখে কর্তৃপক্ষের চোখ কপালে। এতদিন অবধি চোরাশিকারি বলতে চেনা ছবি ছিল জিন্স বা হাফ প্যান্ট পরা, মাথায় ফেট্টি বাঁধা, হাতে .৩০৩ বোরের রাইফেল ধরা ব্যক্তি। এখন দেখা গিয়েছে, শিকারিদের পিঠে ‘ব্যাকপ্যাক’, পরণে সামরিক পোশাক, হাতে একে-৪৭। এমন কী বুকের বেল্টে ঝুলছে গ্রেনেডও! যা থেকে পুলিশ ও বনকর্তাদের সন্দেহ, জঙ্গিরাও টাকার লোভে শিকারে হাত মিলিয়েছে।
এক পুলিশকর্তার মতে, সাধারণ জঙ্গিরা শার্প শু্যটার হয় না। শার্প শু্যটাররা আসছে নাগাল্যান্ড বা মণিপুর থেকে। এখানকার কার্বি জঙ্গিরা, নাগাল্যান্ডের মহাজনের থেকে খড়্গের বরাত নেয়। তারাই শিকারিদের নিরাপত্তা ও আশ্রয়দানের ব্যবস্থা করে। জঙ্গলে শিকারির সঙ্গে তারাও ঢোকে।
শিকারির লক্ষ্য গন্ডার। বাকিরা বনরক্ষীদের উপরে নজর রাখে। রাজ্যের বনমন্ত্রী রকিবুল হুসেন জানিয়েছেন, কাজিরাঙায় নজরদারির জন্য ১২টি ইনফ্রা-রে নজরদারি ক্যামেরা বসানো হবে। এই কাজে, ‘ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথ রিটি’ তিন কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। এই অর্থবর্ষেই ৮টি ক্যামেরা বসবে। |