প্র: স্ট্রেস তো এখন রোজকার সঙ্গী। তাই বলে স্ট্রোক?
উ: হচ্ছে তো। সুগার, প্রেসার, কোলেস্টেরল, সবের পেছনেই তো স্ট্রেস।
প্র: তাতে?
উ: আরে এগুলো সবই তো স্ট্রোকের রিস্ক ফ্যাক্টর। এ সবের জন্যই মাথার ভেতর রক্তনালি ছিঁড়ে যাচ্ছে, কখনও নালির ভেতর রক্তের ডেলা আটকে গিয়ে স্ট্রোক হচ্ছে।
প্র: মানে ঘুরপথে স্ট্রোক?
উ: ঠিক তাই।
প্র: ধরুন কয়েক দিন ধরে প্রচণ্ড টেনশন চলছে। তার থেকেও এমনটা হতে পারে?
উ: কয়েক দিনের স্ট্রেসেই যে হবে, তা নয়। তবে শরীরে প্রেসার, সুগারের মতো সমস্যা পুষে রাখলে কয়েক দিনের স্ট্রেসও বিপদ ডেকে আনতে পারে। |
প্র: তবে? স্ট্রেস তো থাকবেই...
উ: স্ট্রেস কার না আছে? স্ট্রেস-আউট করার কায়দা রপ্ত করুন। মাত্রাতিরিক্ত স্ট্রেস হলেই তা বের করে দিন। প্রথমে নিজে চেষ্টা করুন। না পারলে মনোবিদদের সাহায্য নিন।
প্র: কী করে বুঝব স্ট্রেস মাত্রা ছাড়াচ্ছে। স্ট্রোকের দিকে এগোচ্ছি?
উ: শরীরের একটা দিক অবশ হয়ে যেতে পারে, মুখ বেঁকে যেতে পারে, সব জিনিস দুটো করে দেখতে পারেন, ব্যালেন্স চলে যেতে পারে।
প্র: টেনশনে থাকলে অনেক সময় দেখি কাজ করতে করতে হাতটা ঝিনঝিন করে উঠল। সেটাও কি কোনও লক্ষণ?
উ: একটু ঝিনঝিন করে কমে গেলে অসুবিধে নেই। কিন্তু অনেক ক্ষণ ধরে ঝিনঝিন করলে অবশ্যই ডাক্তার দেখাবেন। আসলে স্ট্রোকের আগাম বার্তা অনেক কিছুই হতে পারে। যেমন রক্তনালি ছিঁড়ে গেলে অসহ্য মাথার যন্ত্রণা শুরু হয়।
প্র: মাথাব্যথা তো মাঝে মাঝেই হয়। রক্তনালি ছিঁড়ে গেছে বুঝব কী করে?
উ: দুম করে অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়ে যাবে। বিশেষ করে যাঁদের অ্যানিউরিজম ফাটে। সঙ্গে বমি, খিঁচুনি। অজ্ঞান হয়েও যেতে পারেন।
প্র: অ্যানিউরিজম কী?
উ: কারও কারও মাথায় রক্তনালির কোনও অংশ বেলুনের মতো ফুলে থাকে। রক্তচাপ বাড়লে এই বেলুনগুলো ফেটে যায়। জন্ম থেকেই এগুলো থাকে।
প্র: কিন্তু মাথায় ও সব আছে বুঝব কী করে?
উ: স্ক্যান না করলে আগে থেকে বোঝা যায় না। অ্যানিউরিজম ফাটলে লোকে আমাদের কাছে আসেন।
প্র: অ্যানিউরিজম থাকলেই ফাটবে?
উ: কোন জায়গায় কত বড় অ্যানিউরিজম আছে, তার ওপরও ফাটার সম্ভাবনা নির্ভর করে। তামাক বা অ্যালকোহল খেলে অ্যানিউরিজম ফাটার সম্ভাবনা বেশি।
প্র: কিন্তু ডাক্তাররাই তো বলেন অল্প-স্বল্প অ্যালকোহল শরীরের পক্ষে ভাল। হার্ট নাকি ভাল থাকে?
উ: কোনও ডাক্তার কি অ্যালকোহল প্রেসক্রাইব করেন? যাঁরা বেশি খান, তাঁদের কমিয়ে খেতে বলা হয়। যাতে ক্ষতি কম হয়।
প্র: তো এ রকম মাথার যন্ত্রণা শুরু হলে সেই অবস্থায় বাড়িতে কী করব?
উ: কিছুই করবেন না। নিউরো সার্জিকাল ইউনিট আছে, এ রকম কোনও হাসপাতালে দ্রুত পৌঁছতে হবে। অ্যানিউরিজম ফাটলে অ্যাঞ্জিয়োগ্রাম করে তা মেরামত করতে হয়।
প্র: আর অপারেশন?
উ: রক্তনালীর ভেতর বড় ধরনের ক্লট হলে অপারেশন দরকার হতে পারে।
প্র: ব্রেনের অপারেশনে ঝুঁকি অনেক, আর খরচও বিপুল। পরিবারের ওপরও তো বিরাট ধাক্কা?
উ: সত্যিই ধাক্কা। কখনও আবার দুটো ধাপে অপারেশন করার দরকার পড়ে। তাতে খরচ বাড়ে। মাথার অপারেশনে মুশকিলটা হল, অপারেশনের পরও অনেক দিন হাসপাতালে থাকতে হয়। রিহ্যাবের ব্যবস্থা তেমন না থাকায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সমস্যা হয়।
প্র: তা হলে?
উ: লাইফস্টাইল একটু অদলবদল করলে অনেক রোগই দূরে রাখা যায়। এক্সারসাইজ খুব দরকার। না হলে সকালে খানিকটা সময় হাঁটুন। নিয়মিত করলে মন হালকা হবে।
প্র: এত দিন এক্সারসাইজ করেননি, এখন শুরু করলে হবে?
উ: হ্যাঁ। তবে প্রথমেই ধুমধাড়াক্কা এক্সারসাইজ শুরু করলে মুশকিল। হয়তো জানেনই না আপনার প্রেসার বেশি। সে ক্ষেত্রে প্রেসার আরও চড়ে গিয়ে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক দুটোই হয়ে যেতে পারে।
প্র: তবে?
উ: ঠিক মতো গাইডেন্সে এক্সারসাইজ করবেন। আস্তে আস্তে তার পরিমাণ বাড়াতে হবে।
যোগাযোগ: ৯৮৩০০১৭১৩৮
|