|
|
|
|
বাংলার জোর কই, প্রশ্ন দিল্লির বাম সম্মেলনে |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সেই রামও নেই! সেই অযোধ্যাও নেই!
অযোধ্যা-খ্যাত বিজেপি তথা সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে রাজধানীতে দু’দিন আগেই সিপিএম এবং বামেদের নেতৃত্বে বিরাট সম্মেলন হল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ থেকে বাম কর্মী-সমর্থকদের দল বেঁধে দিল্লি ভরানোর পুরনো ছবি এ বার উধাও! রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু আর রাজ্যের কিছু সাংসদ-বিধায়ক ছাড়া বিশেষ কাউকেই তালকাটোরায় দেখা যায়নি।
অথচ পশ্চিমবঙ্গে বাম-রাজত্বের সময় ছবিটা ছিল অন্য রকম। দিল্লিতে সম্মেলন হোক বা সমাবেশ, ট্রেন ভর্তি করে রাজধানীতে লোক নিয়ে আসা হত। পশ্চিমবঙ্গ না কেরল, কে কত বেশি লোক আনতে পারে, সেই শক্তি প্রদর্শনের অদৃশ্য লড়াই চলত! কিন্তু এখন বাস্তব আলাদা।
সিপিএমের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, শুধু দিল্লিতে নেতাদের নিয়ে সম্মেলন করে কী লাভ হল? সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এই লড়াইকে নিচু স্তরে নিয়ে যেতে না-পারলে লাভ কী? দলের অনেক নেতাই মনে করছেন, এই সম্মেলনকে সামনে রেখেই সংগঠনকে চাঙ্গা করা যেত। দিল্লিতে কর্মী-সমর্থকদের হাজির করে প্রমাণ করা যেত, এখনও সাংগঠনিক শক্তি অটুট রয়েছে। কিন্তু তার বদলে সমাজবাদী পার্টির লাল রঙের গাঁধী টুপি-শোভিত সমর্থকদের নিয়ে তালকাটোরা স্টেডিয়াম ভরিয়ে ফায়দা কুড়িয়েছেন মুলায়ম সিংহ যাদব। উল্টে এর ফলে তৃণমূল কটাক্ষ করার সুযোগ পেয়ে গিয়েছে, সিপিএমের সাংগঠনিক শক্তি এখন নেই!
সিপিএমের নেতারা অবশ্য এমন ব্যাখ্যা মানছেন না। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নীলোৎপল বসু বলেন, “আমরা বিশাল সংখ্যায় কর্মী-সমর্থকদের তালকাটোরায় নিয়ে আসার কোনও লক্ষ্য নিইনি। যেটুকু ছিল, সেই শক্তি আমাদের উত্তরপ্রদেশ-হরিয়ানাতেই রয়েছে। তাতে কেউ যদি মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গে আমাদের সাংগঠনিক শক্তি নেই, সেটা ভুল!” সিপিএম নেতৃত্বের একাংশ পাল্টা এমনও বলছেন, সেই পশ্চিমবঙ্গ থেকেই লোক আনলে তখন আবার বলা হত, লোকসভা ভোটের আগে সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী মঞ্চ গড়ার উদ্যোগ। অথচ সিপিএম বাংলার বাইরে নিজের পায়ে দাঁড়াতেই পারল না!
সিপিএমের একটি সূত্রই অবশ্য বলছে, আসলে পশ্চিমবঙ্গ-কেরল থেকে বারবার লোক নিয়ে দিল্লির সভা-সমাবেশে ভিড় বাড়ানো নিয়ে গত বছর কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসে প্রশ্ন উঠেছিল। পার্টি কংগ্রেসের বিতর্কে অনেকেই দাবি তুলেছিলেন, দিল্লিতে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে আসার বদলে যদি কেন্দ্রীয় নেতারা রাজ্যে রাজ্যে, জেলায় জেলায় গিয়ে আন্দোলনে যোগ দেন, তা হলে দলের বেশি লাভ হবে। কারণ রাজধানীতে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে যে সব সভা-সমাবেশ হয়, তা শেষ পর্যন্ত প্রতীকী আন্দোলন হয়েই থেকে যায়।
তবে বাম নেতারা জানাচ্ছেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুধু দিল্লির সম্মেলনেই থেমে থাকবে না। জম্মু থেকে শুরু করে মহারাষ্ট্র, সব রাজ্যেই কোথাও সমাবেশ, কোথাও সম্মেলন হবে। পশ্চিমবঙ্গে যেমন ৬ ডিসেম্বর কলকাতা জেলার তরফে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সমাবেশ হবে। যেখানে থাকার কথা সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের। পশ্চিমবঙ্গ থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেন, “দিল্লির সম্মেলনের আসল উদ্দেশ্য ছিল অন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলের নেতাদের নিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করানো। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গেও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রচার হবে।” সেলিমের আরও বক্তব্য, “রাজ্যে পরিবর্তনের জোয়ারে সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী শক্তির কাজও গতি পেয়েছিল। পরেও আমরা দেখেছি, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির বিরুদ্ধে আন্দোলনকে হাতিয়ার করে এ রাজ্যে মৌলবাদী শক্তি উন্মাদনা তৈরির চেষ্টা করছে। আবার উল্টো দিকে আরএসএস-ও সক্রিয় হয়েছে। কাজেই এ বিষয়ে দলের কর্মী-সমর্থক তথা মানুষকে সচেতন করা প্রয়োজন।” তাঁর যুক্তি, উত্তরপ্রদেশ ও হরিয়ানাতেই সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তাই দিল্লি লাগোয়া ওইসব এলাকা থেকেই কর্মীদের তালকাটোরার সম্মেলনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
তৃণমূল যখন সিপিএমের সাংগঠনিক শক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে, তখন তৃণমূলের সাম্প্রদায়িকতা-বিরোধী অবস্থান নিয়েই পাল্টা প্রশ্ন তুলতে চাইছেন সিপিএমের নেতারা। নীলোৎপলের কটাক্ষ, “আমরা এখনও তৃণমূল নেতৃত্বের কাছ থেকে নরেন্দ্র মোদী বা আরএসএস সম্পর্কে কোনও কথাই শুনিনি!” |
পুরনো খবর: বিকল্পের মঞ্চে পা হড়কে ক্ষিতি ফেললেন কারাটকেও |
|
|
|
|
|