|
|
|
|
প্রাণ নিতে পারে চিনা বাজি, সতর্কবার্তা কেন্দ্রের |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
চিনে বাজি নিন চিনে!
এ সতর্কবার্তা খোদ কেন্দ্রীয় সরকারের। আতসবাজি কেনার আগে, তা না হলে অন্তত কালীপুজো-দীপাবলির রাতে বাজিতে আগুন দেওয়ার আগে পারলে দেখে নিন, সেটি এ-দেশি, না চিন থেকে আমদানি? যদি চিনা আতসবাজি হয়, তা হলে সাবধান। কারণ সেগুলির মশলা এমনই বিপজ্জনক যে, সাধারণ রংমশাল বা তুবড়ি থেকেই ঘটে যেতে পারে প্রাণঘাতী বিস্ফোরণ।
রাজ্যে রাজ্যে এই সতর্কবার্তা পাঠিয়েছে কেন্দ্র। সীমান্তে মাঝে মাঝেই চিনা সেনাবাহিনীর অনুপ্রবেশ ঘটে। তেমনই এ বার বাজির বাজারেও বেআইনি চিনা আতসবাজির অবাধ অনুপ্রবেশ ঘটেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আশঙ্কা, কলকাতা, মুম্বই, কান্দলা, তুতিকোরিনের মতো বন্দরের মাধ্যমে চোরাপথে অন্তত ৬০০ কন্টেনার ভর্তি চিনা আতসবাজি এ দেশের বাজারে ঢুকেছে। অন্য সব চিনা-পণ্যের মতো চিনের আতসবাজিও যথেষ্ট সস্তা। আর সেখানেই বিপদ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তাদের বক্তব্য, সস্তা করতে গিয়ে চিনের আতসবাজিতে এমন রাসায়নিক মেশানো হয়, যা আসলে বিপজ্জনক মাত্রার বিস্ফোরক। ফলে এক বাক্স চিনা ফুলঝুরিই এক ঝুড়ি চকোলেট বোমার চেহারা নিতে পারে।
কী ভাবে ঘটতে পারে বিপদ?
পশ্চিমবঙ্গ-সহ সমস্ত রাজ্যের মুখ্যসচিবকে পাঠানো চিঠিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, “এই সব আতসবাজিতে পটাশিয়াম ক্লোরেট মেশানো হয়। এই বিপজ্জনক রাসায়নিক যদি দাহ্য পদার্থের (যা আতসবাজিতে আগুন ধরার জন্য এমনিতেই দরকার) সঙ্গে মেশে, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।” অর্থাৎ অগ্নিসংযোগের অপেক্ষা না করেই ঘটে যেতে পারে বিস্ফোরণ। ভারতের বিস্ফোরক আইন অনুযায়ী, যে কোনও ধরনের ‘ক্লোরেটের’ সঙ্গে গন্ধক (সালফার) বা সালফিউরেট মিশিয়ে বিস্ফোরক তৈরি বা বিক্রি করা নিষিদ্ধ। ১৯৯২ সাল থেকেই এই আইন রয়েছে। কিন্তু পটাশিয়াম ক্লোরেট দামে সস্তা বলে সেটি দিয়েই চিনা আতসবাজি তৈরি করা হয়। এই কারণে চিনের আতসবাজি এ দেশে আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়নি। কিন্তু চোরাপথ গলে তা ঠিক হাজির। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, গত বছরও মুম্বই বন্দরে চার কন্টেনার ভর্তি চিনের আতসবাজি আটক করা হয়েছিল। কিন্তু এ বার চোরাপথে অনেক বেশি আতসবাজি এসেছে বলে মনে করা হচ্ছে। ফলে ঘুম উড়েছে কর্তাদের।
সারা বাংলা আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির চেয়ারম্যান বাবলা রায় সাফ জানালেন, তাঁরা চিনা আতসবাজির ঘোর বিরোধী। তাঁর কথায়, “এখানে আমার-আপনার পরিবারের সুরক্ষার প্রশ্ন। কারণ, এই আতসবাজি ব্যবহার করতে গিয়ে মৃত্যু হতে পারে। আমাদের ২০০ ডেসিবেলের বাজি থেকে যে বিপদ হবে না, চিনের ১০ ডেসিবেলের বাজি থেকে তার অনেক বেশি বিপদ হতে পারে।” তাঁর যুক্তি, ক্লোরেট ছাড়াও চিনা আতসবাজিতে নাইট্রো-গ্লিসারিনের মতো আরও বিপজ্জনক রাসায়নিক মেশানো হয়।
কী ভাবে আটকানো যাবে এই চিনা আতসবাজিকে? পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, কলকাতা-সহ জেলা পুলিশের শীর্ষ মহলে এ বিষয়ে নির্দেশ পাঠানো হয়েছে। আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির দাবি, তাঁরা অন্তত কলকাতার বাজারে চিনা আতসবাজি ঢুকতে দেননি। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের কাছেও এ বিষয়ে আবেদনও জানিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু জেলায় জেলায় চিনা বাজি বিক্রি হচ্ছে বলে তাঁদের কাছে খবর এসেছে। এই জেলাগুলি নিয়েই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আরও চিন্তা। মুখ্যসচিবদের কাছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক অনুরোধ জানিয়েছে, জেলা প্রশাসনগুলিকে যেন চিনা আতসবাজি বিক্রি বন্ধ করার নির্দেশ দেওয়া হয়। বাবলাবাবু বলেন, “আমরাও সমস্ত জেলায় আমাদের সদস্যদের বলেছি, যার ঘরে চিনের আতসবাজি দেখতে পাবে, তাকে যেন ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।”
শুধু আতসবাজি থেকে বিস্ফোরণ নয়, আরও একটি চিন্তা রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। অন্য সব ক্ষেত্রে সস্তা চিনা পণ্যের কাছে যেমন এ দেশের পণ্য যেমন প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে, তেমনই চিনা আতসবাজির সামনে দেশজ আতসবাজির ব্যবসায়ীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন বলেও আশঙ্কা করছে কেন্দ্র। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের চিঠিতেও সে কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আতসবাজি শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা অবশ্য এখনই ততটা ভয় পাচ্ছেন না। কারণ, সারা দেশে আতসবাজি শিল্পের পরিমাণ প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে খুব সামান্য পরিমাণই চিনা আতসবাজি। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এই পরিমাণটা মাত্র ৫ শতাংশ বলে রাজ্যের আতসবাজি উন্নয়ন সমিতির হিসেব। তবে চিন্তাটা একেবারে উড়িয়েও দিচ্ছেন না তাঁরা। বাবলাবাবু জানালেন, চিনে তৈরি যে মোমবাতি পশ্চিমবঙ্গে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, রাজ্যে তা তৈরি করতে হলে খরচ হবে ২০০ টাকা!
কাজেই এ বিপদের শেষ নেই।
তা সে চিনা বাতি হোক কি ‘খাঁটি চিনে-পটকা’! |
|
|
|
|
|