কালী চলে গেলেও তাঁরা পড়ে রইলেন।
শুক্রবার রাতেও কুমোরটুলি ঘুরে দেখা গেল সার দিয়ে সাজানো রয়েছে নানা ধরনের ভূত, রাক্ষস, ডাকিনী, যোগিনী। ‘ভূত’ শিল্পী স্বপন দে জানালেন, এ বারের মতো খারাপ অবস্থা আগে কখনও হয়নি। কারণ, ছোট থেকে বড় ভূত, রাক্ষস থেকে শাকচুন্নি, সবারই বেশ দাম বেড়েছে।
শিল্পীরা জানালেন, এ বার গঙ্গাদূষণ ঠেকাতে অধিকাংশ ঘাটে বিসর্জনের পরেই কাঠামো তুলে নেওয়া হয়েছে। ফলে ভূতের কাঠামোয় টান পড়েছে। শিল্পী মোহন ভক্তারের কথায়: “অন্যান্য বার বাবুঘাট ও নিমতলা ঘাট থেকে প্রচুর কাঠামো পেতাম। সেগুলো ভূত তৈরিতে লাগাত। বিশেষ করে লক্ষ্মীর কাঠামোই ব্যবহার করতাম। কিন্তু এ বার এ দু’ঘাটে বেশির ভাগ কাঠামো তুলে ফেলা হয়েছে। অন্য ঘাটেও যথেষ্ট কাঠামো মেলেনি।” |
শিল্পীরা জানাচ্ছেন, এই আকালে যাঁরা কাঠামো তুলছেন তাঁরা দাম হাঁকছেন ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। তা আবার মেরামত করতে হচ্ছে। বেড়েছে মাটি থেকে শুরু করে রঙের দরও। সব মিলিয়ে ভূতের দাম বেড়েছে ১০-১৫ শতাংশেরও বেশি। ছোট রাক্ষস বা ভূত ২০০-৪০০ টাকা আর বড় ভূত ১২০০-১৪০০ টাকা। কঙ্কালের দাম ১৪০০ টাকার মতো। নববধূ ও জামাই ভূতের দাম ১৫০০ পর্যন্ত উঠেছে।
সাধারণত কুমোরটুলির ‘পার্ট টাইম’ শিল্পীরা ভূত তৈরি করেন। যেমন, তাপস পাল। পেশায় গাড়ির চালক। কালীপুজোর সময়ে ভূত গড়েন। আর এক শিল্পী বাপ্পা পাল হোসিয়ারি কারখানায় কাজ করেন। এ সময়ে ভূত বানান। এ বার নতুন জামাই ভূত ও সাহেব ভূতও তাঁর গড়া। তিনি বলেন, “ভূত বানিয়েই হাত পাকাই। এ বার কাঠামোর দাম বাড়ায় দামটা অনেক বেশি রাখতে বাধ্য হয়েছি।”
এমনিতেই এ বার কালীপ্রতিমার দাম বেড়েছে ২০ শতাংশেরও বেশি। তাই প্রতিমা কিনতেই পুজোকমিটিগুলির অনেকটা খরচ হয়ে যাচ্ছে। ভূতের জন্য কিছুই থাকছে না। তবে এ বাজারেও কয়েকটি পুজোকমিটি ভাল ভূতের খোঁজ করেছেন। যেমন, দমদমের এক পুজো-কর্তা রাজীব দাস বলেন, “প্রতি বারই মণ্ডপ সাজাতে বেশ কয়েকটি রাক্ষস, ভূত, পেত্নি নিয়ে যাই। পাড়ায় এঁদের ভালই চাহিদা।
দাম অনেকটা বেশি হলেও এ বারও কিনেছি। তবে মাত্র দু’টি রাক্ষস নিতে পেরেছি।” উত্তর কলকাতার আর এক কমিটির সদস্যরা জানালেন, এ বার ভূত আর রাক্ষসের অনেক বৈচিত্র। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় তাঁরা মোটে ছোট দু’টি রাক্ষসই কিনতে পেরেছেন। |