সাতসকালে আচমকা বিগড়ে গেল কলকাতা বিমানবন্দরের সমস্ত কম্পিউটার। কলকাতা বিমানবন্দর থেকে অন্য শহরে উড়ান ধরতে গিয়ে চরম নাকাল হলেন যাত্রীরা। চূড়ান্ত হয়রানি হল বিমানসংস্থার কর্মী-অফিসারদের। শুক্রবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ শুরু হওয়া এই সমস্যা মিটতে বেলা দশটা বেজে যায়।
দেহরাদূন-এর বাসিন্দা বিশাল অগ্রবাল ব্যবসার কাজে দুর্গাপুর এসেছিলেন। কাজ মিটিয়ে শুক্রবার ভোরে পৌঁছন কলকাতা বিমানবন্দরে। সকাল ৯টা ৫০-এর এয়ার ইন্ডিয়ার দিল্লির উড়ান ছাড়ে ১১টা ২০ মিনিটে। বিশাল বলেন, “কম্পিউটার ব্যবস্থা ঠিকমতো কাজ না করায় উড়ান দেরিতে ছাড়ে। ফলে দিল্লি পৌঁছে আমি দেহরাদূনের উড়ান ধরতে পারেনি। অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে বিমানসংস্থার থেকে গাড়ির ব্যবস্থা করেছি। তাতেই দেহরাদূন যাচ্ছি।”
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, যাবতীয় কম্পিউটারের লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (ল্যান) বিগড়ে যায় সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ। এই ব্যবস্থায় বিভিন্ন বিমানসংস্থা তাদের নিজেদের কম্পিউটারে সংযোগ রক্ষা করে। এর মাধ্যমেই যাত্রীরা টিকিট, বোর্ডিং কার্ড পান। টিকিট নিয়ে চেক-ইন কাউন্টারে গেলে কম্পিউটার থেকে বার করে দেওয়া হয় প্রিন্টেড বোর্ডিং কার্ড। যাত্রীদের ব্যাগে লাগেজ ট্যাগ-ও বার হয় কম্পিউটার থেকেই। |
এ দিন সেই ব্যবস্থা বিগড়ে যাওয়ায় যাত্রীদের সময় মতো বোর্ডিং কার্ড দেওয়া যায়নি। বিমানসংস্থার কর্মীরা বোর্ডিং কার্ড হাতে লিখে দিতে শুরু করেন। ফলে প্রতিটি বিমানসংস্থার চেক-ইন কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন পড়ে যাত্রীদের। বিরক্ত হয়ে তাঁরা বিমানবন্দরের ম্যানেজারের ঘরে এসে অভিযোগ জানিয়ে যান। উড়ান সংক্রান্ত তথ্য জানার ডিসপ্লে বোর্ডও কাজ করেনি। ফলে কোন গেট দিয়ে কোন বিমানের যাত্রীরা উঠবেন, তা নিয়েও ছড়ায় বিভ্রান্তি।
কলকাতা বিমানবন্দরের নয়া টার্মিনালে একের পর এক এয়ার ইন্ডিয়া, জেট, ইন্ডিগো এবং স্পাইসজেটের আইল্যান্ড। বিমানসংস্থাগুলি সূত্রে খবর, কম্পিউটার বিগড়ে যাওয়ায় প্রতিটি বিমানসংস্থার সকালের উড়ান গড়ে ৫-১০ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে। কার্যত রোজ সকালে এই সময়েই সবচেয়ে বেশি উড়ান ছাড়ে। বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা বলেন, “যে সংস্থা এই ব্যবস্থার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল, আমরা তাদের ডেকে পাঠিয়েছিলাম। সমস্যা মেটাতে তারা দিল্লিতে যোগাযোগ করে। তবে, কোনও যান্ত্রিক ব্যবস্থায় আচমকা ত্রুটি হলে কারও কিছু করার থাকে না।”
শুরুতে মনে হয়েছিল, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিগড়ে গিয়েছে। কিন্তু, দেখা যায় কনভেয়ার বেল্ট ও এক্স-রে মেশিনগুলি কাজ করছে। শুধু কম্পিউটারগুলি অন্ধকারে। এই সব কম্পিউটারে সফ্টওয়্যার তৈরি করেছে সিটা নামে একটি সংস্থা। তাদের প্রতিনিধিরা এসে জানান, সমস্যা কম্পিউটারের নয়, ল্যান-এর। কারণ, বিএসএনএল থেকে যে নেটওয়ার্ক আসে তা ঠিকঠাক আসছে। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, সমস্যার সমাধান কাকে দিয়ে করা সম্ভব, তা বার করতেই বেশ কিছু সময় কেটে যায়।
শেয়াল নিয়ে বিপত্তি। এ দিনই বিমানবন্দরের রানওয়েতে দু’বার দু’টি করে শেয়াল চলে আসায় বিপত্তি দেখা দেয় বিমান নামা নিয়ে। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, ভোর ৪টে ২০ মিনিট নাগাদ শিলচর থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিমান যাত্রী নিয়ে প্রায় নেমে আসছিল। তখনই পাইলট এটিসি-কে জানান, রানওয়েতে দু’টি শেয়াল ঘুরছে। মুখ ঘুরিয়ে তিনি উড়ে যান। একই সময়ে স্পাইসজেটের একটি উড়ান চেন্নাই যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল। সেটিরও ছাড়তে দেরি হয়। বিমানবন্দরের কর্মীরা শেয়াল দু’টিকে তাড়ানোর পরে শুরু হয় উড়ান চলাচল। এর মিনিট ২০ পর একই অভিযোগ করেন স্পাইসজেটের পাইলট। তিনিও অন্য শহর থেকে কলকাতায় আসছিলেন। নামার সময়ে দেখতে পান রানওয়ের উপরে দু’টি শেয়াল। সেই বিমানের মুখও ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। রানওয়ে গিয়ে শেয়াল তাড়িয়ে আসেন কর্মীরা। তারপরে নামে বিমানটি। |