চারশো চোখে নজরদারি। আজ, কালীপুজো থেকে শুরু হওয়া উৎসবের মরসুমে কলকাতার প্রাপ্তি এটাই। অপরাধ রুখে শহরের আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে এবং ট্রাফিক সামলাতে এ বার কলকাতা পুলিশের নবতম হাতিয়ার ১৫০টি জায়গায় লাগানো মোট ৪০০টি শক্তিশালী নজরদার ক্যামেরার ‘সিটি সাভির্ল্যান্স সিস্টেম’। শুক্রবার লালবাজারে নতুন এই ব্যবস্থার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দোপাধ্যায়, কলকাতার পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ-সহ কলকাতা পুলিশের পদস্থ কর্তারা।
লালবাজার সূত্রের জানা গিয়েছে, আজ, শনিবার থেকে কলকাতা শহরে শুরু হচ্ছে একের পর এক বড় বড় ইভেন্ট। আজ কালীপুজা। রবিবার থেকে পুজোর বিসর্জন রয়েছে। বুধবার থেকে ইডেনে শুরু হবে সচিনের ১৯৯তম টেস্ট ম্যাচ। টেস্ট ম্যাচ চলাকালীনই নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে হবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। সেখানে উপস্থিত থাকবেন অমিতাভ বচ্চন এবং শাহরুখ খানও। সচিন-শাহরুখ-অমিতাভ বচ্চন নিয়ে ইতিমধ্যেই কলকাতাবাসীর উৎসাহ তুঙ্গে। তার পরে আবার একে একে আসছে ছটপুজো, মহরম। পুলিশের দাবি, ইডেনে ম্যাচ-সহ শহরের বাকি উৎসবের দিনগুলিতে ওই এলাকার আইনশৃঙ্খলা এবং ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ বার থেকে কাজে লাগবে নবতম এই ‘সিটি সার্ভিল্যান্স সিস্টেম’ বা নজরদারি ব্যবস্থা।
পুলিশ জানায়, সিঁথি থেকে পৈলান কলকাতা পুলিশের ১৫০ বর্গকিমি এলাকা এখন ওই ক্যামেরার নজরদারিতে থাকবে। চারশো ক্যামেরার প্রতিটিই উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন হওয়ায় রাস্তায় কী কী ঘটছে, তা খুব সহজেই ধরা পড়বে বলে পুলিশ জানিয়েছে। এক-একটি ক্যামেরা প্রায় ২০০ মিটার এলাকা জুড়ে নজরদারি চালাতে পারবে। গত এক বছর ধরে কলকাতা পুলিশের আধুনিকীকরণ প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ধাপে ধাপে ওই ক্যামেরাগুলি লাগানো হয়েছে। |
এ দিন এই নতুন নজরদারি ব্যবস্থার উদ্বোধনের পরে এর জন্য গড়া বিশেষ কন্ট্রোল রুমও ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। মূল কন্ট্রোল রুম এবং ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের পাশাপাশি এই নতুন কন্ট্রোল রুমটি থেকে ক্যামেরার সাহায্যে শহরের বিভিন্ন জায়গায় নজরদারি করবে পুলিশ। লালবাজারের পাশাপাশি কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের ২৫টি গার্ড থেকেই ওই ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি করা যাবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
নয়া নজরদারি ব্যবস্থার মাধ্যমে শহরে মহিলাদের নিরাপত্তা আরও আঁটোসাঁটো করা যাবে বলে আশাবাদী মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে শহরে বাড়তে থাকা চুরি-ডাকাতিও ঠেকানো যাবে বলে এ দিন আশাপ্রকাশ করেছেন তিনি। এ দিন লালবাজারে ওই অনুষ্ঠানে কলকাতা পুলিশের কাজের প্রশংসা করে মমতা বলেন, “আমরা গর্ব করে বলতে পারি, আমরা (কলকাতা পুলিশকর্মীরা) যা পারি, কেউ তা পারে না। চাইলে আমরা স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডকে ছাপিয়ে যেতে পারি।” মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আগামী দিনে কলকাতা পুলিশের বাইরে আসানসোল-দুর্গাপুর, ব্যারাকপুর এবং বিধাননগর কমিশনারেটেও ‘সিটি সার্ভিল্যান্স সিস্টেম’ চালু করা হবে।” সে ক্ষেত্রে টাকা কোনও সমস্যা হবে না বলে এ দিন লালবাজারেই জানিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
পুলিশ কমিশনার সুরজিৎ কর পুরকায়স্থ বলেন, “যান চলাচলের পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা ও অপরাধের মতো ঘটনা ওই ক্যামেরা দিয়ে সমাধান করা হয়েছে। বিভিন্ন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও শুরু হয়েছে। ওই ক্যামেরার ছবি ২০-২৫ দিন মজুত করা থাকবে তদন্তের স্বার্থে।” আগামী দিনে কোনও গাড়ি ট্রাফিক আইন ভাঙলে যাতে তার বিরুদ্ধে সরাসরি ছবি তুলে মামলা করা যায়, তার জন্য আরও উন্নতমানের ক্যামেরা বসানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। লালবাজার সূত্রে খবর, বিদেশে এই ধরনের ব্যবস্থায় নজরদারি নতুন নয়। বিশ্বের বড় বড় দেশের প্রধান শহরগুলিতে ট্রাফিক আইনভঙ্গকারীদের ধরতে এবং সার্বিক ভাবে ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এ ধরনের ব্যবস্থা খুবই জনপ্রিয়। তবে এ দেশের শহরগুলিতে এখনও এই ব্যবস্থা তেমন জনপ্রিয় নয়। পুলিশ কর্তাদের দাবি, তাঁদের আগে শুধুমাত্র গুজরাতের সুরাটে পুলিশ এতগুলি ক্যামেরা দিয়ে শহরে নজরদারি চালাত। |