ধনতেরাসে জেলাতেও সোনা কেনার ঝোঁক, খুশি ব্যবসায়ীরা
ছর কয়েক আগেও শব্দটির সঙ্গে বাঙালির তেমন পরিচয় ছিল না। কিন্তু আজকের দিনে দীপাবলি উৎসব পালনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছে ‘ধনতেরাস’ বা ‘ধন ত্রয়োদশী’ও। রাজ্যের অবাঙালিরদের পাশাপাশি ধনতেরাস নিয়ে এখন সমান আবেগপ্রবণ বাঙালিও। রাজ্যের বড় বড় শহরের গণ্ডি ছাড়িয়ে সেই উৎসবের আঁচ এখন পৌঁছেছে জেলা সদর ও মফস্সলেও। আর তার সূত্রেই লাভের মুখে দেখছেন অলঙ্কার ও কাঁসা-পিতল ব্যবসায়ীরা।
দীপাবলির ঠিক দু’দিন আগে অর্থাৎ কৃষ্ণপক্ষের তেরোতম দিনের বিশেষ তিথিটি দেশ জুড়ে পালিত হয় এই ধনতেরাস। ধনতেরাস পাঁচ দিন ধরে চলা ‘দিওয়ালি’ উৎসবের প্রথম দিন। একদা উত্তর ভারতে এবং পশ্চিম ভারতে মূলত মার্কেনটাইন সম্প্রদায়ের উৎসব হিসেবেই পালিত হত ধনতেরাস। এখন উৎসবে সামিল হয় প্রায় সারা দেশ। ধনতেরাসের দিন পুজো হয় সম্পদের দেবী ধনলক্ষ্মীর। এই উপলক্ষে সৌভাগ্যের জন্য কেনা হয় সোনা, রূপো বা অন্য কোনও মূল্যবান ধাতুর এক টুকরো অলঙ্কার। যদি তা কেনা সম্ভব না হয়, তাহলে ন্যূনতম একটি বাসনও কেনা চলে। এটাই প্রথা। তবে কালীপুজো, দীপাবলির সঙ্গে ধনতেরাস জুড়ে যাওয়ায় লাভ হয়েছে অলঙ্কার ও কাঁসা-পিতল ব্যবসায়ীদের। এমনিতেই মরসুম জুড়ে উৎসব থাকায় এই সময় কেনা কাটার একটি হিড়িক থাকে।
দোকানে দোকানে

বোলপুরে একটি অলঙ্কারের দোকানে গয়না কিনতে ভিড়।
তার সঙ্গে ধনতেরাসও জুড়ে যাওয়ায় খুশি ব্যবসায়ী মহল। বীরভূমের ব্যবসায়ীদের, বিশেষ করে অলঙ্কার ব্যবসায়ীদের অভিজ্ঞতা অন্তত সে কথাই বলছে। সিউড়ি, বোলপুর, রামপুরহাট, দুবরাজপুর বা সাঁইথিয়ার প্রতিষ্ঠিত সব অলঙ্কার ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, গত ৪-৫ বছর ধরে এই বিশেষ দিনটিতে সোনা বা রূপোর মুদ্রা, অলঙ্কার কেনার ঝোঁক বেড়েছে। অবাঙালিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মেতেছেন বাঙালিরাও।
দুবরাজপুরের প্রতিষ্ঠিত অলঙ্কার ব্যবসায়ী মুজিবুর রহমান, কলকাতার একটি নামী অলঙ্কার দোকানের বোলপুর শাখার মালিক মণীশ খাণ্ডেলওয়াল, সিউড়ির প্রতিষ্ঠিত স্বর্ণব্যবসায়ী শৈলেন ঘোষ কিংবা রামপুরহাটের অলঙ্কার ব্যবসায়ী সুদর্শন চৌধুরী প্রত্যেকেই বলছেন, “ধনতেরাসের দিন জেলা শহরগুলিতেও এখন যথেষ্টই কেনাকাটা বেড়েছে। এ ব্যাপারে অবাঙালিদের সঙ্গে সঙ্গে বাঙালিদের মধ্যেও আগ্রহ দেখা যাচ্ছে।” রূপোর ৫ গ্রাম ওজনের লক্ষ্মী-গণেশ খোদাই করা ৫০০ টাকা মূল্যের কয়েন যেমন বিক্রি হচ্ছে, তেমনই চাহিদা রয়েছে ১৪০০-১৫০০ টাকা মূল্যের পুরনো কয়েনেরও। সোনা বা রূপোর গয়নারও খরিদ্দার মিলছে বলে তাঁরা জানিয়েছেন। তবে সোনার বর্তমান বাজার দর নিয়ে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কারও কারও মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তাঁরা জানালেন, গত বারের তুলনায় সোনার দামে এ বার তেমন তফাত নেই। ১০ গ্রাম সোনার গয়নার মজুরি ছাড়া দাম পড়ছে ৩১,৩০০ টাকা। তাঁরা বলছেন, “এ সব সত্ত্বেও গত বারের বাজার এ বারের তুলনায় কিছুটা ভাল ছিল। কারণ মাঝে সোনার দাম বেশ খানিকটা কমে যাওয়ায় সেই সময় কেনাকাটা বেড়ে গিয়েছিল অনেকটাই। ফলে ধনতেরাস উপলক্ষে কেনাকাটা হলেও তার মাত্রাটা কিছুটা হলেও কমেছে।”

ধনতেরাসের বিশেষ স্বর্ণমুদ্রা।
দুবরাজপুরেরর একটি অলঙ্কারের দোকানে লক্ষ্মী-গণেশ খোদাই করা রূপোর কয়েন কিনলেন কাবেরী মুখোপাধ্যায়। তিনি বললেন, “এই মুহূর্তটা শুভ, তাই গত কয়েক বছর ধরেই ধনতেরাসের দিন কিছু না কিছু কিনি।” বোলপুরে একটি অলঙ্কারের দোকানে দাঁড়িয়ে উজ্জ্বল সাহা আবার বলছেন, “আজকের দিনে অলঙ্কার কিনলে পরের বার সম্পদের দ্বিগুন সম্বৃদ্ধি হবে। এই বিশ্বাস থেকেই ধনতেরাসের দিন অলঙ্কার কেনা।” একই মত ঝাড়খণ্ডের পাকুড় থেকে রামপুরহাটের একটি অলঙ্কারের দোকানে সোনার গয়না কিনতে আসা কল্যাণ মিত্রেরও। রামপুরহাটেরই অন্য একটি গয়নার দোকান থেকে রূপোর ছোট থালা-বাটি কিনছিলেন সরস্বতী শর্মা। তাঁর বিশ্বাস, ধনতেরাসের দিনে কিছু কিনলে ধনলক্ষ্মী প্রসন্ন হন। পরিবারের সৌভাগ্য ফেরাতে তাই ওই সব সামগ্রী কিনলেন।
তবে ধনতেরাসের কেনাকাটায় শুধু যে অলঙ্কার ব্যবসায়ীরাই লাভের মুখ দেখেন, তা কিন্তু নয়। হাসি ফোটে কাঁসা-পিতলের দ্রব্য বিক্রেতারাও। প্রতিষ্ঠিত কাঁসা-পিতল ব্যবসায়ী সিউড়ির শান্তনু ঘোষ এবং দুবরাজপুরের দীপক দত্তদের দাবি, “গত কয়েক বছরে ধনতেরাসের দিন পিতলের তৈরি লক্ষ্মী, লক্ষ্মী-গণেশ বা লক্ষ্মী-নারায়েণের ছোটছোট মূর্তি, পুজোর বাসন, তামার তৈরি ঘটির চাহিদা বেড়েছে।” শুভ মুহূর্তে বাড়ির জন্য পিতলের মূর্তি ও পুজোর বাসন কিনেছেন সিউড়ির বাসিন্দা, পেশায় স্বাস্থ্য কর্মী মিনতি মিত্রঠাকুর এবং বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র আবাসনের বাসিন্দা রত্না সাহানা। দু’জনেই বলছেন, “কয়েক বছর আগেও এমন চল ছিল না। কিন্তু ধনতেরাস একটি শুভদিন জানার পরেই গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত এমন জিনিস কেনাকাটা শুরু করেছি।”

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.