মুর্শিদাবাদ-জিয়াগঞ্জ ব্লকের খামারপাড়া গ্রামে শুক্রবার সকাল থেকেই ছিল চাপা উত্তেজনা। বেলা দশটায় এসে দাঁড়াল একটা মস্ত ট্রাক। নেমে এল পাঁচ জন কর্মী বিশেষ কায়দায় কলাবাগান থেকে কাঁদি কাটতে শুরু করলেন। ঘন্টা তিনেক পরে কলার ছড়া-ভর্তি প্লাস্টিকের ক্রেট নিয়ে ট্রাক ফের রওনা দিল। গ্রামের মানুষের মুখে তখন হাসি। কলাচাষি রাহেমা বিবি বললেন, “এলাকার বাজারের চাইতে অনেক বেশি লাভ হল। বাজারে কলা নিয়ে যাওয়ার ভ্যান ভাড়াও বেঁচে গেল।”
সরকার চাষিদের পাশে দাঁড়ালে চাষ যে লাভজনক হয়ে উঠতে পারে, তার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে মুর্শিদাবাদে। গত বছরই উদ্যান পালন দফতরের উদ্যোগে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পকে কাজে লাগিয়ে পাঁচ হাজারেরও বেশি চাষি কলাবাগান তৈরি করেন ১২ টি ব্লকে। প্রত্যেকের বাগানে কমবেশি ১০০ কলাগাছ। টিস্যু কালচার পদ্ধতিতে ‘গ্র্যান্ড নাইন’ প্রজাতির কলা। এ বছর ফলন ভাল হলেও, সমস্যা এল বিপণনে। স্থানীয় বাজারে বিক্রি করতে গিয়ে হতাশ চাষিরা। রাহেমা বিবি বললেন, “আমাদের কলা কিনছে ৭০-৮০ টাকা কাঁদি দরে, তাও ধারে। অথচ খুচরো বাজারে ব্যবসায়ীরা কিলো হিসেবে বিক্রি করছে চড়া দামে।” |
বাজারে যাওয়ার আগে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক। |
এই অবস্থায় আবার এগিয়ে এসেছিল উদ্যান পালন দফতর। রাজ্যের একটি বেসরকারী সংস্থার কাছে দফতরের কর্তারা কথা বলেন। গত কয়েকদিন ধরে ওই সংস্থার অফিসারেরা জিয়াগঞ্জ, নওদা, হরিহরপাড়া-সহ নানা এলাকা ঘুরে কলার ফলন দেখেন। ওই বেসরকারি সংস্থার সহকারী জেনারেল ম্যানেজার সারদাপ্রসাদ চৌধুরী বলেন, “আমরা এতদিন নদিয়া থেকে কলা নিয়েছি। মুর্শিদাবাদের উদ্যান পালন দফতর প্রস্তাব দেয়, ওই জেলা থেকে কলা কেনার জন্য। কলার মান ও ফলন দেখে আমরা সন্তুষ্ট।” তাঁরা যে দাম দিচ্ছেন, তাতে স্থানীয় বাজারের থেকে কাঁদিতে ৩০/৪০ টাকা বেশি দাম মিলছে চাষিদের। ফড়ে নেই, বাজারে নিয়ে যাওয়ার খরচও নেই। সব দিক দিয়েই লাভ চাষিদের।
বারাসতে ওই সংস্থার ৪০ মেট্রিক টন ক্ষমতার ৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গুদাম রয়েছে। প্রতিদিন ১৮ মেট্রিক টন কলা কেনার ব্যবস্থাও রয়েছে। সংস্থার বিপণন অফিসার বলরাম নন্দী জানান, তাঁদের গুদামে কার্বাইড ব্যবহার না-করে কলা পাকানো হয়। সেই পাকা কলা কলকাতার নামী সংস্থার রিটেল আউটলেট এবং নামী বেসরকারি হাসপাতালে সরবরাহ করা হয়। উদ্যান পালন দফতরের সহ-উদ্যানবিদ শুভদীপ নাথ বলেন, “এ বছর জেলায় একশো দিনের কাজের প্রকল্পে আরও ১০ হাজার চাষিকে কলা বাগান করে দেওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। বিশাল পরিমাণে কলা পাওয়া যাবে। উপযুক্ত বিপণনের ব্যবস্থা হলে উপকৃত হবেন চাষিরা।” |