শ্যামার আরাধনায় আদিবাসী সংস্কৃতি ইলামবাজারে
দুর্গাপুজোর রেশ কাটতে না কাটতেই উঠোনে হাজির কালীপুজো। কোথাও কয়েক শতাব্দী ধরে পারিবারিক কালীপুজোর সর্বজনীন রূপ তো কোথাও আবার প্রমীলা বাহিনীদের সঙ্ঘ করে পুজোর উদ্যোগ। কেউ পুজো মণ্ডপের মতো জনসমাগম জায়গা পেয়ে সাংস্কৃতিক চর্চার আসর বসাতে ব্যস্ত তো কোথাও উদ্যোক্তারা ব্যস্ত আদিবাসী সংস্কৃতির পাশাপাশি মৃৎশিল্প চর্চা নিয়ে। কালীপুজো উপলক্ষে বোলপুর মহকুমা জুড়ে এমনই সব চিত্র দেখা যাচ্ছে।
নানুর থানার বঙ্গছত্র গ্রাম এলাকায় ব্যাঙচাতরা বলেই খ্যাত। গ্রামের চক্রবর্তী পরিবারের কালীপুজো প্রায় তিনশো বছরেরও পুরনো। ওই গ্রামের বঙ্গছত্র কালী কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, গ্রামের পশ্চিম প্রান্তে উলোসোনা নামে এক পুকুর পাড়ে গিরিলাল চক্রবর্তীর কন্যা চন্দ্রমুখীদেবী ওই পুজোর প্রচলন করেন। বোলপুর-পালিতপুর রাস্তার ধারে ওই সুউচ্চ মন্দিরে পুজিতা হন দেবী কালী। কথিত আছে, চন্দ্রমুখীদেবীর বিয়ে হয় ন’নগর গ্রামের মুখোপাধ্যায় পরিবারে। বিয়ের এক বছর পর বিধবা হয়ে তিনি বাবার বাড়িতে ফিরে আসেন। তার পর থেকেই তিনি মাতৃসাধনায় ব্রতী হন। সিদ্ধি লাভের পরে সেখানেই পুজো প্রচলন করেন। ওই গ্রামের বর্তমান প্রজন্মের সদস্যেরা বলছেন, মন্দিরের পাণ্ডা শশিকান্ত মুখোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবার এই পুজোর দায়িত্বে ছিলেন। বছর তিরিশ আগে শশিকান্তবাবুর ছেলে শ্যামাপদ মুখোপাধ্যায় বঙ্গছত্র গ্রামবাসীদের হাতে পুজোর দায়িত্ব তুলে দেন। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, ওই সময়ে অবশ্য তালপাতার ছাউনিতে পুজো হত। গ্রামবাসীদের উপরে পুজোর দায়িত্ব আসার পরে গ্রামের নেতাজি তরুণ সেবা সমিতি এবং ভক্তদের উদ্যোগে পাকা মন্দির তৈরি হয়। প্রাচীন প্রথা মেনে আজও বঙ্গছত্র কালী পুজো অমলিন। শুধু ওই গ্রামই নয়, আশেপাশের বেশ কয়েকটি গ্রামও সামিল হয় ওই পুজোয়। লাগোয়া মফস্সল শহর নানুর ও বোলপুর থেকে বহু মানুষের সমাগম হয় ওই পুজোতে।
ইলামবাজারের স্কুলবাগান এলাকায় শ্যামা মহিলা সঙ্ঘের উদ্যোগে এ বারই প্রথম শুরু হয়েছে কালীপুজো। চাঁদা আদায় থেকে শুরু করে পুজোর যাবতীয় কেনাকাটা পুরোটা করেন মহিলারাই। এলাকার জনা কুড়ি মহিলা মিলে তৈরি ওই সঙ্ঘের পুজোতে রয়েছে নানা লোক সংস্কৃতির অনুষ্ঠান। পাশাপাশি আধুনিক নাচ, গানও থাকছে। সভাপতি মিঠু সরকার, সম্পাদক সবিতা রায়রা বলেন, “পাড়ার বিভিন্ন পেশায় থাকা মহিলাদের পাশাপাশি গৃহবধূদের নিয়ে এই পুজোর পরিকল্পনা। শুধু পুজোতেই সীমিত থাকা নয়, এমন একটি মঞ্চ থেকে আগামী দিনে নারী নির্যাতন, পণ প্রথা এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক জনসচেতনতা গড়ে তোলার লক্ষ্য রয়েছে।” এ দিকে ইলামবাজার থানা এলাকার জঙ্গলমহলের আদিবাসীদের নিয়ে এই প্রথম কালীপুজোর আয়োজন করেছেন উদ্যোক্তারা। আনুষ্ঠানিক পুজোই নয়, আদিবাসী সংস্কৃতি ও তাঁদের শিল্প প্রতিভার বিকাশের লক্ষ্যে এই উদ্যোগ। উদ্যোক্তাদের পক্ষে পূর্ণিমা বাগ, মধুসূদন পালরা বলেন, “এলাকার আদিবাসীদের একত্রিত করে মৃৎশিল্প, হস্তশিল্প চর্চার বিষয়গুলির উপর জোর দিয়ে তাঁদের স্বনির্ভর করাই আমাদের লক্ষ্য।” রামনগর, দ্বারোন্দা, শ্রীচন্দ্রপুর ও বনভিলা-সহ ইলামবাজার এলাকার বহু আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ যোগ দিয়েছেন নীলকুঠি এলাকার এই অভিনব শ্যামাপুজোয়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.