ধুধু করছে চারদিক। কোথাও একটু ছায়া পর্যন্ত নেই। তার মধ্যে দিয়েই পথ চলা। হঠাৎই খারাপ হয়ে গেল গাড়িটা। অগত্যা হেঁটে হেঁটে পার হওয়ার চেষ্টা বিশ্বের উষ্ণতম আর তৃতীয় বৃহত্তম সাহারা মরুভূমি। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। পথেই একে একে মৃত্যু হল ৯২ জনের। যাঁদের অধিকাংশই শিশু আর মহিলা। কয়েক দিন আগে সাহারা মরুভূমি থেকে উদ্ধার হয়েছে ৯২টি মৃতদেহ। উদ্ধারকারীদের সন্দেহ এরা সবাই নাইজার-এর বাসিন্দা। কাজ আর খাবারের খোঁজে দেশ থেকে পালিয়ে যাচ্ছিলেন আলজিরিয়ায়।
আফ্রিকার দক্ষিণ অংশে অবস্থিত নাইজার পৃথিবীর দরিদ্রতম দেশগুলির অন্যতম। প্রতি বছরই কাজের খোঁজে, কখনও বা একটু ভাল থাকতে এ দেশের মানুষ সপরিবার পালিয়ে যায় আলজিরিয়া বা লিবিয়ায়। সেখান থেকে সুযোগ মিললে স্বপ্নের জগৎ, ইউরোপের কোনও দেশ। এ ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল বলে সন্দেহ। নাইজারের প্রশাসন সূত্রের খবর, ওই শরণার্থীদের দু’জন সাহারা অতিক্রম করে আর্লিটে পৌঁছতে পেরেছেন। আশপাশের বাসিন্দারা তাঁদের মুখেই জানতে পেরেছেন সেই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা। এর পরেই শুরু হয় উদ্ধারকাজ।
আলমুস্তাফা আলহাসিন বলেন, “যে দিকে তাকাচ্ছি ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মৃতদেহ। বেশির ভাগই কড়া রোদে ঝলসে গিয়েছে। কোনও কোনও দেহ আবার খুবলেছে কোনও প্রাণী। মৃতদের মধ্যে ৪৮ জন শিশু, ৩২ জন মহিলা। কী কষ্ট পেয়ে যে তারা মরেছে ভাবতেই শিউরে উঠছি।”
উদ্ধারকারীদের মতে, অক্টোবরের প্রথম দিকেই সম্ভবত মারা গিয়েছেন তাঁরা। খিদে, তেষ্টা, সেই সঙ্গে প্রচণ্ড রোদ। এত কষ্ট সহ্য করেও সাহারা পেরোনোর চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। প্রাণ বাঁচাতে কোলের শিশুকেও ত্যাগ করেছিলেন। কারণ অনেক জায়গায় শুধু একা বাচ্চার ঝলসানো দেহ মিলেছে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি।
নাইজারের রাজধানী নিয়ামের এক নিরাপত্তারক্ষী মৌসা আকফার জানালেন, মৃতেরা সবাই জিন্দেরের বাসিন্দা। লরিতে করে সম্ভবত লিবিয়ায় পালাচ্ছিলেন তাঁরা। কিন্তু কী ভাবে তাঁরা সীমান্তের নজরদারি এড়িয়ে সাহারায় ঢুকে পড়লেন তা পরিষ্কার নয় কারও কাছে। ক্ষুব্ধ আকফার বললেন, “সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত। নির্ঘাত টাকা খেয়ে ওদের পালাতে দিয়েছিল। ওদের আটকানো গেলে এ ভাবে তাজা প্রাণগুলো চলে যেত না।” তবে এটা যে মানুষ পাচার চক্রের কাজ সে ব্যাপারে নিশ্চিত আকফার।
নাইজারের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য জনসন বিয়েন-এইমে বলেন, “এ পথ দিয়ে প্রতি বছরই বহু মানুষ পাচার হয়। সরকার সব জেনেও চোখ বুজে রয়েছেন।” |