বনধের সময়ে যে চালক এবং কনডাক্টররা পাহাড়ে বাস নিয়ে গিয়েছেন, সেই চালকদের সংবর্ধনা জানাবে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থা। চলতি বছরেই কোচবিহারে এক অনুষ্ঠানে ওই বাস চালক-কর্মীদের হাতে সম্মানপত্র তুলে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে, ইতিমধ্যে শিলিগুড়ি, কোচবিহার এবং ডুয়ার্সের কয়েকটি ডিপোর ২০ জন চালক ও কর্মীদের ইতিমধ্যেই চিহ্নিত করা হয়েছে। সম্প্রতি পাহাড়ে বনধের সময়ে ওঁরা সরকারি নির্দেশ মেনে বাস নিয়ে পাহাড়ে গিয়েছিলেন বলে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ পরিবহণ সংস্থার বোর্ড মিটিঙে পাহাড়ে যাওয়া চালক-কর্মীদের সম্মান জানানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তাঁদের স্মারকপত্র দিয়ে সম্মান জানানোর পাশাপাশি আর্থিক পুরস্কার দেওয়া যায় কিনা তা নিয়েও ভাবনাচিন্তা চলছে বলে সংস্থার কর্তারা জানিয়েছেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী তথা সংস্থার চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, “পাহাড়ে যে সময়ে বনধ চলছিল, তখন রাজ্য সরকার বাস চলাচল স্বাভাবিক রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। সেই মত এনবিএসটিসির কর্মীদের বাস নিয়ে পাহাড়ে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। যাঁরা সেই নির্দেশ পালন করেছেন তাঁদের সংস্থার তরফে সম্মান জানানো হবে। কোচবিহারে গিয়ে এক অনুষ্ঠানে ওই চালক কর্মীদের হাতে সম্মানপত্র তুলে দেওয়া হবে।”
গত জুলাই মাসের শেষ থেকে পাহাড়ে বনধ, অবরোধ সহ ঘরের ভেতরে থাকবে জনতা এমন নানা কর্মসূচিতে জন জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। সে সময়ে পাহাড়ের যান চলাচল ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখতে দার্জিলিং থেকে শিলিগুড়িতে ৬ দফা বসা চালানো শুরু হয়। সম্মান জানানোর পাশাপাশি পরবর্তীতে তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টিও ভেবে দেখছে সংস্থার পরিচালন কর্তৃপক্ষ।
সংস্থার আয় বাড়াতে উত্তরবঙ্গ এবং কলকাতার বিভিন্ন ডিপোতে থাকা উদ্বৃত্ত জমির বাণিজ্যিক ব্যবহার বা বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আয় বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখন বাস চালিয়ে প্রতিমাসে প্রায় ৬ কোটি টাকা ক্ষতি হচ্ছে সংস্থার। তবে সংস্থার আর্থিক ক্ষতির কারণে বাম আমলের পরিচালনা ব্যবস্থাকেই দায়ী করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মন্ত্রী গৌতমবাবু। তাঁর অভিযোগ, সংস্থায় অতিরিক্ত কর্মী নিয়োগ করা বা বাসগুলিতে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ লাগানোর জন্য ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। বাম আমলে সংস্থার কাজকর্ম খতিয়ে দেখতে অডিট করা হচ্ছে বলে চেয়ারম্যান জানিয়েছেন। গৌতমবাবু বলেন, “বাম আমলে যথাযথ ভাবে সংস্থার পরিচালনা করা হয়নি। সে কারণেই ব্যয়ভার ক্রমশ বেড়ে গিয়েছে। সে কারণেও ক্ষতি বেড়ে চলেছে। সবকিছু খতিয়ে দেখতে পরীক্ষা হবে।” পরিষেবা বাড়াতে প্রতিমাসে পাশাপাশি সংস্থার থেকে কেন্দ্রীয় নগরায়ণ প্রকল্পে ১০০টি বাস চেয়েছে কর্তৃপক্ষ। শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ির মধ্যে ওই বাসগুলি চালানো হবে। ওই বাস চলাচলের তদারকি করতে পৃথক একটি কমিটিও গঠন করা হবে বলে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতমবাবু জানিয়েছেন। বাম আমলের পরিচালনা নিয়ে অভিযোগ স্বভাবতই মানতে চাননি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত নেতারা। সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদক তথা বাম আমলে সংস্থার বোর্ড সদস্য তারিণী রায় বলেন, “আগের সরকারের আমলে উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার হাল এত খারাপ ছিল না। এখনকার দায়িত্বপ্রাপ্তরা নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে বাম আমলের দিকেই অভিযোগের আঙ্গুল তোলেন। শুধু পরিবহণ সংস্থাই নয়, সব ক্ষেত্রেই এই হাল।” |