|
|
|
|
রাজু আছেন না নেই, ধোঁয়াশায় পঙ্গু দফতর
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
তিনি থেকেও নেই! নাকি না থেকেও আছেন! সংশয় পূর্ণমাত্রায়। যার জেরে কার্যত দিশাহীন গোটা মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক।
গোটা বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী এম এম পল্লম রাজু। পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য গঠন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে ইস্তফা দিয়েছেন মাসাধিক কাল আগে। কিন্তু তা এখনও গ্রহণ করেননি প্রধানমন্ত্রী। ফলে নিয়মমাফিক তিনি এখনও দফতরের দায়িত্বে। কিন্তু মন্ত্রকের গত এক মাস তিনি মন্ত্রকের ধারেকাছেও ঘেঁষেননি! ফলে তিনি মন্ত্রী রয়েছেন কি না, দফতরের সচিবেরাই মন্ত্রীর কাজের দায়িত্ব বুঝে নেবেন কি না, তার উত্তর পেতে মাথা কুটছে গোটা মন্ত্রক।
কিন্তু উত্তর? তা অধরাই।
ইস্তফার পরে গত কয়েক সপ্তাহ মন্ত্রী অনুপস্থিত থাকলেও পূর্বনির্ধারিত বৈঠকগুলি অন্তত নিয়মমাফিক হয়েছিল। কিন্তু আজ তা আর হল না। মন্ত্রীর অনুপস্থিতির কারণে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রকের সংখ্যালঘু সমাজের শিক্ষা ও উন্নয়ন সংক্রান্ত বৈঠক বাতিল করে দিতে বাধ্য হন কর্তারা। সরকারি ভাবে অবশ্য বলা হয়েছে, বৈঠকের বিষয়বস্তু সেই অর্থে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। তাই দীপাবলির ঠিক আগে ওই বৈঠকে আসতে আগ্রহী ছিলেন না বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষা কর্তারা। তাই তা বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু মন্ত্রকের কর্তারা জানাচ্ছেন, এ ধরনের বৈঠকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর থাকা দরকার। কিন্তু তিনি আসবেন না বলেই জানিয়ে দিয়েছেন। তাই বাধ্য হয়ে ওই বৈঠক বাতিল করে দিতে হয়েছে।
এমনিতেই দ্বিতীয় ইউপিএ সরকারের মাঝপথে কপিল সিব্বলকে সরিয়ে দেওয়ায় ধাক্কা খায় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের কাজকর্ম। এখন এক মাস ধরে খোদ মন্ত্রীই অনুপস্থিত থাকায় কার্যত অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক। থমকে গিয়েছে রুটিন কাজও। দফতরের ফাইল সই করা নিয়েও শুরু হয়েছে চাপানউতোর। পরিস্থিতি দেখে দায়িত্ব নিতে চাইছেন না মন্ত্রকের আমলারাও।
মনমোহনের সিংহের মন্ত্রিসভা পৃথক তেলঙ্গানা রাজ্য গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরেই বিতর্কের সূত্রপাত। কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে প্রথমে ইস্তফা দেন কেন্দ্রীয় পর্যটনমন্ত্রী চিরঞ্জীবী। তার পরেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে তাঁর কাছে ইস্তফা দেন পল্লম রাজু। ইস্তফাপত্রে সীমান্ধ্রের ওই সাংসদ জানান, সরকারের ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা দিচ্ছেন। তার পরে প্রায় চার সপ্তাহ কেটে যাওয়ার মুখে। এখনও সেই ইস্তফা গ্রহণ করেননি প্রধানমন্ত্রী। ফলে নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রী রয়েছেন পল্লম রাজু। কিন্তু মন্ত্রক সংক্রান্ত কোনও কাজেই তিনি মতামত দিচ্ছেন না বা উপস্থিত থাকছেন না।
এ ধরনের ঘটনা অবশ্য আজই প্রথম নয়। চলতি মাসের শুরুতে সেন্ট্রাল অ্যাডভাইসরি বোর্ড অব এডুকেশন (ক্যাব)-র বৈঠকেও অনুপস্থিত ছিলেন পল্লম রাজু। ফলে সে দিন বৈঠকের শেষে একাধিক বিষয়ে চূড়ান্ত কোনও সিদ্ধান্তে উপনীত হতে ব্যর্থ হয় মন্ত্রক। এর পর চলতি মাসের মাঝামাঝি ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অব টেকনোলজি (এনআইটি)-র মতো প্রতিষ্ঠানগুলিতে বি টেক ও এম টেক কোর্সে টিউশন ফি বৃদ্ধি করা হবে কি না, তা নিয়ে বৈঠকে বসেন মন্ত্রক কর্তারা। ইতিমধ্যেই ওই বিষয়ে সবুজ সঙ্কেত দিয়েছে শিক্ষা নিয়ে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বৈঠকে উপস্থিত প্রায় সমস্ত এনআইটি অধিকর্তা ফি বাড়ানোর পক্ষেই রায় দেন। মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, “কিন্তু চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিনি অনুপস্থিত থাকায় এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব হয়নি। গোটা প্রক্রিয়াটি আটকে গিয়েছে।”
আর খোদ পল্লম রাজু কী বলছেন?
তাঁর সাফ কথা, “কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা যত দিন না তেলঙ্গানা নিয়ে সিদ্ধান্ত বাতিল করছে, তত দিন মন্ত্রকের কাজে যোগ দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই।”
পরিস্থিতি যা, তাতে বল এখন প্রধানমন্ত্রীর কোর্টে। তেলঙ্গানা প্রশ্নে যে ভাবে সরকার এগিয়ে গিয়েছে, তাতে মনমোহন-সনিয়া গাঁধীর পক্ষে আর ফেরার এখন কোনও পথ খোলা নেই বলে মানছেন সরকারের শীর্ষ কর্তারাই। ফলে পল্লম রাজুর পক্ষেও ইস্তফা ফেরানোর কথা ভাবা সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন মন্ত্রক কর্তারা। এখন সরকারের মেয়াদ শেষ হতে ছয় মাস বাকি। এই অবস্থায় নতুন কোনও মুখ মন্ত্রকের দায়িত্ব নেন, না খোদ প্রধানমন্ত্রীই শেষ পর্যন্ত সেই দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নেন, তাই এখন দেখার।
|
|
|
|
|
|