কল্যাণেশ্বরীর শ্যামারূপা পুজো সাবেক রীতিতেই
পেরিয়ে গিয়েছে ১২০০ বছর। পাল্টেছে পুজোর আবহও। জৌলুস বেড়েছে বই কমেনি। প্রদীপের আবছা আলোর বদলে দেবীর আরাধনা হয় এখন বিজলি বাতির ঝলমলে আলোয়। পোড়ামাটির ইঁট বসানো এবড়ো খেবড়ো মেঝের বদলে মন্দির প্রাঙ্গণে শোভা পাচ্ছে মার্বেলের মেঝে। মন্দিরের সংকীর্ণ গর্ভগৃহে বাতানুকুল ঠাণ্ডা হাওয়া। পারিপার্শ্বিক বদল হলেও পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমান্তে অবস্থিত কল্যাণেশ্বরী মন্দিরে এখনও পুরনো রীতি মেনেই পুজো হয়ে চলেছে, এমনটাই দাবি মন্দিরের প্রধান সেবাইতের।
আদি কল্যাণেশ্বরী মন্দির। —নিজস্ব চিত্র।
মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কল্যাণেশ্বরী মন্দিরে কোনও মূর্তি পুজো হয় না। রয়েছে একটি বড় পাথর। তার তলায় আছে একটি অদৃশ্য গুহা। পাথরের এক কোনায় একটি গর্ত রয়েছে। মন্দিরে আসা ভক্তদের বিশ্বাস, ওই গর্ত ছুঁয়ে দেখলেই তাঁরা দেবীর আশীর্বাদ লাভ করবেন। পূর্ণ হবে সব মনস্কামনা। এই বিশ্বাসেই বিগত ১২০০ বছর ধরে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে মন্দির প্রাঙ্গণে আসছেন ভক্তরা। মন্দিরের প্রধান সেবাইত দিলীপ দেওঘড়িয়া জানিয়েছেন, বছরের অন্য সময় সন্ধ্যা ৬টায় বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরের দরজা। কিন্তু কালীপুজোর সময় সারা রাত পুণ্যার্থীদের জন্য খোলা থাকে মন্দিরের দরজা। দিলীপবাবু আরও জানান, গত ১২০০ বছর ধরে মন্দিরে পুজো আসে পুরুলিয়ার কাশি রাজ পরিবার থেকে। দেবীর শাঁখা আসে দামোদরের শাঁখারি পরিবার থেকে।
বর্তমানে এখানে হয় পুজো।
মন্দিরের প্রাচীন তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, খ্রিস্টিয় দ্বাদশ শতাব্দীতে কাপালিক দেবদাস চট্টোপাধ্যায় কালীর সাধনা করার জন্য এখানে এসেছিলেন। সেই সময় ছিল ঘন জঙ্গল। শোনা যায়, রাজা বল্লাল সেন ছিলেন এই কাপালিকের ভক্ত। কাপালিকের নির্দেশ মেনে বল্লাল সেন অধুনা শ্রবনপুরে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। সেখানেই বহু বছর আরাধনা হয় দেবী শ্যামারূপার। জনশ্রুতি, একদিন কল্যাণেশ্বরীর কাছে প্রায় ফুট একটি গভীর গর্তে দেবী আশ্রয় নেন। তখন থেকেই দেবী ওই জায়গাতেই পূজিতা হচ্ছেন। এলাকাবাসীর বিশ্বাস, শ্রবনপুরের ওই মন্দিরের আশপাশে বসতি গড়ে উঠতে শুরু করে। কোলাহলে রুষ্ট হন দেবী। তাই নিরিবিলি জায়গা কল্যাণেশ্বরীতে উঠে আসেন তিনি। এখানে দেবী একসময় পথচলতি এক শাঁখারিকে ডেকে নিজে দর্শন দেন, তাঁর কাছ থেকে শাঁখা পরেন। পরে সেখানেও একটি মন্দির বানিয়ে দেওয়া হয়।
অতীতে বহু অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে কল্যাণেশ্বরী মন্দিরে, এমনটাই দাবি দিলীপবাবুর। প্রচুর দর্শনার্থী সে সব ঘটনা শোনার জন্য ভিড় করেন মন্দির প্রাঙ্গণে। তবে দিলীপবাবু জানান, শ্যামারূপার আদি মন্দিরটি কুলটির কাছে শ্রবনপুরে। দিলীপবাবুর কথার সূত্র ধরে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, একটি মন্দির নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। হাতে গোনা কয়েকজন পুণ্যার্থী এসেছেন। দিলীপবাবু জানান, এখানেও দেবীর পুজো হয়। কালীপুজোর দিনেও এখানে সারারাত পুজো হয়। হয় ছাগ বলিও।

—নিজস্ব চিত্র।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.