নির্ভয়া গ্রাম গড়বে বিশেষ দল
দিল্লির সেই ‘নির্ভয়া’র কথা মনে পড়ে? এ বার তাঁর লড়াকু মনোভাবের কথা মাথায় রেখে বাছাই কিছু এলাকাকে চিহ্নিত করে ‘নির্ভয়া গ্রাম’ গড়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ওই কাজে একযোগে সামিল কেন্দ্র ও রাজ্য। ইতিমধ্যেই দেশের ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন প্রতিরোধের জন্য গঠিত স্পেশাল টাস্ক ফোর্স ‘পাইলট প্রজেক্ট’ও হাতে নিয়েছে। প্রথম পর্বে মালদহ ও উত্তর দিনাজপুর, দুই জেলাকে বাছা হয়েছে। ইতিমধ্যেই টাস্ক ফোর্সের চেয়ারপার্সন শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী মালদহ ও উত্তর দিনাজপুরে গিয়ে জেলা পুলিশ-প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে গ্রাম বাছাইয়ের কাজও শুরু করেছেন। মঙ্গল ও বুধবার দুই জেলায় বৈঠকও করেছেন তিনি। সব কিছু ঠিক থাকলে নভেম্বরের মধ্যে ‘নির্ভয়া’ গ্রাম গড়ার কাজ পুরোদমে শুরু হয়ে যাবে বলে শ্রীরূপাদেবী জানান। তিনি বলেন, “পুলিশের প্রতি এখনও সাধারণ মানুষের আস্থা নেই। এখনও মেয়েরা থানায় যেতে ভয় পায়। মেয়েরা এখনও নির্ভয়ে চলাফেরা করতে পারে না। সাধারণ মানুষের সঙ্গে পুলিশ ও বিএসএফের সম্পর্কে অনেক ফাঁকফোকর রয়েছে। সে জন্য আমরা প্রতিটি গ্রামে গোষ্ঠী গড়ব। রাজ্যে তো বটেই, দেশেও এই প্রথম নির্ভয়া গ্রাম গড়ার কাজ শুরু হল।”
তিনি জানান, প্রস্তাবিত গোষ্ঠীর অন্যতম লক্ষ্য, নারী নির্যাতন, পাচার, ধর্ষণ, বাল্য বিবাহ রোখা। ‘নির্ভয়া’ নামের গোষ্ঠীর সদস্য হবেন ৩০ জন করে। অর্ধেক হবেন জনপ্রতিনিধি, সরকারি সংস্থার লোকজন। বাকিরা গ্রামের সাধারণ মানুষ, ছাত্রছাত্রী ও অনগ্রসর সম্প্রদায় প্রতিনিধি হবেন। ওই সদস্যরা পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে সেতুবন্ধনের কাজ করবেন। আপত্তিকর ঘটনা ঘটলে পুলিশ-প্রশাসন দ্রুত খবর পাবে। ওই গোষ্ঠীর সদস্যরা সক্রিয় থাকায় দুষ্কৃতীরা অপকর্ম করার কথা দুবার ভাবতে বাধ্য হবে।
বাসিন্দাদের সঙ্গে শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, প্রথম পর্যায়ে মালদহের ১১টি থানার ৫৮টি গ্রামকে চিহ্নিত করা হয়েছে। সাত দিন ধরে জেলার ৫৮ টি গ্রাম ঘুরে ‘নির্ভয়া’ গোষ্ঠী গড়ে তোলার কাজ হয়েছে। এর মধ্যে হবিবপুর ব্লকের ভারত বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী ২৪টি গ্রাম রয়েছে। শ্রীরূপাদেবী গাজল থানার দৃষ্টান্ত দিতে গিয়ে জানান, ওই থানার আওতায় ৮৪৭টি গ্রাম রয়েছে। সেখানে গাজল থানায় সব মিলিয়ে ৪৫ জন পুলিশ কর্মী রয়েছে। ৪৫ জন পুলিশকর্মী দিয়ে কখনওই এতগুলি গ্রামের আইনশৃঙ্খলা ঠিকমতো দেখা সম্ভব নয়। এত কম সংখ্যক পুলিশ নিয়ে এতবড় এলাকায় নারী পাচার, বাল্যবিবাহের মতো নারী নিযার্তনের মতো ঘটনা আগে থেকে আটকানো সম্ভব নয়। সেই কারনে নির্ভয়া গ্রাম গড়ে সেই গ্রামে পুলিশ, জনপ্রতিনিধি, সরকারি আধিকারিকদের পাশাপাশি সাধারণ গ্রামবাসী, মহিলা, ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ‘নির্ভয়া গোষ্ঠী’ গড়ে তোলা গেলে গ্রামে গ্রামে অপরাধ কমে যাবে বলে তিনি দাবি করেন।
মালদহের পুলিশ সুপার কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “শুধু জেলাতেই নয়, সারা রাজ্যে নারী নির্যাতনের অপরাধ বাড়ছে। সে জন্য বিশেষ টাস্ক ফোর্স-এর নির্ভয়া গ্রাম গড়ে তোলার প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে জেলা পুলিশ এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।” এক সপ্তাহের মধ্যেই জেলার ৫৮ টি গ্রামে নির্ভয়া গোষ্ঠী গঠন করা হবে। নির্ভয়া গ্রামের নির্ভয় গোষ্ঠীর কারা সদস্য হবেন? জেলা পুলিশ ও বিশেষ টাস্ক ফোর্স সূত্রে জানা গিয়েছে, ৩০ জনের নির্ভয়া গোষ্ঠীর ৫০ শতাংশ সদস্য হবে পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধি, ব্লক, স্বাস্থ্যকেন্দ্র-সহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিনিধি। বাকি ৫০ শতাংশ সদস্যের মধ্য রাখা হবে সংশ্লিষ্ট গ্রামের যুবক ,যুবতী, ছাত্র ছাত্রী, ভূমিহীন কৃষক, সংখ্যালঘু, তপশিলি জাতি উপজাতির প্রতিনিধিদের। শ্রীরূপাদেবী বলেন, নির্ভয়া গোষ্ঠী গড়ে তোলার পর প্রতি মাসে গোষ্ঠী কখনও থানায়, কখনও ব্লকে, কখনও গ্রামে বৈঠক করবে। নির্ভয়া গোষ্ঠীর সদস্যরা পুলিশকে খবর দেবে ওখানে বাল্যবিবাহ হচ্ছে, ওখানে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে নারী পাচার হচ্ছে। সদস্যদের কাছ থেকে পুলিশ খবর পাওয়ার পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে বাল্য বিবাহ থেকে শুরু করে নারীর উপর অত্যাচার রুখতে পারবে। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক পাসাং নরবু ভুটিয়া ও পুলিশ সুপার অখিলেশ চতুর্বেদীও ওই প্রকল্পের ব্যাপারে কাজ শুরু করেছেন। তাঁরা বলেন, “উত্তর দিনাজপুরের গ্রাম বাছাই করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
নির্ভয়া গ্রামে গড়ে তোলার উদ্যোগে খুশী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জাহানারা খাতুন, বৈদ্যপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শিপ্রা বসু। দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান বলেন, “গ্রামে নির্ভয়ে চলাফেরা নিশ্চিত করতে হবে। আগে মহিলা পুলিশের কাছে সরাসরি গিয়ে অভিযোগ জানাতে ভয় পেত। এখন গ্রামে নির্ভয়া গোষ্ঠী হলে গ্রামে মহিলাদের উপর অত্যাচার অনেক কমে যাবে। আমরা চাইছি দ্রুত নির্ভয়া গ্রাম গড়ে উঠুক।”





First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.