দু’বেলা ভাত জোটাতেই হিমশিম অবস্থা। গাঁয়ের অনেকের মতোই তাঁরা নিতান্ত প্রান্তিক চাষি। রুখা জমিতে বিশেষ চাষ হয় না বলে দিনমজুরিও করতে হয়। এমনই চারজন চাষি নিজেদের জমি থেকে কিছুটা গ্রামে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ার জন্য তুলে দিলেন স্বাস্থ্য দফতরকে।
বুধবার পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর সাব রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে স্থানীয় ডুমরাকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা দুই ভাই নিতাই বাউরি, গৌর বাউরি এবং তাঁদের আত্মীয় বানেশ্বর বাউরি ও কাশীনাথ বাউরি নিজেদের ছয় ডেসিমেল (চারকাঠা) জমি দানপত্র করে দিলেন রঘুনাথপুর ১ ব্লক মেডিক্যাল অফিসারের নামে। প্রায় ছ’লক্ষ টাকা মূল্যের এই জমিদানের বিনিময়ে কোনও দাবিও জানালেন না তাঁরা। তাঁদের এই কাজে অবাক অনেকেই। বিস্মিত রঘুনাথপুর ১ ব্লকের বিএমওএইচ লিধুরাম হাঁসদা বলেন, “রঘুনাথপুর ১ ব্লকে পাঁচটি উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র নির্মাণের জন্য টাকা এলেও শুধুমাত্র জমির অভাবে কাজ আটকে রয়েছে। সেখানে বিপিএল তালিকভূক্ত ওই চারজন চাষি নজির সৃষ্টি করলেন।” |
বাবুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের ডুমরাকুড়ি গ্রাম থেকে নিকটবর্তী প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১০ কিলোমিটার দূরে। রঘুনাথপুর মহকুমা স্বাস্থ্যকেন্দ্র আরও দূরে। এলাকাবাসীর তাই ভরসা ডুমরাকুড়ির উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কিন্তু এতদিন তা চলছে এক গ্রামবাসীর কাঁচাবাড়ির দাওয়ায়। ঝড়-বৃষ্টিতে তাই অনেক সময়েই বন্ধ হয়ে যায় খড়ের ছাউনির এই উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র। তা ছাড়া গ্রামের প্রসূতি-সহ মহিলাদের ওই পরিবেশে চিকিৎসা করাতে যাওয়া নিয়ে অস্বস্থিও ছিল। এ দিকে টাকা ফেরত যাওয়ার আশঙ্কায় দিশেহারা ব্লক স্বাস্থ্য দফতর। স্বাস্থ্যকর্মীরা যখন গ্রামের আর পাঁচজনের কাছে জমির সমস্যা নিয়ে আলোচনা করছিলেন, তখনই বিষয়টি জানতে পারেন ওই চারজন। ঠিক করেন গ্রামে ঢোকার রাস্তার পাশে পড়ে থাকা ডাঙা জমিটাই তাঁরা পাকা উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ার জন্য দান করবেন।
কিন্তু সংসারেও যে অভাব বারোমাস। জমির দামও তো কম নয়। সে সব কি তাঁরা ভাবেননি?
অনেক প্রশ্নের তাঁদের জবাব, “কাঁচাবাড়ির দাওয়ায় মেয়ে-বউ ও বাচ্চাদের চিকিৎসার খুব সমস্যা হচ্ছিল। অনেক দিন ধরেই ভাবতাম কেন আমাদের গ্রামে পাকা স্বাস্থ্যকেন্দ্র হয় না! তাই টাকা এসে শুধু জমির অভাবে স্বাস্থ্যকেন্দ্র হচ্ছে না শুনে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ওই জমি দানের সিদ্ধান্ত নিই। এ বার সবাই গ্রামেই অনেকখানি চিকিৎসা করাতে পারব।” দানপত্রে সই করার সময়েও তাঁদের ভাবলেশহীন মুখ দেখে বিএমওএইচ বলেন, “পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ওই গ্রামে গিয়ে জমির সমস্যার কথা বলেছিলাম। তখনই ওই চারজন প্রাথমিক সম্মতি দিয়েছিলেন। কিন্তু না আঁচিয়ে ঠিক ভরসা করা যাচ্ছিল না। অতীত অভিজ্ঞতায় দেখেছি জমি দেওয়ার আগে চাকরি-সহ একগাদা শর্ত জুড়ে দেন জমি মালিকরা। কিন্তু কিছুদিন আগে ওঁরা যখন দেখা করে বিনা শর্তে দ্রুত জমিটি রেজিস্ট্রি করাতে বললেন আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।” তিনি জানান, ওঁদের দানের মর্যাদা রাখতে ওই জমিতে দ্রুত স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়তে চলেছে স্বাস্থ্য দফতর। |