রাজ্য জুড়ে বেড়ে চলা নারী নিগ্রহের ঘটনার প্রেক্ষিতে মেয়েদের ‘ভদ্র, সভ্য’ পোশাক পরার পরামর্শ দিয়ে এ বার বিতর্কে জড়ালেন প্রাক্তন মন্ত্রী আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা। দলের বিধায়কের এমন মত পত্রপাঠ খারিজ করে দিয়ে বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র অবশ্য জানান, নারীদের উপরে অপরাধের সঙ্গে পোশাকের সম্পর্ক আছে বলে মনে করেন না। কিন্তু তা সত্ত্বেও নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে, রাজনীতিকেরা পোশাক-বিধি নিয়ে পরামর্শ দেবেন কেন!
মহিলাদের সম্মান ও অধিকার রক্ষার দাবিতে বুধবার রানি রাসমনি অ্যাভিনিউয়ে মহিলা সমাবেশের আয়োজন করেছিল জামায়তে ইসলামি হিন্দ। আমন্ত্রিত বক্তা হিসাবে রাজ্যে শ্লীলতাহানি, ধর্ষণের মতো ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে সিপিএমের বিধায়ক রেজ্জাকের পরামর্শ, মহিলারা ভদ্র, সভ্য পোশাক পরুন। তাঁর কথায়, “জিন্স, টি-শার্ট নগ্নতার থেকেও খারাপ পোশাক! অভিভাবকের উচিত, তাঁদের মেয়েরা যাতে এই সব পোশাক না পরে, সে দিকে লক্ষ্য রাখা।” নিজের পরিবারের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, “আমার পরিবারে মেয়েরা আছে। তারা শিক্ষিত। উচ্চ পদে চাকরি করে। তার মানে এই নয় যে, তারা জিন্স, টি-শার্ট পরে ঘুরে বেড়াবে! আমি তাদের সালওয়ার-কামিজে আটকে রেখেছি!” প্রসঙ্গত, একটি ধর্ষণের পরে বারাসতের তৃণমূল বিধায়ক চিরঞ্জিৎ মেয়েদের পোশাক নিয়ে পরামর্শ দিয়েই বিতর্ক বাধিয়েছিলেন। |
রেজ্জাকের ভাবনার সমালোচনা এসেছে বিভিন্ন মহল থেকে। তাঁর ওই মন্তব্য নিয়ে প্রশ্নের জবাবে সূর্যবাবু প্রথমে বলেন, “রেজ্জাক কী বলেছেন, আমি দেখিনি বা শুনিনি। যে হেতু তিনি আমাদের সহকর্মী, জানলে তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হবে।” কিন্তু মহিলাদের উপরে অপরাধের ঘটনার সঙ্গে পোশাকের কি কোনও সম্পর্ক আছে? সূর্যবাবুর জবাব, “আমরা তা মনে করি না। আগেও কেউ যখন এই রকম বলেছিলেন, প্রতিবাদ করেছি।”
তাঁর দল ওই মতামতের দায় না নিলেও সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে প্রশ্ন উঠেছে, রেজ্জাকের কথায় কি পুরুষতন্ত্রের চিরাচরিত মানসিকতাই ধরা পড়ছে? নাট্যকার সুমন মুখোপাধ্যায়ের মতে, “এটা তো মধ্যযুগীয় ব্যাপার! আমাদের সমাজে পুরুষতন্ত্র তো আছেই। কখনও কখনও ভাষায় সংশোধন আমরা করি। কিন্তু চেতনায় আমাদের সংশোধন হয়নি। এই রকম চলতে থাকলে আগামী দিনে তো বলা হবে, মেয়েরা রাস্তাতেও বেরোবে না!” নারী আন্দোলনের কর্মী শাশ্বতী ঘোষ বলেছেন, “রেজ্জাক তো হজেও গিয়েছেন। উনি আসলে ওঁর ইসলামি পরিচয়টাকেই বেশি করে তুলে ধরতে চাইছেন। আমি শুধু এইটুকুই বলছি, যে সব মহিলা নিগ্রহের শিকার হন, আদৌ তাঁদের পোশাক কি ছোট? বা তাঁরা কি জিন্স-টি শার্ট পরেছিলেন? সমীক্ষা করলেই উনি ওঁর প্রশ্নের জবাব পাবেন।” আর শিক্ষাবিদ মীরাতুন নাহারের বক্তব্য, “রেজ্জাক ব্যতিক্রম নন। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে অনেকেই এ রকম মনে করেন। কিন্তু ওঁরা কখনও পুরুষদের এ কথা বলেন না যে, মেয়েরা জিন্স-টি শার্ট পরলে তোমার কেন মাথা খারাপ হবে?”
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যও বলেন, “কামদুনির মেয়েটি কি অভদ্র পোশাক পরে বেরিয়েছিল? এই ধরনের কথা বলা মানে আসলে নারী স্বাধীনতার উপরেই হস্তক্ষেপ! আশা করি, মুখ্যমন্ত্রীও এর প্রতিবাদ করবেন।” তৃণমূলের তরফে কেউ প্রতিক্রিয়া দেননি। তবে দলের এক নেতা প্রশ্ন তুলছেন, “রেজ্জাক হয়তো বাড়াবাড়ি করেছেন। কিন্তু যে জায়গাটা ধরতে চেয়েছেন, সেটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো কি?” |