ফের খবরের শিরোনামে তিয়েন আন মেন স্কোয়ার।
১৯৮৯ সালে ছাত্র বিক্ষোভে কেঁপে উঠেছিল বেজিংয়ের এই এলাকা। আর এ বার সেই তিয়েন আন মেন স্কোয়ারই সাক্ষী থাকল আত্মঘাতী জঙ্গি হানার। চিনা পুলিশের দাবি, এই প্রথম সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটল এ দেশে।
গত সোমবার তিয়েন আন মেন স্কোয়ারের উত্তরে ‘ফরবিডেন সিটি’-র ফটকের সামনে একটি গাড়ি হঠাৎ করে প্রচণ্ড গতিতে এসে লাগোয়া ফুটপাথের উপর উঠে পড়ে। ধাক্কা দেয় পথচারীদের। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় চালক-সহ দুই যাত্রীর ও দু’জন পর্যটকের। আহত হন কমপক্ষে ৪০ জন। নিহত দুই পর্যটকের মধ্যে এক জন ফিলিপিন্সের নাগরিক।
সোমবারের সেই গাড়ি বিস্ফোরণে জড়িত সন্দেহে বুধবার পাঁচ সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করেছে বেজিং পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ঘটনায় নিহত তিন যাত্রী একই পরিবারের। পুলিশ জানিয়েছে, বিস্ফোরণে ব্যবহৃত গাড়িটির লাইসেন্স প্লেট দেখে অনুমান করা হচ্ছে সেটি আদতে শিনজাং প্রদেশের। নিহত তিন যাত্রীর নামের আদল দেখে পুলিশ নিশ্চিত, মৃতেরা সংঘ্যালঘু উইঘুর গোষ্ঠীরই সদস্য।
সোমবারের গাড়ি বিস্ফোরণ নিয়ে সরকারি তরফে এখনই কিছু না জানানো হলেও অসমর্থিত সূত্রের খবর, চিনের অশান্ত শিনজাং প্রদেশের পিশান কাউন্টি এবং শানশান কাউন্টির উইঘুর জঙ্গিরাই চক্রান্ত করে পুরো ঘটনাটি ঘটিয়েছে। সোমবার গাড়িটির ভিতরে ছিলেন যাঁরা, সেই তিন জনও আত্মঘাতী জঙ্গি বলেই সন্দেহ করছে বেজিং পুলিশ। তদন্তে গাড়ি চালকের নামও জানতে পেরেছে পুলিশ। উসমেন হাসান নামের ওই ব্যক্তি সে দিন তাঁর স্ত্রী ও মাকে নিয়ে গাড়িটিতে সওয়ার ছিলেন।
ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে ইতিমধ্যে পুলিশের হাতে এসেছে পেট্রোলের ব্যারেল, ছুরি, লোহার রড, একাধিক মৌলবাদী-চরমপন্থী পোস্টার। তার থেকেই অনুমান করা হচ্ছে সোমবারের ঘটনা নিঃসন্দেহে পূর্বপরিকল্পিত জঙ্গি হানা। পুলিশ জানিয়েছে, গাড়িটির মধ্যে পেট্রোল থাকার দরুনই ‘ফরবিডেন সিটি’-র দেওয়ালে ধাক্কা দেওয়ার পর আগুন ধরে যায় সেটিতে। ঘটনায় সন্দেহের তির উইঘুর গোষ্ঠীর দিকে থাকলেও বুধবার পর্যন্ত বিস্ফোরণের দায় স্বীকার করেনি কোনও জঙ্গি সংগঠন। নিরাপত্তার দিক থেকে বিচার করলে শিনজাং প্রদেশ চিনের অন্যতম স্পর্শকাতর এলাকা। একাধিক মধ্য এশীয় দেশের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে নিয়েছে এই অঞ্চল। গত কয়েক বছরের ইতিহাসে একের পর এক গোষ্ঠী সংঘর্ষে এক প্রকার বিধ্বস্ত গোটা শিনজাং প্রদেশ। স্থানীয় সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছে, সম্প্রতি জেহাদি সন্দেহে এই এলাকা থেকেই ১৩৯ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তা ছাড়া, শিনজাং প্রদেশে আল-কায়দার সঙ্গে যুক্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী ‘ইস্ট তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্ট’-এর জঙ্গিদের অনুপ্রবেশও বেশ কিছু দিন ধরেই ভাবাচ্ছে চিনা পুলিশকে।
সোমবারের ঘটনার পর শিনজাং প্রদেশে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী। জাতীয় সংবাদমাধ্যমের তরফে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, “আমরা বিশ্বাস করি ঘটনার পাল্টা জবাব দিতে ও দেশে অবৈধ জঙ্গি কার্যকলাপ রুখতে সক্ষম চিনা সরকার ও কমিউনিস্ট পার্টি।” |