প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছে ভবন। পাতা হয়েছে ১০টি শয্যা। এর মধ্যে ৪টি পুরুষদের। বাকি ৬টি মহিলাদের। কথা ছিল এখানে চালু হবে অন্তর্বিভাগ। কিন্তু বছর আড়াই ধরে ভবন তৈরি হয়ে পড়ে থাকলেও তা আর হয়নি। চিত্রটি হাওড়ার বালির-জগাছা ব্লকের জগাছা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের।
একই ভাবে বছর দুই আগে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে তৈরি হয়েছে সাঁকরাইলের রঘুদেববাটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের ধুলাসিমলা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নতুন ভবন। তৈরি হওয়ার পরে এই দু’টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেও পাতা হয়েছিল ১০টি করে শয্যা। অন্তর্বিভাগ চালু করার কথা ছিল এখানেও।
এতদিন পরে এই তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু করতে চলেছে হাওড়া জেলা স্বাস্থ্য দফতর। দফতর সূত্রের খবর, চিকিত্সক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবেই এত দিন তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অন্তর্বিভাগ চালু করা যায়নি। জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক কিশলয় দত্ত বলেন, “তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেই চিকিত্সক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। খুব শীঘ্র এগুলি চালু হয়ে যাবে।” তবে সমস্যা এখানেই মিটছে না।
জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে ২০০৭ সালে হাওড়ার ২৯টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে উন্নীত করে ১০ শয্যার অন্তর্বিভাগ চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেগুলির ভবন তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। একেকটি ভবন তৈরিতে খরচ হয়েছে গড়ে ৫০ লক্ষ টাকা করে। জগাছার মতো কোথাও আবার লেগেছে একটু বেশি টাকা। বেশিরভাগ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রেরই ভবন তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। পাতা হয়েছে শয্যা। কিন্তু সেগুলি কবে চালু হবে সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা। পাঁচলার দেউলপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন তৈরি হয়ে পড়ে রয়েছে প্রায় দু’বছর ধরে। এখানেও পাতা হয়েছে ১০টি শয্যা। কিন্তু এখনও এখানে অন্তর্বিভাগ চালু না-হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা তথা জেলা পরিষদের প্রাক্তন সদস্য মোহিত ঘাঁটি। তিনি বলেন, “জেলা পরিষদের সদস্য থাকাকালীন আমি এই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উন্নীতকরণের কাজের তত্ত্বাবধান করেছিলাম। কিন্তু ভবনটিই হয়েছে। আসল কাজ, অর্থাত্ অন্তর্বিভাগটিই এখনও পর্যন্ত চালু হল না। আমরা খুবই হতাশ।” একই অবস্থা ডোমজুড়ের মাজু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, জগত্বল্লভপুরের মাজু প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, উদয়নারায়ণপুরের হরিশপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের। ঝাঁ-চকচকে ভবন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি। শয্যা পাতা হয়ে গেলেও চালু আছে শুধুমাত্র বর্হিবিভাগ। ২৯টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলা পরিষদকে। জেলা পরিষদ সূত্রের খবর, বেশিরভাগ প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবন তৈরির কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। সেগুলি জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে হস্তান্তর করে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলিও একই ভাবে জেলা স্বাস্থ্য দফতরকে হস্তান্তর করে দেওয়া হবে। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, মূলত চিকিত্সক, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীর অভাবেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে অন্তর্বিভাগ চালু করা যায়নি। জেলার ভারপ্রাপ্ত মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দাবি, পর্যায়ক্রমে বাকি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিও চালু করা হবে। তিনি বলেন, “প্রথম পর্যায়ে তিনটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু হচ্ছে। এর পরেই দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও কয়েকটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চালু করে দেওয়া হবে। এর জন্য চিকিত্সক ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়াও খুব শীঘ্রই শুরু করা হবে।” |