কৃষ্ণনগর পুরসভায় শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পত্র জমা দিল কংগ্রেস। তবে ২৪ আসনের এই পুরসভায় পাঁচটি আসনে তারা প্রার্থী দিতে পারেনি। কিন্তু কংগ্রেসের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন মনোরমা লাহা। তিনি সম্প্রতি দলের অন্য ১৩ কাউন্সিলরের সঙ্গে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন। তবে এ বার তৃণমূল তাঁকে পুরভোটে টিকিট দেয়নি। তিনি কংগ্রেসে ফিরে এসেছেন। তৃণমূল কাউন্সিলর দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রূপা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও টিকিট দিয়েছে কংগ্রেস। দেবাশিসবাবুকেও এ বার তৃণমূল টিকিট দেয়নি। তাঁর বক্তব্য, “তৃণমূল আমাকে অপমান করেছে।” তবে কংগ্রেস পুরপ্রধান অসীম সাহার বিরুদ্ধে কোনও প্রার্থী দেয়নি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের বক্তব্য, “দেবাশিসবাবুর ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়ে যাওয়ায় তাঁকে টিকিট দেওয়া হয়নি। তাঁর স্ত্রীরও কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই বলে তাঁকেও প্রার্থী করা হয়নি।”
জন্মলগ্ন থেকেই কৃষ্ণনগর পুরসভা কংগ্রেসের অধীন। কিন্তু মাত্র দিন পনেরো আগে ১৫ অক্টোবর পুরপ্রধান অসীমবাবুর নেতৃত্বে কংগ্রেসের ১৪ কাউন্সিলর দলত্যাগ করে তৃণমূলে যোগ দেন। পুরসভার ক্ষমতারও রাতারাতি হস্তান্তর হয়ে যায়। পুরভোটের মুখে এই ঘটনায় রীতিমতো অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ে শহরের কংগ্রেস নেতৃত্ব। দলের এক জেলা স্তরের নেতার কথায়, “পুরসভায় কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের প্রায় সকলেই তৃণমূলে চলে গিয়েছেন। শহরের কংগ্রেস নেতৃত্বেও তাই ধস নেমেছে। এই অবস্থায় দল রীতিমতো অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়েছে। প্রার্থী খুঁজে পাওয়াই খুব শক্ত হয়ে পড়েছিল।” শহর জুড়ে তাই জল্পনা শুরু হয়, কংগ্রেস এ বার পুরভোটে আদৌ প্রার্থী দিতে পারবে কি না, তাই নিয়েই। কংগ্রেস কর্মীদের মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছিল, শেষ অব্দি খুব কম আসনেই প্রার্থী দিতে পারবে তাঁদের দল।
পরিস্থিতি সামাল দিতে শুক্রবার কৃষ্ণনগরে দলীয় কর্মীদের নিয়ে বৈঠক করেন জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর সিংহ এবং এআইসিসি-র সম্পাদক সাকিল আহমেদ খান। তারপরেই শহরের কংগ্রেস কর্মীরা পুরভোট নিয়ে উঠেপড়ে নামেন। মঙ্গলবার পুরসভার সিংহভাগ আসনেই প্রার্থী দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সেক্ষেত্রে সরকারি ভাবে কংগ্রেস বলছে তৃণমূলের ভয়েই তারা বাকি আসনগুলিতে প্রার্থী দিতে পারেনি। জেলা কংগ্রেসের সাংগঠনিক সভাপতি সর্বদর্শন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “২৪টি আসনেই আমরা প্রার্থী দিতে পারতাম। কিন্তু তৃণমূলের ভয় ও চাপের জন্যই শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হল না। কিছু আসনে যাঁদের প্রার্থী হতে বলা হয়েছিল, তাঁরা ভয়ে পিছিয়ে আসেন।” গৌরীবাবুর অবশ্য দাবি, “যে দলকে অনুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে খুঁজে বেড়াতে হয়, তাঁদের কোনও কথারই গুরুত্ব দেওয়ার অর্থ হয় না।”
শহরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডে গৌরীশঙ্করবাবুর ছেলে অয়ন দত্তের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন কাউন্সিলর তুষারকান্তি মুখোপাধ্যায়। ২০০৩ সালে পুরভোটে নির্দল তুষারবাবুর কাছে পরাজিত হয়েছিলেন তখন কংগ্রেসের প্রার্থী গৌরীশঙ্করবাবু। তবে ২০০৮ সালে ফের তাঁরা মুখোমুখি হওয়ার পরে তৃণমূল প্রার্থী গৌরীশঙ্করবাবুর বিরুদ্ধে শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন সে বার কংগ্রেস প্রার্থী তুষারবাবু। সে বারে জয়ী হন গৌরীশঙ্করবাবুই।
|