|
|
|
|
শহরে নিখোঁজ কিশোরী, সেতুতে মিলল সাইকেল
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর
|
রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে মেদিনীপুরের শহরের নবম শ্রেণির এক ছাত্রী। তার মায়ের বক্তব্য, স্কুল থেকে ফিরে গান শোনার জন্য ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়ায় তিনি বকেছিলেন। সামান্য মারধরও করেন। তারপরই সোমবার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ওই কিশোরী। মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তার খোঁজ মেলেনি। তবে এ দিন দুপুরে কংসাবতী রেলসেতুর কাছ থেকে ওই কিশোরীর সাইকেল পাওয়া গিয়েছে। সেতুর উপরে মিলেছে তার জুতো ও চাদর। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, “ঠিক কী ঘটেছে বোঝা যাচ্ছে না। মেয়েটির খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।”
|
মেয়ের ছবি হাতে নিয়ে কিশোরীর মা। |
নিখোঁজ ছাত্রীর নাম মোনালিসা অধিকারী। বয়স ১৪ বছর। মোনালিসার মা নমিতা বক্সী অধিকারী মেদিনীপুরের সরকারি বালিকা হোমের স্কুলে শিক্ষকতা করেন। হোমের কোয়ার্টারেই মেয়েকে নিয়ে থাকেন তিনি। নমিতাদেবীর স্বামী তরুণকুমার অধিকারী রেলে চাকরি করেন। তাঁদের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনায়। মোনালিসা মেদিনীপুর শহরের ডিএভি স্কুলে পড়ে। সোমবার সকালেও সে স্কুলে গিয়েছিল। দুপুরে বাড়ি ফেরে। নমিতাদেবী বলেন, “স্নান না করেই ও ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়েছিল। গান শুনছিল। তাই বকাবকি করি। পড়তে বসতে বলি। রাগের মাথায় চড়ও মারি।” বিকেলে গৃহশিক্ষক আসার পর ফের বকাঝকা শুরু হয়। নমিতাদেবীর কথায়, “গৃহশিক্ষককে বলি, মেয়েকে পড়ছে না। শুধু ল্যাপটপে গান শুনছে। তখনও ওকে বকি। কিন্তু কার জন্য ও যে আমাকে না বলে চলে যাবে ভাবিনি।”
সন্ধ্যার আগেই গৃহশিক্ষক চলে যান। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ নমিতাদেবী যখন অন্য ঘরে ছিলেন, তখন না বলে নিজের সাইকেল নিয়ে কোয়ার্টার থেকে বেরিয়ে যায় মোনালিসা। কিছুক্ষণ পরে নমিতাদেবী দেখেন, মেয়ে নেই। খোঁজ শুরু হয়। রাত ৯টা নাগাদ হোম সুপার ভারতী ঘোষকে নিয়ে মেদিনীপুর কোতয়ালি থানায় আসেন নমিতাদেবী। নিখোঁজ ডায়েরি করেন। মঙ্গলবার সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) অবধেশ পাঠকের সঙ্গেও দেখা করেন নমিতাদেবী। আর্জি জানান, মেয়ের খোঁজে পুলিশ যেন তত্পর হয়।
|
রেল সেতুর কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া নিখোঁজ কিশোরীর সাইকেল।
|
মঙ্গলবার দুপুরে নমিতাদেবীকে সঙ্গে নিয়ে মোনালিসার খোঁজ শুরু করে পুলিশ। দুপুরে কংসাবতী নদীর রেল সেতুর কাছে মোনালিসার সাইকেল পাওয়া যায়। পরে সেতু থেকে পাওয়া যায় তার জুতো এবং চাদর। এ দিন সকালে মেদিনীপুরে এসেছেন মোনালিসার বাবা তরুণবাবু। তিনিও রেলসেতুর কাছে যান। স্থানীয়দের থেকে পুলিশ জানতে পেরেছে, সোমবার রাত থেকে সাইকেলটি ওখানে ছিল।
নমিতাদেবী ও তরুণবাবুর ধারণা, অভিমানে মেয়ে আত্মহত্যা করতে পারে। না হলে নদীর কাছে আসবে কেন। প্রাথমিক তদন্তে একই অনুমান পুলিশেরও। নদীতে ডুবুরি নামানোর জন্য পুলিশের কাছে আর্জি জানিয়েছেন নমিতাদেবী। একই আবেদন নিয়ে মহকুমাশাসক (সদর) অমিতাভ দত্তর সঙ্গে যোগাযোগ করেন হোম সুপার ভারতীদেবীও। পুলিশ সূত্রে খবর, ডুবুরি নামানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। হোম সুপার ভারতীদেবী বলেন, “মোনালিসা শান্ত স্বভাবের মেয়ে। কারও সঙ্গে বেশি কথা বলত না। আমাদের কারওরই মন ভাল নেই।”
এ দিন পুলিশ যখন নজরদারি চালাচ্ছে, তখন নদীর পাশে বসেছিলেন নমিতাদেবী। বলছিলেন, “মেয়ের ভালর জন্যই বকেছিলাম। ও বুঝল না। আমাকে না- বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল।” মায়ের চোখে তখন জল। |
ছবি: রামপ্রসাদ সাউ। |
|
|
|
|
|