মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কাজে গতি পশ্চিম মেদিনীপুরে
ঙ্গলমহলের জেলা পশ্চিম মেদিনীপুরের উন্নয়নে গোড়া থেকেই বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজে বারবার এসেছেন। নানা উন্নয়ন প্রকল্প ঘোষণা করেছেন। শুনেছেন স্থানীয় মানুষের দাবিদাওয়া। সেই মতো জেলা প্রশাসনকে একের পর এক নির্দেশও দিয়েছেন। আর তার ঠেলায় প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরের কাজে নজরে পড়ার মতো গতি এসেছে।
ঠিক কী রকম গতি এসেছে?
দীর্ঘদিন ধরে সাতমা ডোমপাড়া আঠাঙ্গীর যে মানুষগুলি জাতিগত শংসাপত্র পাচ্ছিলেন, তাঁদের শংসাপত্র লেখার কাজ শেষ।
বাঁকড়া গ্রামের কুষ্ঠরোগী কল্পনা গিরি বা খাড়িয়া গ্রামের চলচ্ছক্তিহীন সুরেশচন্দ্র দে সরকারি সাহায্যের আশায় দিনের পর দিন প্রশাসনের দরজায় ঘুরেছেন। কেউ ফিরেও তাকাননি। বার তাঁদের জন্য কিছু একটা করতে তৎপর হয়েছে জেলা প্রশাসনের কর্তারাই !
যে শ্যামসুন্দরপুর ডোমপাড়ার উন্নয়নের দাবিতে উঠেছিল বারবার, কিন্তু কারও হেলদোল ছিল না, সেই ডোমপাড়ার উন্নয়নের ডিটেল প্রোজেক্ট রিপোর্টও তৈরি !
গত ১৬ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রী জলমগ্ন এলাকার হালহকিকত দেখতে জেলায় এসেছিলেন। দুর্গতদের সাহায্যার্থে নানা নির্দেশও দিয়েছিলেন। তার গুঁতোয় মুখ্যমন্ত্রী ফিরে যাওয়ার ১০ দিনের মধ্যেই সব কাজ শেষ ! প্রশাসনিক এক কর্তার স্বীকারোক্তি, “এটা ঠিক যে মুখ্যমন্ত্রীর চাপেই দিন -রাত এক করে কাজ করার ফলে এটা সম্ভব হয়েছে। এটাও ঠিক যে, এর জন্য ছুটি মিলছে না, একটু বেশি চাপ সামলাতে হচ্ছে।”

গোপীবল্লভপুরে বন্যার্তদের সঙ্গে কথা বলছেন মখ্যমন্ত্রী। —ফাইল চিত্র।
গোপীবল্লভপুরের জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনে আসা মুখ্যমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা নানা দাবিদাওয়া জানিয়েছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে সেই সব দাবি লিখে নিয়েছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। অনেকে আবার লিখিত আবেদনও জমা দিয়েছিলেন। দাবিদাওয়া সংবলিত ৬৭টি চিঠি জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারির হাতে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, “গাড়িতে বসেই অনেকগুলি চিঠি দেখে নিয়েছি। এগুলি দেখে ব্যবস্থা নেবেন।” যে চিঠিগুলি দেখতে পারেননি, সেগুলি মুখ্যমন্ত্রী নিয়ে এসেছিলেন। কী রয়েছে সেই সব চিঠিতে? প্রশাসন সূত্রে খবর, কেউ লিখেছেন, বিপিএল তালিকায় নাম নেই, কারও বাড়ি নেই, কারও প্রয়োজন পরিস্রুত পানীয় জলের। রাস্তা মেরামত, নিকাশি নালা সংস্কার, চিকিৎসায় সাহায্য, বার্ধক্যভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতার দাবি, এমনকী ত্রিপল চেয়েও আবেদন করা হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে।
মুখ্যমন্ত্রী নিজে যেহেতু এই সব দাবি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন, ফলে কাজ ফেলে রাখার উপায় নেই জেলা প্রশাসনের। সংশ্লিষ্ট দফতরকে কাজের কথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। পদক্ষেপও করা হচ্ছে দ্রুত। জেলার এক আধিকারিকের কথায়, “এক সঙ্গে এত চিঠি, সব খুঁটিয়ে পড়ে সংশ্লিষ্ট দফতরকে পাঠাতে হচ্ছে। না করে উপায় নেই। কী ব্যবস্থা নেওয়া হল সিএমও -তে (মুখ্যমন্ত্রীর অফিস ) জানাতে হচ্ছে যে।” যে আবেদনপত্রগুলি মুখ্যমন্ত্রী সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেগুলির ক্ষেত্রেও পদক্ষেপ করার নির্দেশ আসছে।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে কাজ করতে গিয়ে নানা অভিজ্ঞতাও হচ্ছে জেলা প্রশাসনের কর্তাদের। যেমন, গোপীবল্লভপুরের জলবিন্দি গ্রামের এক বাসিন্দা ত্রিপল চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এক আধিকারিক তদন্তে গিয়ে দেখেন, তাঁর বাড়িতে টালির ছাউনি। এবং বৃষ্টিতে তার কোনও ক্ষতি হয়নি। তাহলে ত্রিপল চেয়েছিলেন কেন? ওই ব্যক্তি তখন তদন্তকারী আধিকারিককে দেখান, গোয়ালঘরের ছাউনি ফুটো হয়ে জল পড়ছে। তদন্তকারী আধিকারিক একটু বিরক্তই হন। তাঁর কথায়, “একটা ত্রিপলের জন্য কেউ মুখ্যমন্ত্রীকে বলে? বিডিও -কে বললেই তো হত।” কল্পনা গিরি বা সুরেশচন্দ্র দের অবশ্য সত্যিই সরকারি সাহায্য প্রয়োজন। পঙ্গু সুরেশবাবু বার্ধক্য ভাতা চেয়েছেন। আর কুষ্ঠ থেকে মুক্তি পাওয়া কল্পাদেবী চান প্রতিবন্ধী ভাতা। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে দু’ক্ষেত্রেই কাজ এগিয়েছে। গোপীবল্লভপুর -এর বিডিও অনন্য জানা বলেন, “সুরেশবাবুকে বার্ধক্য ভাতা দেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ করা হচ্ছে। প্রতিবন্ধী শংসাপত্রের জন্য কল্পনাদেবীকে স্বাস্থ্য দফতরে পরীক্ষার জন্য পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
মুখ্যমন্ত্রীর সদিচ্ছাতেই কি তবে কাজে গতি এসেছে? প্রশ্নের সরাসরি উত্তর এড়িয়ে জেলাশাসক গুলাম আলি আনসারি বলেন, “সিস্টেম যেমন দ্রুত কাজ চাইছে, আমরাও তেমন করছি। যাবতীয় পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে আমরা দায়বদ্ধ। বার থেকে এমনই দ্রুততার সঙ্গে কাজ করা হবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.