প্রধানের পদ নিয়ে জটিলতায় থমকে উন্নয়নের কাজকর্ম |
নিজস্ব সংবাদদাতা • শ্যামপুর |
আইনের প্যাঁচে পড়ে উন্নয়নের কাজ স্তব্ধ শ্যামপুর ২ ব্লকের খাড়ুবেড়িয়া পঞ্চায়েতে।
এই পঞ্চায়েতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে তৃণমূল। কিন্তু প্রধান পদটি সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে ওবিসি মহিলার জন্য। তৃণমূলের কোনও ওবিসি মহিলা প্রার্থী ভোটে জিততে না-পারায় সিপিএমের বিজয়ী ওবিসি মহিলা প্রার্থী প্রধান পদে শপথ নেন। আর তাতেই দেখা দিয়েছে সমস্যা।
এই পঞ্চায়েতে মোট আসন ২১টি। এর মধ্যে তৃণমূল জিতেছে ১৩টি আসনে। বামেরা পেয়েছে ৬টি আসন। দু’টি আসনে জিতেছেন বামফ্রন্ট সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা। মাত্র ৬টি আসনে জিতলেও সংরক্ষণের জেরে প্রধান পদটি পেয়ে গিয়েছে সিপিএম।
পঞ্চায়েত সদস্যদের মিলেমিশে কাজ করার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ স্থানীয় মানুষের। ফলে মার খাচ্ছে একশো দিনের কাজের প্রকল্প। মূখ্যমন্ত্রী এই জেলায় দু’বার সফরে এসেছেন। জেলা প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে ১০০ দিনের প্রকল্পে তিনি জোর দিতে বলেন। এমনিতেই পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়া দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকায় প্রকল্পের কাজে গতি ছিল না। তার পরে পড়ে বর্ষা। সব কিছু মিটে গিয়েছে। বিদায় নিয়েছে বর্ষাও। কিন্তু প্রকল্পের কাজ শুরুর কোনও উদ্যোগ এই পঞ্চায়েতে দেখা যাচ্ছে না বলে জবকার্ডধারীরা জানিয়েছেন। ব্লক প্রশাসন সূত্র থেকেও জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের প্রকল্পের কোনও প্রস্তাব এই গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে ব্লক প্রশাসনের কাছে জমা পড়েনি।
ত্রয়োদশ অর্থ কমিশন, তৃতীয় রাজ্য অর্থ কমিশনের টাকাও এসে পড়ে রয়েছে। এমনকী, বিগত পঞ্চায়েতে যে সব উন্নয়নমূলক কাজ করার জন্য প্রস্তাব অনুমোদিত হয়েছিল সেগুলিও রূপায়ণ করা যাচ্ছে না উভয়পক্ষের মত বিরোধের জন্য।
তৃণমূলের অভিযোগ, উন্নয়মূলক যে সব কাজের বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে সেগুলির প্রায় প্রতিটিতে বাগড়া দিচ্ছেন প্রধান। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জেরে উন্নয়নমূলক কাজের যে সব প্রস্তাব তৃণমূল অনুমোদন করাতে চাইছে তাতে প্রধান সই করতে চাইছেন না। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক কালীপদ মণ্ডল বলেন, “বর্তমান প্রধান তাঁর দলের নির্দেশে গোঁয়ার্তুমি করে উন্নয়নমূলক কাজে বাধ সাধছেন।”
অন্য দিকে, প্রধান কাকলি মান্না বলেন, “আমি একজন সাধারণ গৃহবধূ। আমাকে প্রধান পদে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব কিছু দেখে বুঝে নিয়ে তবে আমি কোনও প্রস্তাবে সই করব। কিন্তু তৃণমূল বড় তাড়াহুড়ো করছে। তার ফলেই আমার সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না।”
এ বিষয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক বিপ্লব মজুমদারের কথায়, “খাড়ুবেড়িয়ায় একটা সমস্যা হচ্ছে শুনেছি। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা বসে প্রশাসনের সাহায্য নিয়ে তো তা মিটিয়ে ফেলতে পারেন।”
তৃণমূল ইতিমধ্যেই তাদের দলের এক সদস্যকে পদত্যাগ করিয়েছে। শূন্য পদে উপ-নির্বাচন হলে সেখানে ওবিসি মহিলাকে তারা প্রার্থী করবে। তিনি জিতলে বর্তমান প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা অনাস্থা আনার পরিকল্পনা রয়েছে। কালীপদবাবু বলেন, “তবে আমরা ওই পঞ্চায়েতে আমাদের দলের সদস্যদের বলেছি যত দিন না দলের নিজস্ব প্রধান নির্বাচন করার প্রক্রিয়া শেষ হচ্ছে, তত দিন যেন তাঁরা ধৈর্য্য ধরে থাকেন। বর্তমান প্রধানকে যেন কোনও অসম্মান না করেন।” শ্যামপুর ২ বিডিও সুদীপ্ত সাঁতরা বলেন, “বিভিন্ন খাতে টাকা আসতে শুরু করেছে। তা কী ভাবে খরচ করা যাবে, সে বিষয়ে ওই পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ বিভিন্ন সদস্যের সঙ্গে খুব শীঘ্রই আলোচনা করা হবে।” |