|
|
|
|
স্বপ্ন সফল হবে না, মোদীকে পাল্টা নীতীশের, বেসুর শিবানন্দ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • পটনা |
খানিকক্ষণ আগেই দু’দিন আগে পটনার সভায় নরেন্দ্র মোদীর তোলা অভিযোগগুলি পরপর খণ্ডন করেছেন নীতীশ কুমার। জেডিইউ সমর্থকদের তুমুল হাততালির মাঝে, মোদীর নাম না-করে ঘোষণা করেছেন, “লাল কেল্লায় ওঁর জাতীয় পতাকা উত্তোলনের স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যাবে।” রাজগিরে দলীয় সম্মেলনের সুরটা মোদী-বিরোধী বক্তৃতায় নীতীশ এ ভাবে বেশ চড়া করে বেঁধে দেওয়ার পরেই ছন্দপতন ঘটালেন দলের আর এক শীর্ষ নেতা শিবানন্দ তিওয়ারি। মাইক ধরেই ঘোষণা করলেন, “আমি নরেন্দ্র মোদীর ফ্যান।”
সম্মেলন স্থলে তখন পিন পড়লেও যেন আওয়াজ শোনা যাবে। মঞ্চে বসা নেতারা স্তব্ধ। স্তব্ধ সামনে বসা কয়েক হাজার দলীয় কর্মী। সকলকে হতবাক করে তিওয়ারি বলে চলেছেন, “বিহারে জেডিইউ-বিজেপি জোট মসৃণ ভাবেই চলছিল। কিন্তু জেডিইউ জাতীয় রাজনীতির স্বার্থে বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করল। কারণ বিজেপি মোদীকে তুলে আনল। একেবারে সাধারণ কর্মী থেকে তিনি আজকে এই জায়গায় পৌঁছেছেন।” সামনে বসা কর্মীদের মধ্যে তত ক্ষণে গুঞ্জন শুরু হয়ে গিয়েছে। উসখুস করছেন নেতারাও। নীতীশের মুখ ক্রমশ কালো হতে শুরু করেছে। তিওয়ারি কিন্তু বলে চলেছেন, “নীতীশজি আমি আপনার পুরনো সহকর্মী। আমার সহকর্মী, বন্ধুরা যখন এগিয়ে যায়, তখন আমার আনন্দ হয়। আমরা তো প্রধানমন্ত্রী হতে চাইছি না। কিন্তু যখন এক জন সেই পদে বসার দিকে এগোচ্ছেন, তখন তাঁকে সাহায্য করলে ক্ষতি কী? আপনি এত ঈর্ষাপরায়ণ কেন? মোদী অতি সাধারণ অবস্থা থেকে এখানে উঠে...।” এত ক্ষণের গুঞ্জন বদলে গেল গর্জনে। কর্মী-সমর্থকরা উঠে দাঁড়ালেন। বক্তৃতা শেষ করতে পারলেন না শিবানন্দ। প্রবল চিৎকার ও মঞ্চে উঠে আসা সমর্থকদের ধাক্কাধাক্কিতে বসে পড়তে বাধ্য হলেন প্রবীণ সাংসদ। মঞ্চে বসা নেতারা ভিড় সামলানোর চেষ্টা করলেন। নীতীশ কিন্তু নীরব, স্থির।
মোদীর যে সাধারণ অবস্থা থেকে উঠে আসার কথা বলে তাঁর গুণগান করতে চাইছিলেন শিবানন্দ, কিছু ক্ষণ আগেই তার পাল্টা বলেছেন নীতীশ। তাঁর কথায়, “বলা হচ্ছে, উনি ছোট বেলায় স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে চা বিক্রি করতেন। না, আমি কখনও চা বিক্রি করিনি। তবে আমিও খুব সাধারণ পরিবারের ছেলে। আমার বাবা স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন। বৈদ্য ছিলেন। স্কুল থেকে ফিরে আমি ভেষজ ওষুধের পুরিয়া বানাতাম। বলা হচ্ছে, উনি পিছড়ে বর্গের মানুষ। জন্মসূত্রে পিছড়ে বর্গ হয়ে কী হবে। পিছড়ে বর্গের মানুষের জন্য কিছু করেছেন কি না, সেটাই আসল কথা।”
গত রবিবার গাঁধী ময়দানের হুঙ্কার র্যালিতে নীতীশের নাম না-করে তাঁকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছিলেন মোদী। আজ দলের চিন্তন শিবিরের মঞ্চকে তার জবাব দেওয়ার জন্য বেছে নিয়েছিলেন নীতীশ। তিনি বলেন, “যিনি দেশের সর্বোচ্চ পদের অভিলাষী তাঁকে অনেক সংযত হতে হয়। মিষ্টভাষী হতে হয়। ভদ্র হতে হয়। গুজরাতিরা মিষ্টি খেতে ভালবাসেন। কিন্তু ওঁর মুখে মিষ্টত্বের বড়ই অভাব।” হুঙ্কার র্যালিতে মোদী বার বার জল খেয়েছিলেন, ঘামছিলেনও খুব। সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে নীতীশের সহাস্য কটাক্ষ, “আমার সমালোচনা করতে গিয়ে বার বার জল খাচ্ছিলেন কেন? এত ঘামছিলেনই বা কেন?”
জয়প্রকাশ নারায়ণ, রামমনোহর লোহিয়াকে পিছন থেকে নীতীশ ছুরি মেরেছেন বলে মোদীর তোলা অভিযোগের জবাবে নীতীশের বক্তব্য, “জেপি, লোহিয়ার উনি কী বুঝবেন? সাম্প্রদায়িক শক্তির সঙ্গে সরাসরি সংঘাত ছিল তাঁদের। আমি তাঁদের দেখানো পথ ছাড়িনি।” পাশাপাশি, কোশী-বন্যার সময় বিহারকে সাহায্য দিয়ে তা প্রচার করা নিয়েও মোদীর সমালোচনা করেন নীতীশ। বলেন, “ভারতীয় পরম্পরা হল, দান করে তা বলতে নেই। ওরা দান পাঠিয়ে তা নিয়ে কাগজে কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রচার করতে শুরু করলেন। তা দেখে বড় দুঃখে আমি চেক ফেরত দিয়েছিলাম। সেই চেক ওঁরা ভাঙিয়েও নিলেন!”
সভার সুর যখন এমন মোদী-বিরোধিতায় টান টান, তখন শিবানন্দের বক্তব্য স্বাভাবিক ভাবেই ছন্দপতন করেছে। তিনি আর বেশি ক্ষণ থাকতেও পারেননি মঞ্চে। সবাই যে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে! পরে অবশ্য সাংবাদিকদের কাছে তাঁর ভাষণের মর্মকথা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে শিবানন্দ বলেন, “মোদীর নীতির যে আমি বিরোধী, সে কথাও তো বলেছি। আসলে মোদীর চরিত্রের শক্তিশালী দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়েছি, যাতে তাঁর মোকাবিলা করা সহজ হয়।”
কিন্তু এই ব্যাখ্যা দলের কর্মী-সমর্থকদের কাছে করার সুযোগ পাননি শিবানন্দ। পাবেন কি না তা নিয়েও সংশয় বিহারের রাজনীতির অন্দরে। কারণ, ইতিমধ্যেই তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছে রাজ্য বিজেপি। দলে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণও জানিয়েছে। একদা লালু প্রসাদের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ শিবানন্দ ক্ষমতাচ্যুত লালুকে ছেড়ে নীতীশের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। জল্পনা, ফের কি হাওয়া বদলের আঁচ পেলেন বিহার রাজনীতির প্রবীণ এই নেতা?
|
পুরনো খবর: আখেরে লাভ মোদীর, আশঙ্কা করছে কংগ্রেস |
|
|
|
|
|