সর্দারকে নিয়ে নতুন যুদ্ধে মোদী ও কংগ্রেস
‘সর্দার’ তুমি কার! নরেন্দ্র মোদী তথা বিজেপি-র, নাকি কংগ্রেসের!
কাল বাদে পরশু বল্লভভাই পটেলের ১৩৮তম জন্মবার্ষিকী। তার আগে তাঁর রাজনৈতিক ঐতিহ্য নিয়ে পুরোদস্তুর টানাটানি শুরু হয়ে গেল মোদী-কংগ্রেসে। আমদাবাদে সর্দার পটেলের স্মৃতিতে আজ একটি সংগ্রশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও বিজেপি-র প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী। মনমোহনের পাশে দাঁড়িয়েই আজ কংগ্রেস তথা নেহরু-গাঁধী পরিবারকে পরোক্ষে কটাক্ষ করে মোদী বলেন, “সর্দার পটেল যদি প্রথম প্রধানমন্ত্রী হতেন, তা হলে দেশের চেহারাটাই আজ অন্য রকম হত।”
কিন্তু পরক্ষণেই জবাব দিতে ছাড়েননি মনমোহনও। তাঁর কথায়, “সর্দার পটেল ছিলেন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সদস্য। সারা জীবন তিনি কংগ্রেসকে শক্তিশালী করার জন্য কাজ করেছেন।” তার পরে মোদীকে পাল্টা কটাক্ষে মনমোহন বলেন, “সর্দার পটেল বরাবর ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব নিয়ে চলেছেন। দেশের অখণ্ডতার জন্য লড়াই করেছেন। সহনশীলতার নজির রেখেছেন। সেই সঙ্গে বিপরীত মতাদর্শের রাজনীতিকদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে চলেছেন। কিন্তু বর্তমান রাজনীতিতে সেই আদর্শেরই ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।” প্রধানমন্ত্রী একা নন, পটেলকে নিয়ে রাজনীতি করার জন্য আজ মোদীর তীব্র সমালোচনা করেন আনন্দ শর্মা, মণীশ তিওয়ারির মতো কেন্দ্রের কংগ্রেস মন্ত্রীরাও। তাঁদের বক্তব্য, যে আরএসএসের মনোনীত প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী নরেন্দ্র মোদী, মহাত্মা গাঁধীকে হত্যার পর সেই সংগঠনকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন সর্দার পটেল। একই ধরনের সমালোচনায় আজ সামিল হন সিপিএম নেতারাও।
দুই মুখ: সর্দার বল্লভভাই পটেল সংগ্রহশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার আমদাবাদে। ছবি: পিটিআই।
কংগ্রেস নেতৃত্বের একটা বড় অংশ অবশ্য এ দিনের অনুষ্ঠানের পরে প্রধানমন্ত্রীর উপরে অসন্তুষ্ট। তাঁরা মনে করেন, মোদীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর এক মঞ্চে বসা উচিত হয়নি। এখন এই ঘটনাকে ব্যবহার করে মোদী রাজনৈতিক ফায়দা তোলার চেষ্টা করবেন। তাই পরশু সর্দার পটেলের মূর্তি তৈরির শিলান্যাস অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাওয়া সত্ত্বেও যোগ দেবেন না আনন্দ শর্মা (প্রধানমন্ত্রীও সেখানে আমন্ত্রিত)। তিনি উল্টে মোদীকে একটি চিঠিতে সাম্প্রদায়িক বলে সমালোচনাও করেছেন। অভিযোগ করেছেন, পটেলকে নিয়ে রাজনীতি করছেন মোদী।
বল্লভভাই পটেলের ঐতিহ্য নিয়ে বিজেপি নেতৃত্ব সাম্প্রতিক অতীতে যতটা আলোচনা করেছেন, কংগ্রেস নেতারা তা করেননি। সর্দার পটেল গুজরাতের ভূমিপুত্র ছিলেন। একদা লালকৃষ্ণ আডবাণীকে সেই লৌহপুরুষের সঙ্গে তুলনা করতেন বিজেপি নেতৃত্ব। সেই আডবাণী সম্প্রতি তাঁর ব্লগে একাধিক বার নেহরুর সঙ্গে পটেলের দ্বন্দ্বের কথা লিখেছেন। আর মোদী নেমে পড়েছেন পটেলের ঐতিহ্য ও তাঁর নেতৃত্বের দৃঢ়তা নিয়ে প্রচারে। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী এই বার্তাই দিতে চাইছেন যে, একদা সর্দার পটেল যে দৃঢ় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন দেশকে, তিনিও সেই পথেই হাঁটছেন। গোটা দেশকে সেই বার্তা দিতে নর্মদার তীরে সর্দার পটেলের একটি ১৮২ মিটার উঁচু লোহার মূর্তি তৈরির কথা ঘোষণা করেছেন মোদী। সে জন্য গোটা দেশের কৃষকদের লোহা দান করার আর্জিও জানিয়েছেন।
কিন্তু লোকসভা ভোটের আগে বল্লভভাইয়ের ঐতিহ্য নিয়ে মোদীর এই দৌত্য দেখে এখন পিছিয়ে থাকতে রাজি নন কংগ্রেস নেতারাও। গুজরাতে বল্লভভাইয়ের স্মৃতিতে একটি সংগ্রহশালা তৈরির জন্য অনেক দিন ধরেই সচেষ্ট গুজরাত কংগ্রেসের নেতা তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধিনসা পটেল। ওই সংগ্রহশালা তৈরির আর্থিক অনুদানও দিয়েছে কেন্দ্র। আজ তারই উদ্বোধনে আমদাবাদ সফরে যান প্রধানমন্ত্রী।
সর্দার পটেলকে নিয়ে ওই মঞ্চে মোদী-কংগ্রেসে যে টানাটানি হবে, সেই আশঙ্কা ছিলই। হলও তাই। ওই অনুষ্ঠানের মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার কোনও সুযোগই আজ ছাড়েননি নরেন্দ্র মোদী। তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী গুজরাত সফরে আসায় আমি খুশি। গত কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন মহল থেকে গুজরাত সরকারকে সুশাসনের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে। কেন্দ্রও বারবার তা স্বীকার করেছে। সেই জন্য আমি কৃতজ্ঞ।” এর পরেই তিনি জানান, পটেল প্রথম প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের চেহারাটাই বদলে যেত।
কিন্তু প্রধানমন্ত্রীও যে জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েই এসেছিলেন। আর তাই আগে থেকেই লিখে আনা বক্তৃতা পাঠ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি যে দলের সদস্য, সেই কংগ্রেসেরই সদস্য ছিলেন বল্লভভাই পটেল। কংগ্রেসের করাচি অধিবেশনের সময় তিনি সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।” এর পরেই সর্দার পটেলের ধর্মনিরপেক্ষতা ও রাজনৈতিক সহনশীলতার প্রসঙ্গ তুলে আনেন মনমোহন।
ক’দিন আগেই এক জনসভায় মোদী বলেছিলেন, কংগ্রেস এতটাই অকৃতজ্ঞ যে সর্দার বল্লভ ভাই পটেলের শেষকৃত্যেও যোগ দেননি জওহরলাল নেহরু। আজ তারও জবাব দেন মনমোহন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এটা ঠিকই যে, পণ্ডিত নেহরু এবং সর্দার পটেলের বহু বিষয়ে মতান্তর ছিল। কিন্তু তার থেকেও বেশি ছিল মতের মিল। সর্দার পটেল নিজেই লিখেছেন যে, প্রশাসন ও আর সাংগঠনিক বিষয়ে নেহরুকে পরামর্শ দেওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। সারাজীবন আমরা বন্ধুর মতো কাজ করেছি।” পটেলের মৃত্যুর পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় গৃহীত প্রস্তাবের অংশও আজ পড়ে শোনান প্রধানমন্ত্রী।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নরেন্দ্র মোদীও চুপ থাকার পাত্র নন। এর মধ্যেই তিনি টুইট করেছেন, “প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা সময় চেয়েছিলাম গুজরাতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার জন্য। কিন্তু তাঁর কংগ্রেস ভবনে যাওয়ার সময় হলেও আমাদের সঙ্গে আলোচনার সময় হয়নি।” বিজেপি সূত্রে বলা হচ্ছে, সব সমালোচনারই জবাব দেবেন মোদী। সম্ভবত সর্দার পটেলের মূর্তি তৈরির শিলান্যাস অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকেই। মাঝে অপেক্ষা মাত্র ২৪ ঘণ্টার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.