|
|
|
|
ফের বাঙালির হাতে বায়ুসেনা |
সুনন্দ ঘোষ • কলকাতা |
শেষ হল বাঙালির ৫৪ বছরের প্রতীক্ষা। ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রধান হতে চলেছেন ফের এক বঙ্গসন্তান। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের পর এ বার অরূপ রাহা।
 |
অরূপ রাহা
২০১৪ |
বায়ুসেনার বর্তমান প্রধান এ কে ব্রাউনি অবসর নেবেন ৩১ ডিসেম্বর। তাঁর উত্তরসূরি হিসেবে মঙ্গলবার বৈদ্যবাটির বাঙালি অরূপবাবুর নামই ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। বর্তমানে বায়ুসেনার দ্বিতীয় শীর্ষ পদে (ভাইস চিফ) আসীন অরূপবাবু নতুন বছরের শুরুতে দায়িত্ব বুঝে নেবেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় দিল্লির বাড়ি থেকে ফোনে বিনীত কণ্ঠে যিনি বললেন, “পূর্বসূরিরা যে মান তৈরি করে গিয়েছেন, তা ধরে রাখাই আমার প্রথম কর্তব্য।”
সেনাপ্রধান হিসেবে এর আগে দুই বঙ্গসন্তানকে পেয়েছে দেশ জয়ন্তনাথ চৌধুরী এবং শঙ্কর রায়চৌধুরী। ষাটের দশকে একমাত্র বাঙালি নৌপ্রধান হয়েছিলেন অধরকুমার চট্টোপাধ্যায়। বায়ুসেনার সর্বোচ্চ পদে অরূপবাবুর একমাত্র বাঙালি পূর্বসূরি সুব্রত মুখোপাধ্যায়। শুধু প্রথম বাঙালিই নন, স্বাধীনতার পর বায়ুসেনার প্রথম ভারতীয় প্রধান সুব্রতবাবুই। ১৯৫৪ সালে কার্যভার গ্রহণের পর ১৯৬০-এ আকস্মিক মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন তিনি।
সেই ১৯৬০-এর পর এ বার ২০১৪। দ্বিতীয় বাঙালি বায়ুসেনা প্রধান হতে চলেছেন জেনে কেমন লাগছে? “দারুণ! আমি গর্বিত।” ফোনের ও-পারে হেসে বললেন অরূপবাবু। দিল্লির বাড়িতে অনেক লোক। তার ওপর সকাল থেকে খবরটা ছড়িয়ে পড়ার পর কলকাতা থেকে একের পর এক আত্মীয়ের ফোন আসছে। তার ফাঁকেই সময় করে কথা বলে গেলেন ৫৯ বছরের এয়ার মার্শাল।
অরূপবাবুর জন্ম কলকাতায়। বাবা ননীগোপাল রাহা ছিলেন চিকিৎসক। আদি বাড়ি বাংলাদেশের যশোহর জেলায়। বাবা-মা দু’জনেরই পড়াশোনা কলকাতায়। বাবা কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের কৃতী ছাত্র। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে বর্মা ফ্রন্টে গিয়ে যুদ্ধে আহত সেনানীদের চিকিৎসা করতে হয়েছিল তাঁকে। বাবার সেই দিনগুলো ছিল অরূপবাবুর সশস্ত্র বাহিনীতে যোগ দেওয়ার অন্যতম বড় অনুপ্রেরণা। পুরুলিয়ার সৈনিক স্কুলে (প্রাক্তন ছাত্রের বায়ুসেনা প্রধান হওয়ার খবরে সেখানেও এ দিন উৎসবের মেজাজ) ভর্তি হওয়ার পরে চোখের সামনে যখন সিনিয়রদের সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে দেখতেন, তখনই সেই অনুপ্রেরণার সঙ্গে মিশে যায় সংকল্প।
অরূপবাবু যখন সৈনিক স্কুলের ছাত্র, সেই সময়েই কলকাতা ছেড়ে বৈদ্যবাটিতে গিয়ে পাকাপাকি ভাবে বসবাস শুরু করেন তাঁর বাবা। সৈনিক স্কুল থেকে বেরিয়ে ন্যাশনাল ডিফেন্স অ্যাকাডেমি ঘুরে ১৯৭৪ সালের
ডিসেম্বরে যুদ্ধবিমানের পাইলট হিসেবে বায়ুসেনায় যোগ দিতে অরূপবাবুকে বেশি বেগ পেতে হয়নি। তিনি কৃতী ছাত্র, বায়ুসেনার কোনও পরীক্ষাতেই দ্বিতীয় হননি। প্রায় চার হাজার ঘণ্টা উড়ানের অভিজ্ঞতা রয়েছে এই দুঁদে পাইলটের। এক সময়ে দাপটে উড়িয়েছেন সব ধরনের মিগ যুদ্ধবিমান। |
সেনা শীর্ষে |
বায়ুসেনা প্রধান
সুব্রত মুখোপাধ্যায় ১৯৫৪-৬০
নৌপ্রধান
অধরকুমার চট্টোপাধ্যায় ১৯৬৬-৭০
সেনাপ্রধান
জয়ন্তনাথ চৌধুরী ১৯৬২-৬৬
শঙ্কর রায়চৌধুরী ১৯৯৪-৯৭ |
|
ইচ্ছে ছিল ছেলে অতনুও হোন যুদ্ধবিমানের পাইলট। “ছেলে বলেছে, একটা পরিবারে একটাই যুদ্ধবিমানের পাইলট যথেষ্ট।” হেসে ফেললেন অরূপবাবু। তাঁর ছেলে পাইলটই হয়েছেন, তবে স্পাইসজেটের। যাত্রীদের নিয়ে উড়ে বেড়ান এক শহর থেকে অন্য শহরে। মেয়ে অনুশ্রী ইন্ডিয়ান ইকনমিক সার্ভিসে সবে যোগ দিয়েছেন। ১৯৮৩ সালে ফাইটার পাইলটকে বিয়ে করে সংসার পেতেছিলেন মধ্যমগ্রামের মেয়ে লিলি। ভাবী বায়ুসেনা প্রধানের ঘরণী বললেন, “সকাল দশটার পরে খবরটা পাই। দারুণ লাগছে। সকাল থেকে অতিথিদের ভিড়।”
বৈদ্যবাটির পাট চুকিয়ে এখন কলকাতার বাইপাসের ধারে চলে এসেছে অরূপবাবুর পরিবার। সেখানে অরূপবাবু মা পারুলদেবী থাকেন ছোট ছেলের সঙ্গে। বছরে বার দুয়েক কলকাতায় আসার সুযোগ হয় অরূপবাবুর। তাঁর আক্ষেপ, “খুব কম সময়ের জন্য কলকাতায় আসতে পারি। কাজের চাপ থাকে খুব।”
৩৯ বছরের দীর্ঘ কর্মজীবনে নানা গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলেছেন অরূপবাবু। পাক-সীমান্ত এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত বায়ুসেনার সাউথ-ওয়েস্টার্ন কম্যান্ড, ওয়েস্টার্ন কম্যান্ডের প্রধান ছিলেন এক সময়ে। আবার ইউক্রেনে ভারত সরকারের সম্মানজনক এয়ার-এটাশে পদেও নিযুক্ত হয়েছেন।
কিন্তু এ বার তিন বছরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তাঁর। এমন একটা সময়ে অরূপবাবু কার্যভার নিচ্ছেন, যখন চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে প্রতিনিয়ত স্নায়ুযুদ্ধ চলছে। যার প্রেক্ষিতে বায়ুসেনার শীর্ষ পদাধিকারীরা মনে করছেন, অবিলম্বে শক্তিবৃদ্ধি প্রয়োজন। কারণ, যথেষ্ট সংখ্যক অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান নেই।
এ দিকে, ফ্রান্সের কাছ থেকে রাফালে যুদ্ধবিমান কেনার বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও কাগজে-কলমে চুক্তি এখনও ঝুলে রয়েছে। আগেই শোনা গিয়েছে, পুরনো মিগ পুরোপুরি বসিয়ে দিয়ে রাশিয়ার থেকে যথেষ্ট সংখ্যক সুখোই কিনতে চায় কেন্দ্র। কিন্তু তা নিয়েও বিতর্ক জারি রয়েছে বায়ুসেনা দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি যুদ্ধবিমানে ভরসা রাখবে, নাকি বিদেশি বিমানে? লোকসভা ভোটের পর গোটা পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, সেটাও বড় প্রশ্ন।
সামনে চ্যালেঞ্জ অনেক। বৈদ্যবাটির বাঙালি অবশ্য নয়া উড়ানের জন্য কোমর বেঁধে প্রস্তুত। |
|
|
 |
|
|