ভাস্করজ্যোতি মজুমদার • আমোদপুর |
এক দিন নয়। পাঁচ দিন। প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন পাঁচ দিনের এই কালী পুজোকে ঘিরে মেলা বসে আমোদপুরের নিরিশা গ্রামে। দুর্গা পুজোর মতোই কালী পুজোতেও নতুন জামাকাপড়, ভালমন্দ খাওয়া, খেলাধুলো আর আড্ডাএ সব নিয়েই এই ক’দিন মেতে থাকেন গ্রামের সব বয়সের বাসিন্দারা। মেলায় শুধু ওই গ্রামের লোকজনই নন, এতে সামিল হন আশপাশের গ্রাম, শহর ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকজনও।
কথিত আছে, গ্রাম থেকে সামান্য দূরের জঙ্গলে প্রতি অমাবস্যায় গভীর রাতে মশালের আলো দেখা যেত। কাঁসর-ঘণ্টার আওয়াজ শোনা যেত। গ্রামের নৈশ প্রহরী কাঁসরের ধ্বনি শোনা ও আলো দেখার অভিজ্ঞতার কথা গ্রামবাসীদের শোনাতেন। অন্যরা ভয় পেলেও গ্রামের বাসিন্দা ডম্বুর বন্দ্যোপাধ্যায় অমাবস্যায় জঙ্গলে যাওয়ার জন্য মনস্থির করেন। সেখানে যেতে চাননি ওই নৈশ প্রহরীও। রাতে ঘণ্টাধ্বনি ও আলো অনুসরণ করে ডম্বুরবাবু সেখানে গিয়ে দেখেন, এক কাপালিক বিশাল কালীমূর্তির পুজো করছেন। পুজো শেষে ওই কাপালিক ডম্বুরবাবুকে বলেন, ‘এই পুজো তোর হাতেই সমর্পণ করলাম।’ এই বলে কাপালিক রাতেই চলে যান। বর্তমানে নিরিশার ওই কালীপুজো গ্রামের দুই রায় পরিবার পরিচালনা করেন। পরিবারের সদস্য তাপস রায়, কালীময় রায় ও প্রবীণ সদস্য নীলিমা রায় বলেন,“ডম্বুরবাবু নিঃসন্তান ছিলেন। আমাদের দুই পূর্বপুরুষ, লাভপুরের আভাডাঙার বাসিন্দা রাজেন্দ্র রায় ও রাখাল রায়কে এই গ্রামে নিয়ে এসে পুজোর দায়িত্ব দেন। সেই থেকে পুজো সামলে আসছেন আমাদের পরিবারের লোকজন।”
জনবসতি বেড়েছে। সেই জঙ্গল আর নেই। জনবসতি বাড়তে বাড়তে এখন কালীমন্দির লাগোয়া হয়ে গিয়েছে। ওই কালী মাহাত্মের কথা গ্রাম ছাড়িয়ে এলাকার অন্যত্র এমন কী কলকাতা ও রাজ্যের বহু জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে লোকমুখে। তাই প্রতিবার এখানে সাঁইথিয়ার দুর্গা দাস, সিউড়ির বুবাই রায়রা যেমন আসেন, আসতে দেখা গিয়েছে হাওড়ার শিপ্রা মুখোপাধ্যায়, দমদমের সুদীপ্ত বন্দ্যোপাধ্যায়, ডানলপের তন্দ্রা বন্দ্যোপাধ্যায়দেরও। দূর-দূরান্তের লোকজনের সমাগমে রীতিমতো উত্সবের চেহারা নেয় গোটা গ্রাম। কালীপুজোর একদিন পর ফের ঘট ভরে আবার নতুন করে পুজো হয়। শতাধিক ছাগ বলি হয় এবং আগত ভক্তদের খিচুড়ি খাওয়ানো হয়। |