বাংলায় শ্যুটিং করাটা দুঃস্বপ্নের
ই তো সেদিন ‘আই অ্যাম’য়ের পরিচালক অনির আনন্দplus-য়ে সাক্ষাৎকার দিয়ে বলেছিলেন যে বাংলাতে শ্যুটিং করতে তাঁর ভাল লাগছে। তিনি আর অভিনেতা সঞ্জয় সূরি মিলে প্রযোজনা করছেন ‘চতুরঙ্গ।’ পরিচালক বিকাশরঞ্জন মিশ্র। অভিনয়ে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়, স্বাতীলেখা সেনগুপ্ত, তন্নিষ্ঠা চট্টোপাধ্যায়, সঞ্জয় সুরি, অর্পিতা চট্টোপাধ্যায় প্রমুখ। বোলপুরের কাছে শ্যুটিং করছিলেন তাঁরা। যেটুকু সমস্যা ছিল তা শুধু বৃষ্টি নিয়ে।
তবে এখন শোনা যাচ্ছে যে অনির তাঁর টিম নিয়ে মুম্বই ফিরে গিয়েছেন। এবং তার থেকেও বড় কথা হল, তাঁর ফেরত যাওয়াটা নিছক ছবির শ্যুটিং শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে নয়। এখানে শ্যুটিং করতে গিয়ে এতটাই ঝামেলা পোহাতে হয় যে অনির শ্যুটিং শেষ না করেই পাততাড়ি গুটিয়ে মুম্বই ফিরে গিয়েছেন। আপাতত তিনি আমেরিকাতে। সেখান থেকে ইমেল করে একথা জানিয়েছেন। লিখেছেন, “দু’ মাস আগে আমাদের টিম মুম্বই থেকে কলকাতায় এসেছিল। বোলপুরের আশপাশে শ্যুটিং করব ভেবে আমার উৎসাহের শেষ ছিল না। কিন্তু আড়াই মাস পরে আমাদের ইউনিট মুম্বই ফিরে এসেছে। মনটা খুবই খারাপ। এটা আমাদের প্রথম প্রযোজনা ছিল। কিন্তু দুঃখের সঙ্গে বলছি যে বাংলাতে ইন্ডিপেনডেন্ট ছবির শ্যুটিং করাটা এখন একটা দুঃস্বপ্ন।”
‘চতুরঙ্গ’ ছবিতে সঞ্জয় সুরি।
তবে অনির এটাও বলেছেন যে বাংলার লোকেশন দারুণ সুন্দর। তাঁর মতে, “জাতীয় দর্শক সেই সব একেবারেই দেখেনি। কিন্তু সরকার যদি হস্তক্ষেপ না করে, তা হলে আমরা ফিরতে পারব না। ভেবেছিলাম আরও ক’টা ছবির শ্যুটিং করব পশ্চিমবাংলায়। এখন ফেরার কথা ভাবতে পারছি না।”
ঠিক কী সমস্যার জন্য অনির এতটা ক্ষিপ্ত? “আমরা ইনডিপেনডেন্ট ছবি বানাই। ছোট ইউনিট নিয়ে কাজ করি। কিন্তু বাংলার গিল্ডের নিয়মকানুন খুবই পুরনো ধাঁচের। এত বেশি লোককে কাজে নিতে বাধ্য করা হয় এখানে যা আমাদের প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি। ‘চতুরঙ্গ’ একেবারেই হ্যান্ডহেল্ড ক্যামেরা দিয়ে শ্যুটিং করা দরকার। তবে আমাকে বলা হয়েছিল ট্রলিম্যানদেরকে নিতেই হবে,” বলছেন অনির।
পরিচালক আরও জানান যে তাঁর ইউনিটে সাধারণত পঞ্চাশ থেকে সত্তর জন লোক কাজ করেন। ই-মেল তিনি লিখছেন, “কিন্তু আমাকে বোলপুরে একশো পঁয়ত্রিশ থেকে একশো চল্লিশ জন লোকের ইউনিট নিয়ে কাজ করতে বলা হয়। তার মধ্যে অনেক স্থানীয় ‘স্বেচ্ছাসেবী’ ছিলেন। তাঁদের সবাইকে পারিশ্রমিক দিতে হবে। এটা তো ব্ল্যাকমেল আর দাদাগিরি ছাড়া আর কিছুই নয়।” এর আগে অন্যান্য প্রদেশেও অনির শ্যুটিং করেছেন। সেখানে কী অভিজ্ঞতা হয়েছে? উত্তরে অনির বলেন, “কোনও হিন্দি ফিল্মের ইউনিট উত্তরপ্রদেশ, গুজরাট, গোয়া বা রাজস্থানে শ্যুটিং করলে সেখানে নানা ধরনের কর ছাড় দেওয়া হয়। এমন সুবিধা দেওয়া হয় যাতে অন্যান্য প্রযোজকেরা আবার ফিরে আসেন শ্যুটিং করতে। কিন্তু বাংলাতে গিয়ে দেখলাম যে হিন্দি ফিল্ম শ্যুট করতে গিয়ে আমাদের প্রত্যেক টেকনিশিয়ানকে দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিতে হচ্ছে। শুধু তাই নয় বাংলাতে টেকনিশিয়ানদের শিফটের হিসেবের নিয়মটাও বেশ অন্যরকম। অন্য জায়গাতে একটা শিফট মানে আট ঘণ্টা। দুটো শিফট মানে ষোলো ঘণ্টা। কিন্তু বাংলাতে দেখলাম আটঘণ্টা মানে একটা শিফট। বারো ঘণ্টা মানে দুটো শিফট হয়ে যায়। আর ষোলো ঘণ্টা হলে তিনটে শিফট। শুধু তাই নয় যখনই কাউকে চেকে পেমেন্ট করতে গিয়েছি তখনই ঝামেলা হয়েছে। যদিও বা চেকটা নিয়েছেন টিডিএসটা তাঁদেরকে সব সময় নগদ দিতে হয়েছে।”
অনিরের এত অভিযোগ থাকলেও এটা অস্বীকার করা যায় না যে পর পর বেশ কয়েকটি হিন্দি ছবির শ্যুটিং হয়েছে এই রাজ্যে। তার মধ্যে ছিল ‘লুটেরা’, ‘বুলেটরাজা’ আর ‘গুণ্ডে।’ এই সব ছবির ইউনিটের তো কোনওরকম অসুবিধের কথা শোনা যায়নি। “ওগুলো বড় বড় বাজেটের বাণিজ্যিক হিন্দি ছবি। ওঁরা আমাদের মতো ছোট ইন্ডিপেনডেন্ট ছবি শ্যুট করে না। ওঁদের কাজের পদ্ধতিও আলাদা,” বলছেন অনির। ভবিষ্যতে বাংলাতে কি শ্যুটিং করবেন? বাংলাকে ভালবাসেন তিনি। তবে বাংলাতে তিনি ‘ইন্ডি’ ছবি শ্যুট করতে পারবেন না। তিনি তখনই ফিরবেন যদি বড় স্টুডিয়োর ব্যানারে কাজ করেন।

এখানে কোনও সমস্যা নেই। কেউ যদি নিজের প্রচারের জন্য খবর করেন তা হলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা সরকারে আসার পরে ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে ‘বন্ধ’ শব্দটাই উঠিয়ে দিয়েছি। সর্বভারতীয় নিয়ম মেনেই আমরা এখানে কাজ করি। এখানে ইমপা আর ফেডারেশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটা জয়েন্ট কাউন্সিল আছে। সেখানে জানালেই সমাধান হয়ে যায়। তা না করলে কী করে কোনও সমস্যার সমাধান হবে? আমরা তো জ্যোতিষী নই যে হাত দেখে সব বুঝে যাব।
অরূপ বিশ্বাস (আবাসন ও যুবকল্যাণ মন্ত্রী)

আমাদের এখানে কোনও অভিযোগ আসেনি। আমাদের ফেডারেশন বুঝেশুনে সব নিয়মকানুন ঠিক করে। আমরা কোনও অন্যায় হতে দিই না। এই তো এখন একটা মালয়ালম ছবির শ্যুটিং কলকতায় হচ্ছে। ওঁদের ইউনিটের লোকজন আমাদের কাছে এসেছেন। কোনও সমস্যাই হয়নি। কে, কোথায় বোলপুরে শ্যুটিং করে চলে যায় তার খবর কলকাতাতে বসে আমাদের রাখা সম্ভব নয়। আমাদের কাছে লিখিত দরখাস্ত দিলে সেটা নিশ্চয়ই খুঁটিয়ে দেখব। তা না করে শুধুমাত্র মুখরোচক খবরের হেডলাইন তৈরি করলেই হবে নাকি?
অপর্ণা ঘটক (সাধারণ সচিব, ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস এ্যান্ড ওয়ার্কার্স অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়া)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.