|
|
|
|
|
ব্ল্যাকজ্যাক রুলে কাটগ্লাসে
রোশনাই উদ্যাপন
জমজমাট দেওয়ালি পার্টি বলতে কী?
এবার যদি আপনাকে দিতে হয়? পরামর্শ ঋতা ভিমানি-র। |
|
দীপাবলি মানেই উজ্জ্বলতা।
আলোর এই উৎসবকে মোহময় করতে গেলে চাই আভিজাত্যের ছোঁয়া। চাই যথাযথ ‘স্টাইল।’ যেমন আমার প্রিয় অভিনেত্রী বিদ্যা বালন। ডিজাইনার সব্যসাচীর পোশাক মাঝেমধ্যেই পরতে দেখা যায় ওঁকে। সব্যসাচীর ডিজাইনে চমক আছে ঠিকই, কিন্তু তার জমকালো ভাবটা এত বেশি যে বিদ্যার অন্তর্নিহিত সারল্যের ভাবটা যেন সাজগোজের আড়ালে চলে যায়।
দিওয়ালির সময়টায় বাজারে অনেক ধরনের ঘর সাজানোর সামগ্রী মেলে। সোনালি-রুপোলি জরি, রেশমি সুতোর তৈরি ঝিলমিলে তোরণ, নানা ধরনের স্ট্রিমার একগুচ্ছ কিনে ঘরের মধ্যে ঝুলিয়ে দিলেই যে অন্দরসাজ সুন্দর হবে, তা কিন্তু ভুলেও ভাববেন না। পরিকল্পনা টাই আসল। কী ভাবে দীপাবলির সন্ধেকে ছিমছাম স্নিগ্ধতা আর আভিজাত্যে মুড়ে দেওয়া যায়, আলোচনা করব সেটা নিয়েই।
গত বছর দীপাবলিতে গিয়েছিলাম লন্ডনে। তখন লন্ডনে অসাধারণ আবহাওয়া। প্রকৃতিতে শীতের আমেজ। আমাদের যাঁরা আতিথ্য দিয়েছিলেন, তাঁরা বলে পাঠালেন কোনও পশ্চিমি পোশাক নয়, সাবেকি শাড়ি আর সালোয়ার নিয়ে যেতে হবে। কারণ এই সময়টা ওখানে একের পর এক দিওয়ালি পার্টি হয়।
ওখানে এমন সব আলোর সাজে সাজানো মনোরম পার্টিতে যোগ দিয়েছিলাম, যেমনটা অনেক দিন দেখিনি। পাহাড়ি ঢালে সবুজ গাছগাছালি সাজানো সুন্দর সব বাড়ি। বাড়ির ভিতর দিওয়ালির রাজসিক খানাপিনার আয়োজন। সব পদই ভারতীয় ঐতিহ্য মেনে তৈরি।
|
|
আমাদের ভারতীয়দের কাছে উৎসবের অনেকটা জুড়েই থাকে পানভোজন। বাতাসে শীতের আমেজ, আর টেবিলে সাজানো গরমাগরম সব খাবার। ছোট ঝাল ঝাল শিঙারা থেকে বাদামের রকমারি, কাজু, পেস্তা, আমন্ড। বাড়িতে ঢোকার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কাটগ্লাসের পাত্রে আমাদের সার্ভ করা হয়েছিল অভিজাত ব্র্যান্ডের হুইস্কি, ওয়াইন আর শ্যাম্পেন। সুরাপানের বেশ কিছুটা পরে পরিবেশন করা হল রাতের খাবার। তারও অনেক পরে ঘরের বিভিন্ন কোনায় সাজানো টেবিল চেয়ারে মৌজমস্তির মেজাজে হালকা ভাবে শুরু হল বহু প্রতীক্ষিত জুয়া খেলা।
জুয়ার আলোয় দীপাবলি
কেউ কেউ মনে করেন শুধু খাবারে নয়, বচ্ছরভরের দিওয়ালির মজাটা লুকিয়ে রয়েছে জুয়া খেলার মধ্যে। বেশ একটা বড়সড় ফি দিয়েও ইভেন্ট ম্যানেজারদের ব্যবস্থা করে দেওয়া ক্রুপিয়েরস, অ্যাটেনডেন্টস, টেবলস, রুলে হুইলস আর ব্ল্যাকজ্যাক ডিলার খেলার আনন্দটাই আলাদা। কিন্তু আমাদের হোস্টদের যেন এ নিয়ে কোনও মাথাব্যথাই ছিল না। কারণটা পরিষ্কার। সকাল হতে না হতেই মুনিমজি নানান নামধারী কোম্পানিদের সঙ্গে বসে যেতেন। আর তাদের কত বাহারি সব নাম! ‘উই প্রোভাইড ইউ গ্যাম্বল’, অথবা ‘উইন হোয়েন ইউ লুজ উইথ মারগোলিস অ্যান্ড রিডলেস’ ইত্যাদি ইত্যাদি। মধ্যরাতের কিছু আগে আমাদের বলা হয়েছিল, “আরে, আপনারা থেকে যান। আপনারা নিশ্চয়ই বিশপ অ্যাভেনিউ (সবাই যে জায়গাকে চেনে মিলিয়নেয়ারস রো নামে)তে মিত্তলদের পুরনো ঘরানার পার্টিতে যাবেন না! হ্যাম্পস্টেডের এই অংশটাকে সবাই বলে বিলিয়নেয়ারস রো। ভাবুন একবার!
এই একই ঘটনা দিল্লিতে ঘটলে ঠিক কেমন পদ্ধতিতে ঘটতে পারে বলে মনে হয় আপনার? অতি সন্তুর্পণে ছত্তরপুরে একটা ফার্ম হাউস খুঁজে বের করে একজন জুয়াড়িকে জোগাড় করে নিন যিনি কিনা টেবিলে পাঁচ পাত্তি খেলার পাশাপাশি হ্যান্ড পোকারেও দু’পাত্তি খেলতে পারে, এক দুঁদে রাজনীতিক এবং পারলে একজন সিনিয়র সিবিআই অফিসারকেও নেমন্তন্ন করুন। থাকতে পারেন কোনও এক মন্ত্রী মহোদয়, এমনকী রাজধানী শহরের নামীদামি তারকাও। দেখবেন চারপাশে তখন ডিজাইনার শেরওয়ানি আর ব্যাকলেস চোলির ভিড়। উঁহু, খেলা এখন আর লক্ষ টাকায় আটকে নেই। এই মাপের মানুষরা কোটি টাকায় জুয়া খেলতে অভ্যস্ত। |
|
দিল্লি বা মুম্বইয়ের তুলনায় কম হলেও পয়সাকড়ির বা উৎসাহ-উদ্দীপনার দিক থেকে কলকাতার উচ্চবিত্তরাও কিছু কম যান না। সামান্য কিছু দিন আগের একটা ঘটনা শুনুন তা হলে। তিন অত্যুৎসাহী জুয়াড়ি দলের বিশাল ধনী কিছু সদস্যকে এক পুলিশ অফিসার দক্ষিণ কলকাতার এক জুয়ার আসর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর রীতিমতো খাবি খেয়েছিলেন জানতে পেরে যে ওই জুয়া পার্টির প্রধান অতিথি ছিলেন পুলিশের এক বড় কর্তা। এও শোনা যায় পুলিশ ভ্যানে করেই নাকি অতিথিদের আবার সেই জুয়ার আসরে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কাজেই শুধুমাত্র সমাজের ওপরতলার লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখলেই চলবে এমনটা নয়। পুলিশের উঁচুতলার কর্তাব্যক্তি এমনকী সিনিয়র আমলারাও বিস্তর কাজে লাগবেন। আর কী চাই বলুন তো? কয়েক ডজন কার্ড, প্লাস্টিক চিপ আর ডিলিংটা ঠিকমতো করতে পারে এমন একজন জুয়াড়ি। লন্ডনে আমাদের সেই পার্টিতে মজার আরও বাকি ছিল। এক্সোটিক পোশাক পরা এক ম্যাজিশিয়ানকে আনা হয়েছিল। একের পর এক কার্ড ট্রিকস দেখিয়ে তিনি মাত করে দিচ্ছিলেন দর্শকদের। বাজি পোড়ানোর ঘটাও ছিল দেখার মতো। শব্দবাজির দাপট নেই বললেই চলে। কিন্তু মশাল, তুবড়ি, চরকি আর ফানুসের আলোর বিচ্ছুরণে ঝলমল করে উঠছিল আকাশ। ফুলঝুরি হাতে আমরা যখন বাইরে বেরিয়ে এসেছিলাম, দূরের সুন্দর সুন্দর সাজানো বাড়িগুলো দেখে তাক লেগে গিয়েছিল আমাদের।
ঘরের সাজ-সজ্জা
আমার এক অল্পবয়সী মাড়োয়ারি বন্ধু প্রীতি অগ্রবাল। এক দিওয়ালিতে প্রীতি ক্যাসিনো পার্টির আয়োজন করেছিল। পোকার আর তিন পাত্তি খেলার জন্য তিনটে আলাদা আলাদা সেকশনও রেখেছিল। অতিথিদের সনাতন মাড়োয়ারি খাবার পরিবেশন করেছিল পুরোদস্তুর মাড়োয়ারি পোশাক আর পাগড়িধারী ওয়েটাররা। গোটা অনুষ্ঠানটাকেই কার্ড খেলার রঙের সঙ্গে রং মিলিয়ে কালো, লাল আর সাদাতে সাজানো হয়েছিল। গদিতে কালো রঙের চাদর পাতলে কুশনগুলো যেন অবশ্যই হয় লাল-সাদা রঙের। প্রত্যেকটা প্ল্যাটারে যেমন রাখা ছিল ছক্কা আকারের মোমবাতি। আর ছক্কায় যে সংখ্যাগুলো থাকে, তা করা হয়েছিল বিন্দি বসিয়ে। আর সার্ভিসিং করা হয়েছিল অবশ্যই রুপো আর পিতলের প্ল্যাটারে। এলাহি আয়োজন আর কী! ঘরে ঢোকার রাস্তায় রঙ্গোলি ছাড়াও গোটা বাড়িটাই দিওয়ালির আলোকসজ্জায় সেজে যেন রাতপরি হয়ে উঠেছিল।
বাড়ি সাজানো, বন্ধুবান্ধবদের বাড়ি বাড়ি উপহার পাঠানো, নিজেদের সৃষ্টিশীলতাকে কাজে লাগিয়ে দারুণ সব অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আলোর এই উৎসবকে শান্তি সম্প্রীতিতে ঝলমলে করে তুলতে দিওয়ালি সত্যিই অনবদ্য। তবে হ্যাঁ, শব্দকে জব্দ করে আলোর রোশনাইয়ে মেতে ওঠাতেই কিন্তু দিওয়ালির আসল মজা।
সবাইকে রইল দিওয়ালির শুভেচ্ছা....
|
দীপ জ্বেলে যাই |
• রঙ্গোলি তৈরি করুন ফুল দিয়ে। এক সার মাটির বা ডিজাইনার প্রদীপ জ্বালিয়েও অতিথি আপ্যায়ন করতে পারেন
• অভ্যাগতদের ছোট্ট গিফট কিটের মধ্যে উপহার দিতে পারেন একগুচ্ছ আতসবাজি। ছোটরা তো বটেই, বড়রাও দারুণ উপভোগ করবেন
• ইন্ডোর পার্টি হলে খুব ইনোভেটিভ উপায়ে সাজিয়ে তুলুন গ্যাম্বলিং বা তাস খেলার টেবিলগুলোকে। রঙের সঙ্গে রং মিলিয়ে টেবিল ক্লথ পাততে পারেন। টেবিলের মাঝখানে রাখতে পারেন কারুকাজ করা মাটির প্রদীপ।
• দিওয়ালির হালকা শীতের আমেজে মেন কোর্সে রাখতেই পারেন ধোঁয়া ওঠা বিরিয়ানি বা অসাধারণ সব মোগলাই ডিশ। পার্টির মুড তৈরি করতে এর জুড়ি নেই
• একটা গর্জাস দোপাট্টা বা একটা গভীর কাটের অনবদ্য চোলি কিন্তু নাটকীয় মোড় এনে দিতে পারে আপনার দিওয়ালির সাজে
• ঝলমল করুন। তবে ঝলসে দেওয়ার মতো সাজপোশাক না করলেই ভাল। আপনার পছন্দে থাক রুচি, আভিজাত্য |
|
|
|
|
|
|