আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল
প্যাথলজিস্ট নেই, কাজ চালাচ্ছেন টেকনিশিয়ান
প্যাথলজিস্টের অভাবে দীর্ঘ দিন ধরে দুর্ভোগ চলছে আরামবাগ মহকুমা হাসপাতালে। নেই পর্যাপ্ত টেকনিসিয়ানও। ফলে রিপোর্ট পেতে সময় লেগে যাচ্ছে অনেক বেশি। স্বভাবতই তা নিয়ে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে রোগীদের মধ্যে। তবে প্যাথলজিস্ট না থাকলেও বিভাগটি চালু রাখা হয়েছে। টেকনিসিয়ানদের তৈরি করা রিপোর্টে সই করছেন হাসপাতাল সুপার-সহ যে কোনও চিকিৎসক।
কেন এই পরিস্থিতি? হাসপাতাল সুপার নির্মাল্য রায় বলেন, “দুঃস্থ রোগীদের চাপেই বন্ধ করা যায়নি বিভাগটি। মহকুমা হাসপাতালের প্যাথলজিস্ট গত ৩০ সেপ্টেম্বর অবসর নেন। তারপর কোনও নতুন প্যাথলজিস্ট এই পদে যোগ দেননি। জেলা এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে প্রায় প্রতিদিনই এই সঙ্কটের কথা জানাচ্ছি, কিন্তু কিছুই হয়নি। ঝুঁকি নিয়েই অত্যন্ত জরুরি পরিষেবাগুলি দিতে হচ্ছে।” এ ব্যাপারে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তনিমা মণ্ডল বলেন, “বিষয়টি দেখা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই ওখানে প্যাথলজিস্ট দেওয়া হবে বলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের আশ্বাস পাওয়া গেছে।”
মহকুমা হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগটির এই দৈন্যদশা নিয়ে ক্ষোভ বিক্ষোভও কম নেই। রোগীর আত্মীয়-স্বজন প্রায় প্রতিদিনই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বচসায় জড়িয়ে পড়ছেন। তার জেরে বেশ কিছু দিন আগে বিভাগটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে বলে নোটিসও টাঙিয়ে দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও ব্যাপক বিক্ষোভ থাকায় বিভাগটি বন্ধ করা যায়নি। ওই দিনই কয়েক ঘণ্টা পরে ফের তা চালু হয়।
“রক্ত পরীক্ষার ডাক্তার নেই হাসপাতালে। কিন্তু এখানে বিনা পয়সায় পরীক্ষা
করানো ছাড়া উপায়ও নেই আমাদের। চার রকম পরীক্ষা বাইরে
করাতে গেলে কয়েকশো টাকা খরচ হবে।”

তবে প্যাথলজিস্ট না থাকায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রোগীরা। তাদের রক্ত ,মল ও মূত্রের পরীক্ষা সঠিক হচ্ছে কিনা তা নিয়ে সংশয়ে আছেন তাঁরা। খানাকুলের ঘোষপুর থেকে জ্বর নিয়ে এই হাসপাতালে এসেছিলেন দিনমজুর সুচাঁদ মণ্ডল। ক্রমাগত জ্বরের জন্য বহির্বিভাগের চিকিৎসকের নির্দেশ মতো রক্ত পরীক্ষার করাতে দিলেন তিনি। তাঁর কথায়, “রক্ত পরীক্ষারই তো ডাক্তার নেই। কিন্তু এখানে বিনা পয়সায় পরীক্ষা করানো ছাড়া উপায়ও নেই। চার রকম পরীক্ষা বাইরে করাতে গেলে কয়েকশো টাকা খরচ হবে।” অন্য দিকে, যাঁরা তুলনামূলক ভাবে স্বচ্ছল, তাঁরা বেশি টাকা খরচ করে বাইরে প্যাথলজি সেন্টারগুলিতে চলে যাচ্ছেন। কিন্তু সেখানে যেতে গিয়েও অনেকে পড়ছেন দালালদের খপ্পরে। এই ডামাডোলে আরও বেড়েছে দালালদের রমরমা।
আরামবাগ মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, খাতায় কলমে হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ২৫০ হলেও প্রতিদিন গড়ে রোগীর চাপ থাকে প্রায় ৪০০ জন। আরামবাগ মহকুমা ছাড়াও সংলগ্ন বর্ধমান,বাঁকুড়া, দুই মেদিনীপুর এবং হাওড়া থেকেও আসেন রোগীরা। বহির্বিভাগের বিভিন্ন বিভাগে প্রতিদিন রোগীর সংখ্যা হয় গড়ে ৬০০ জন। এর মধ্যে হাসপাতালের বহির্বিভাগ এবং অন্তর্বিভাগ মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১০০-১২০ জন রোগীর রক্ত-মল-মূত্রের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়। এ দিকে, হাসপাতালে একদিকে যেমন প্যাথলজিস্ট নেই, তেমনি প্রয়োজনীয় টেকনিসিয়ানও নেই। পাঁচ জন টেকনিসিয়ান থাকার কথা কিন্তু আছেন দু’জন। স্বভাবতই পরীক্ষার ফলাফল পেতে ৭ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। রক্ত-মল-মূত্র ছাড়াও মহকুমা হাসপাতালে হওয়া প্রয়োজনীয় অনেক পরীক্ষা (যেমন টাইফয়েড, ইউরিক অ্যাসিড) এই হাসপাতালে হয় না শুধুমাত্র টেকনিসিয়ানের অভাবে। এ নিয়ে হাসপাতাল সুপারের মন্তব্য, “নানান প্রতিকূল পরিস্থতির মধ্যেই টেকনিসিয়ানরা পরিষেবা দিয়ে যাচ্ছেন। অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ের পরে ঘণ্টা দু’য়েক বেশি ডিউটি করতে হয় তাঁদের। আমরা টেকনিসিয়ানও কয়েক বছর ধরে চেয়ে আসছি। কিন্তু আজও পাইনি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.