মাসিক ২৫ টাকার ‘ইজ্জত’ টিকিট কাটার নিয়ম বদলে যাওয়ায় শিয়ালদহের বিভিন্ন স্টেশনে বিক্ষোভ দেখালেন কিছু যাত্রী। রেল অবরোধ করা হল। দুর্ভোগ পোহাতে হল যাত্রীদেরই।
গত ২৫ অক্টোবর থেকে নতুন নিয়ম চালু হয়েছে। সোমবার সকালে বিক্ষোভে যোগ দেওয়া যাত্রীদের অভিযোগ, এখন ‘ইজ্জত’ টিকিট কাটতে জেলাশাসক, মহকুমাশাসক বা বিডিও-র যে শংসাপত্র লাগবে, তা তাঁরা দিচ্ছেন না। বিক্ষোভের জেরে এ দিন শিয়ালদহ মেন, দক্ষিণ ও বনগাঁ শাখায় ট্রেন চলাচল বিপর্যস্ত হয়।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মাসিক ‘ইজ্জত’ টিকিট চালু করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য ছিল, দারিদ্র্যসীমার নীচে থাকা মানুষও যাতে ট্রেন চড়ে কাজে যেতে পারেন, তার জন্যই এই ব্যবস্থা। এত দিন ওই টিকিট কাটার জন্য এলাকার বিধায়ক বা সাংসদের থেকে শংসাপত্র আনতে হত যে আবেদনকারী সত্যিই দারিদ্র্যসীমার নীচে রয়েছেন।
কিন্তু অভিযোগ ওঠে, রাজনৈতিক স্বার্থে এই সুবিধার অপব্যবহার করা হচ্ছে। যাঁরা জনপ্রতিনিধিদের শংসাপত্র জমা দিয়ে টিকিট কাটছেন, তাঁদের অনেকেই দারিদ্র্যসীমার অনেক উপরে রয়েছেন।
তদন্তে এই অভিযোগের সত্যতা মেলায় রেল নতুন নিয়ম চালু করে। রেলকর্তারা জানান, যাঁদের কাছে বিপিএল কার্ড বা অন্ত্যোদয় রোজগার যোজনার কার্ড রয়েছে, তাঁরা সরাসরি টিকিট কাটতে পারবেন। বাকিদের বিধায়ক বা সাংসদের পাশাপাশি স্থানীয় বিডিও, মহকুমাশাসক বা জেলাশাসকের থেকেও শংসাপত্র আনতে হবে।
এই নিয়ম শিথিল করার দাবিতেই এ দিন বিক্ষোভ দেখানো হয়। ক্যানিংয়ের ঘুটিয়ারি শরিফ, তালদি, রানাঘাট ও হাবরা স্টেশনে সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত ট্রেন অবরোধ হয়। তালদি স্টেশনে কিছু লোক ট্রেনের ওভারহেড তারে কলাপাতা ফেলে দেওয়ায় বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত ক্যানিং শাখায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। রেলের লোকজন কলাপাতা সরাতে গেলে বিক্ষোভকারীরা তাঁদের বাধাও দেন।
পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “ওই ঘটনার জেরে ক্যানিং শাখায় আটটি আপ এবং ডাউন ট্রেন বাতিল হয়। কয়েকটি ট্রেনকে চম্পাহাটি থেকে শিয়ালদহ ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু ইজ্জত টিকিট কাটার নতুন নিয়ম রেল বোর্ডের। তা শিথিল করার ক্ষমতা আমাদের নেই।”
মূলত সারা বাংলা পরিচারিকা সমিতিই এ দিন বেশির ভাগ জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছে। সমিতির তরফে কৃষ্ণা সর্দার, কাকলি পালেরা বলেন, “মহকুমাশাসক-বিডিওদের থেকে শংসাপত্র নিয়ে জমা দিতে বলা হচ্ছে। কিন্তু তাঁরা শংসাপত্র দিতে রাজি হচ্ছে না। আমরা সমস্যায় পড়ছি।”
উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসক সঞ্জয় বনশল বলেন, “প্রথমে
আয়ের শংসাপত্র দেয় স্থানীয় পঞ্চায়েত। পরে তা বিডিও-র কাছে যায়। অন্যথায় বিডিও-পক্ষে তো কারও প্রকৃত আয় জানা সম্ভব নয়। পঞ্চায়েতপ্রধান সত্যাসত্য বিচার করে না দিলে তিনি শংসাপত্র দিতে
পারবেন না।” ক্যানিংয়ের মহকুমাশাসক ফৈয়াজ আহমেদ খান বলেন, “কয়েক আমার কাছে এসেছিলেন। তাঁদের শংসাপত্র দিয়েছি। বিডিও-রা কী করছেন, খোঁজ নিয়ে দেখছি।” |