লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের নানা প্রান্তে এখন অন্য দল থেকে তৃণমূলে যোগদানের পর্ব চলছে! কংগ্রেস তো বটেই, ভাঙন ধরেছে বাম শিবিরেও। দলত্যাগের এই হিড়িককে বেনো জল এবং সুবিধাবাদী অংশকে বিদায় করার সুযোগ হিসাবেই দেখছে সিপিএম। যাঁদের মাথায় দল ছেড়ে শাসক শিবিরে যাওয়ার ভাবনা আছে, তাঁরা চলে গেলেই বরং বামেদের পক্ষে ভাল বলে সাফ জানাচ্ছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল!
সিপিএমের এই মনোভাবের কথা সোমবার স্পষ্ট করে দিয়েছেন দলের পলিটব্যুরো সদস্য তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে রবিবার তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন ওই দলের কলকাতা জেলা সম্পাদক মইনুদ্দিন শামস, তাঁর কাউন্সিলর-ভাই নিজামুদ্দিন এবং পরিবারের আরও দু’জন। সোমবারই বীরভূমের সাঁইথিয়া পুরসভার কংগ্রেসের ১০ জনের পাশাপাশি সিপিএম এবং ফ ব-র এক জন করে কাউন্সিলরও আনুষ্ঠানিক ভাবে তৃণমূলের পতাকা তুলে নিয়েছেন! এই সব ঘটনার প্রেক্ষিতেই প্রশ্নের জবাবে সূর্যবাবু এ দিন পরিষ্কার বলেছেন, “বামপন্থীদের দিক থেকে যাঁরা স্বেচ্ছায় যেতে চান, তাঁদের যাওয়াই ভাল! এঁরা থাকলে মুশকিল, গেলে ভাল!” কাউন্সিলর বা পঞ্চায়েত সদস্যের মতো জনপ্রতিনিধিদের দল বদলের দিকে ইঙ্গিত করে সূর্যবাবুর আরও মন্তব্য, “আগে থেকে জানালে বহিষ্কার করে ওঁদের যাওয়ার পথ আরও পরিষ্কার করে দেব! যাতে তাঁরা দলত্যাগ-বিরোধী আইনে না পড়েন!”
সম্প্রতি হলদিয়া পুরসভায় সিপিএম এবং সিপিআইয়ের চার কাউন্সিলরের সমর্থনে অনাস্থা প্রস্তাবে জিতেই নির্বাচিত বাম বোর্ডের হাত থেকে ক্ষমতা দখল করেছে তৃণমূল। তার জেরে এলাকার লোকাল কমিটির সদস্য এক কাউন্সিলরকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। তার পরেও কোথাও কোথাও ইতিউতি সিপিএম-সহ বাম শিবির ছেড়ে শাসক দলে নাম লেখানোর ঘটনা ঘটে চলেছে। ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে চাওয়া রাজনৈতিক কর্মীরা ‘ঝাঁকের কৈ’-এর মতোই আচরণ করছেন বলে সিপিএম নেতৃত্বের মত। দলে থেকে অস্বস্তির কাঁটা হিসাবে রয়ে যাওয়ার থেকে এই অংশের দল ছেড়ে যাওয়াই যে তাঁদের কাছে পছন্দের, সেই মতই বুঝিয়ে দিয়েছেন সূর্যবাবু।
প্রসঙ্গত, চেয়ারম্যান বীরু পারিখ-সহ ১০ কাউন্সিলর দল ছেড়ে এ দিন তৃণমূল ভবনে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্যের শাসক দলে যোগ দেওয়ায় সাঁইথিয়া পুরসভার ক্ষমতা কংগ্রেসের হাত থেকে তৃণমূলের দিকে চলে এসেছে। তাঁদের সঙ্গে সিপিএম, ফ ব এবং বিজেপি-র এক জন করে কাউন্সিলরও তাঁদের দলে যোগ দিয়েছেন বলে জানিয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের দাবি, বীরভূমের ৬টি পুরসভাই এখন তৃণমূলের হাতে।
এই দলত্যাগের ধাক্কা সামলাতে গিয়ে ফের অস্বস্তিতে পড়েছেন ফ ব নেতৃত্ব। মইনুদদ্দিনের জায়গায় নতুন জেলা সম্পাদক এবং সেই সঙ্গেই নতুন কলকাতা জেলা কমিটি গড়ার জন্য দু’মাসের মধ্যে বিশেষ জেলা সম্মেলন হবে বলে ঠিক হয়েছে। কিন্তু কলকাতা জেলা কমিটির বৈঠকে সেই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েও এক প্রস্ত ক্ষোভের মুখে পড়তে হয়েছে দলের রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষকে। তদারকি জেলা সম্পাদক হিসাবে তাঁর পছন্দের এক নেতার নামে আপত্তি প্রকাশ করেছে জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বড় অংশ। তাদের পছন্দ কলকাতার এক প্রাক্তন বিধায়ক।
এই অবস্থায় আপাতত জেলার বৈঠক আহ্বানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জেলা কমিটির চেয়ারম্যান শ্যামল কানুনগোকেই। সদস্যপদ স্ক্রুটিনির কাজে শ্যামলবাবুর সঙ্গে সহায়তা করতে বলা হয়েছে দেবব্রত রায়, অজয় অগ্নিহোত্রী ও অমিতাভ গঙ্গোপাধ্যায়কে। আর বিশেষ সম্মেলন পর্যন্ত রাজ্য নেতৃত্বের তরফে পর্যবেক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন জয়ন্ত রায় ও হাফিজ আলম সৈরানি। |