সচিন তেন্ডুলকরের বিদায়ী সিরিজ ঘিরে যখন তুমুল উন্মাদনা শহরে, তখন সেই উৎসবে যোগ দিল প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজও।
সোমবার দুপুরে কলকাতায় পা রাখার পর থেকেই সচিন-বন্দনায় গেইলরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রাক্তন অধিনায়ক রিচি রিচার্ডসন বলছিলেন, “এই ঐতিহাসিক সিরিজের সাক্ষী থাকতে পেরে আমরা সম্মানিত। সচিন চাইলে অন্য কোনও দেশের সঙ্গেও খেলতে পারত। কিন্তু ও আমাদের যোগ্য মনে করেছে। আমরা গর্বিত।”
রিচার্ডসনের কথা শুনলে মনে হতেই পারে যে, সচিনের কাজটা হয়তো কিছুটা সহজ করে দেবেন ক্যারিবিয়ানরা। কিন্তু টিম হোটেলের লনে দাঁড়িয়ে রিচার্ডসন সাফ বলে দিলেন, “সচিনকে শ্রদ্ধা করি বলেই সেটা করব না। করলে ওকে অপমান করা হবে। ক্রিকেট মাঠে যদি বিপক্ষে ভাই-ও খেলে, তা হলেও ছাড়া যায় না। সচিন সেঞ্চুরি করলে খুশি হব। কিন্তু ওর সেঞ্চুরি আটকানোর জন্য যা করা প্রয়োজন, সব করব আমরা।” |
সচিন ক্রিকেটকে চির-বিদায় জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেও, তাঁর ব্যাটিং-রেকর্ড কোনও ক্রিকেটারই ভাঙতে পারবেন না বলে মনে করছেন রিচার্ডসন। আনন্দবাজারকে বলছিলেন, “পনেরো বছর বয়স থেকে ক্রিকেট খেলছে। এক টানা চব্বিশ বছর ধরে খেলার মানসিকতাই তো নতুন প্রজন্মের মধ্যে নেই। রেকর্ড ভাঙা তো দূরের কথা। এত বছর খেলার জন্য যে ফিটনেস এবং মনঃসংযোগ লাগে, সেটা ঈশ্বর ওকে ছাড়া আর কাউকে দেয়নি। সচিনের রানের খিদে অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি। ওর রেকর্ড কেউ ভাঙবে, মনে হয় না জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারব।” ‘ক্রিকেটার’ সচিন তো বটেই ‘মানুষ’ সচিনেও মুগ্ধ রিচার্ডসন। মাস্টারব্লাস্টারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ গেইলদের টিম ম্যানেজার বললেন, “প্রচুর ক্রিকেটার দেখেছি। অনেকে যত উপরে উঠেছে, তত জোরে মাটিতেও পড়েছে। এত প্রচারের আলোতে নিজের মাথা ঠিক রেখে খেলা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সবাই পারে না। কিন্তু সচিন একেবারে অন্য রকম। এত বিনয়ী ক্রিকেটার খুব কম দেখেছি। সাফল্য ওর মাথায় প্রভাব ফেলতে পারেনি। আমি তো ওকে যতবার দেখি, ততবার মুগ্ধ হয়ে যাই।”
সচিনকে তাঁর বিদায়ী ম্যাচে কোনও বিশেষ উপহার কি দেওয়া হচ্ছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষ থেকে? রিচার্ডসন বললেন, “সচিনকে কী দেব? ওকে যাই দেব, সেটাই কম। তাও আমরা ভেবেছি গোটা টিমের সই করা একটা ব্যাট উপহার দেব সচিনকে। আমরা যে ওর ক্রিকেট-উৎসবে থাকতে পারছি, সেটাই আমাদের কাছে গর্বের ব্যাপার।”
লম্বা বিমান যাত্রা করে সোমবার অবশ্য টিম হোটেলে নিজেদের ঘর ছেড়ে বেরোলেন না গেইল-স্যামুয়েলসরা। বিদেশি মুদ্রা ভাঙানোর জন্য দু’একবার যাও বা উপরের মিডিয়া সেন্টারে ঘোরা ফেরা করলেন, নীচে হোটেলের লবিতে নামলেন না। তবে সচিনের বিরুদ্ধে খেলতে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের তরুণ-ব্রিগেড নিয়ে রিচার্ডসন বলছিলেন, “শিলিংফোর্ড ও শেল্ডনের মতো তরুণ ক্রিকেটার যেমন আছে, তেমনই গেইল-চন্দ্রপলের মতো অভিজ্ঞতাও আছে আমাদের দলে। আমার ধারণা, সিরিজে সমানে সমানে টক্কর হবে।” |
তবে সচিন-উৎসবের মধ্যেই নতুন বিতর্ক প্র্যাক্টিস মাঠ নিয়ে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ মঙ্গলবার থেকে অনুশীলনে নামতে চাইলেও, সিএবি সেই মাঠ জোগাড় করে উঠতে পারেনি। রিচার্ডসনের ক্ষোভ, “আমরা প্র্যাক্টিস করতে চাইলেও, এখনও পর্যন্ত তার ব্যবস্থা হয়নি। সিএবি আমাদের কলকাতা ঘোরাতে চাইছে। মন্দির দেখাতে চাইছে। কিন্তু আমরা প্র্যাক্টিস করতে চাই। ঘুরতে চাই না।” সিএবি-র কোষাধ্যক্ষ বিশ্বরূপ দে-র অবশ্য যুক্তি, “ইডেনে রঞ্জি চলছে। ইন্ডোরও ফাঁকা নেই। তা ছাড়া বৃষ্টির জন্য মাঠের যা অবস্থা, তাতে যাদবপুর ক্যাম্পাসের মাঠ কিংবা ইডেনে মঙ্গলবার অনুশীলন করা সম্ভব নয়। নীচের মাটি এখনও ভেজা আছে।” ওয়েস্ট ইন্ডিজ এখনও কলকাতা-ভ্রমনে রাজি না হলেও, সিএবি আতিথেয়তায় কোনও রকম ত্রুটি রাখছে না। কালীঘাট মন্দির, দক্ষিনেশ্বর মন্দির দেখার জন্য বাসের ব্যবস্থা থাকছে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা মঙ্গলবার সকালে যাদবপুর ক্যাম্পাসের মাঠ পরিদর্শন করার পরেই জানাবেন রিচার্ডসনরা।
সচিন-বন্দনায় যখন বিভোর ওয়েস্ট ইন্ডিজ, তখন ইডেনকে সচিনময় করে তুলতে কোনও রকম খামতি রাখছে না সিএবি-ও। সোমবার রাতে যেমন ক্লাব হাউসে বসানো হল মাস্টার ব্লাস্টারের কাট আউট। এবং টেস্ট ম্যাচ চলাকালীন আরও অনেক চমক থাকছে সচিন-উৎসবের জৌলুস বাড়াতে!
|
জাহির-গম্ভীর ফিরতে পারেন
নিজস্ব প্রতিবেদন |
সচিন তেন্ডুলকরের বিদায়ী সিরিজের জন্য ভারতীয় টেস্ট দল নির্বাচন মঙ্গলবার। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে দু’টেস্টের সিরিজের দলে জাহির খান, গৌতম গম্ভীর আর বীরেন্দ্র সহবাগের ফেরা নিয়ে ক্রিকেটমহলে কৌতূহল আছে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও সম্প্রতি টিভি চ্যানেলে বলেছেন, সামনের কয়েক মাসে বিদেশে ভারতের তেরোটা টেস্ট ম্যাচের কথা মাথায় রেখে এখনই এই পোড়খাওয়া সিনিয়রদের দলে ফেরানো উচিত। সম্ভাব্য প্রত্যাবর্তনের র্যাঙ্কিং ধরলে একে জাহির। দুই গম্ভীর। সব শেষে সহবাগ। যদিও মুরলী বিজয়-শিখর ধবন জমে ওঠা ওপেনিং জুড়ি দেখে সহবাগ বোর্ডকে ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, তাঁকে জাতীয় দলের জন্য ভাবলে সেটা মিডল অর্ডারের জন্য হলেই ভাল হয়। কিন্তু সেখানেও পূজারা-কোহলি-রোহিতদের (এবং অবশ্যই সচিন) ঠাসাঠাসি ভিড়। বরং সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’র বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি করার সুবাদে তৃতীয় ওপেনারের জায়গায় গম্ভীরের ফেরার সম্ভাবনা আছে। আবার পেস আক্রমণে ইশান্ত শর্মার চলতি অস্ট্রেলিয়া ওয়ান ডে সিরিজে জঘন্য ফর্মের কথা ভাবলে দেশের সবচেয়ে সিনিয়র পেসার জাহিরকে নির্বাচকেরা টেস্ট দলে ফিরিয়ে আনতে পারেন। তার উপর এ দিনই জাহির লাহলির রঞ্জি ম্যাচে চার উইকেট নিয়েছেন। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’-র বিরুদ্ধে বেসরকারি টেস্টেও একটি ইনিংসে চার উইকেট নিয়ে জিতিয়েছিলেন। বাংলার সামি আহমেদ কি টেস্ট দলে থাকবেন? পনেরো জনের দল এবং তাতে পাঁচ পেসার রাখার সিদ্ধান্ত হলে সামি সুযোগ পেতেও পারেন। |