ক্রিকেট দেবতার আজ তিন প্রতিপক্ষ
পানিপথের পাশে সচিনের মহাযুদ্ধ
তিহাসিক পানিপথ থেকে ক্রিকেট স্টেডিয়ামটা খুব একটা দূর নয়। লাহলি থেকে গাড়িতে বড়জোর ঘণ্টাদুয়েক। কে জানত, ইতিহাস বইয়ের ওই বিখ্যাত জায়গার খুব কাছাকাছি এক মঞ্চে কয়েক শতাব্দী পর ভারতবর্ষের আরও এক মহাযোদ্ধা কঠিনতম সব প্রতিদ্বন্দ্বীর মুখে পড়ে যাবেন!
শুধু তফাত হচ্ছে, বাবর-আকবররা মুঘল ছিলেন, ইনি মরাঠি। ওঁরা এক সময় দেশের শাসক হিসেবে আবির্ভূত হয়ে থাকলে, ইনি বর্তমান ক্রিকেট বিশ্বের অধীশ্বর। ওঁরা ভারতবর্ষে মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠা করে থাকলে, ইনি ক্রিকেট-সাম্রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে এক কঠিন প্রশ্নপত্রের সম্মুখীন।
এবং ইনি সচিন রমেশ তেন্ডুলকর আজ মঙ্গলবার লাহলির রণক্ষেত্রে এক নয়, তিন কড়া প্রতিপক্ষের বিষাক্ত বাউন্সার সামলাতে নামছেন!
মঙ্গলবার হরিয়ানার প্রত্যন্ত গ্রামে সচিনকে যেমন অবসরের আগে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের ক্রিকেট-মর্যাদা রক্ষায় নামতে হবে, ঠিক তেমনই নামতে হতে পারে বিপদসঙ্কুল পরিস্থিতি থেকে মুম্বইকে বাঁচানোর যুদ্ধে। সবচেয়ে বড় কথা, তাঁকে নামতে হচ্ছে এমন এক পিচে যা আদতে ব্যাটসম্যানদের বধ্যভূমি। একই দিনে যে পিচের তিন-তিন বার মেজাজ পাল্টায়। কখনও সে সিমারের, কখনও ব্যাটসম্যানের। কখন যে কোন পরিবর্তন অপেক্ষা করে আছে, তা আন্দাজ করার উপায় তো নেই-ই, বরং সময়-সময় যদি লাহলির বাইশ গজকে ইব্রাহিম লোধি-সম ধুরন্ধর প্রতিদ্বন্দ্বী মনে হয়, খুব একটা দোষ দেওয়া যাবে না!
ইডেনে চলছে সচিন-উৎসবের প্রস্তুতি। ক্লাবহাউসে বসছে
মাস্টার ব্লাস্টারের কাটআউট। সোমবার রাতে। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক।
দিনভর ফিল্ডিং সেরে সন্ধের লাহলিতে জাহিরের পিঠ চাপড়াতে-চাপড়াতে যে সচিন তেন্ডুলকর বেরিয়ে আসছিলেন, তাঁর মুখচোখ থেকে টেনশনের তেমন কোনও চিহ্ন পাওয়া গেল না। রাতের দিকেও ফুরফুরে ছিলেন। গেস্টহাউসে গিয়ে ডিনারে অর্ডার দেন চিকেন তন্দুরি, লস্যি। ইকবাল আবদুল্লাহ্-র মতো তাঁর মুম্বই টিমের সতীর্থদের কেউ কেউ এ দিন বলছিলেন, “আপনারা রঞ্জির একটা ইনিংস দেখে এত কিছু বলছেন। যদি সেকেন্ড ইনিংসে সচিন পাজি বড় রান করে দেয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজকে মেরে সেঞ্চুরি করে, তখন কী বলবেন?”
ঠিক। মঙ্গলবার (জাফর-রাহানেরা শুরুতে একাই বার না করে দিলে) যদি মহানায়ক নেমে বড় রান পেয়ে যান, কিছু বলার তো থাকবেই না। উল্টে জীবনের অন্তিম টেস্ট সিরিজে নামার আগে তাঁর ফর্ম নিয়ে যাবতীয় সংশয় নিঃসন্দেহে ভারত মহাসাগরে নিক্ষিপ্ত হবে। কিন্তু না হলে? গত তিন দিন ধরে হরিয়ানার প্রত্যন্ত গ্রামে তাঁকে নিয়ে যে আবেগের রংমশাল জ্বলছে প্রতি মুহূর্তে, যেখানে তিনি টুপি ঠিক করলেও ‘সচিন...সচিন’ চিৎকারে গলা ফাটিয়ে দিচ্ছে কয়েক হাজার মানুষ, যেখানে শুধু তাঁকে একটু ভাল করে দেখার জন্য সাইটস্ক্রিনের পিছন থেকে উঁকি মারছে উর্দিধারীর মুখ সে সবের কী হবে? খুব সহজে, হরিয়ানা ম্যাচটা আর সচিনের কাছে নিরামিষ রঞ্জি নেই। শুষ্কং-কাষ্ঠং টেস্ট প্রস্তুতিও আর নয়। অনেক বেশি করে এটা এখন তাঁর সম্মানের প্রশ্ন, মর্যাদার প্রশ্ন। পরপর দু’ইনিংসে ব্যর্থ হলে, মহানায়কের সঙ্গে তাঁর টিমও শেষ পর্যন্ত পরাভূত হলে বলাবলি চলবে যে, দেখলে তো সচিন তেন্ডুলকর থাকা সত্ত্বেও তো মুম্বই জিতল না!
এবং পারিপার্শ্বিকও সচিন ও তাঁর টিমকে নিশ্চিন্তে থাকতে দেবে না। মোহিত শর্মার বলে তাঁর বিশ্রী বোল্ডের ‘দুর্ঘটনা’-র চব্বিশ ঘণ্টাও পেরোয়নি। হরিয়ানার মতো মুম্বইয়ের প্রথম ইনিংস সবুজ পিচে পেস-বিস্ফোরণে উড়ে গিয়েছে। ধোনির সংসারে অতীত হয়ে যাওয়া যোগিন্দর শর্মা পাঁচ উইকেট নিয়ে শুনিয়ে রেখেছেন, “দ্বিতীয় ইনিংসে যা উঠেছে, যথেষ্ট। আমরা জানি এই পিচের কোথায় বল করে উইকেট তুলতে হয়!” যে মন্তব্যের নিগূঢ় অর্থ বেশ সাংঘাতিক। জানা গেল, লাহলি পিচের বিশেষত্ব হচ্ছে সকাল-বিকেল সে থাকে পেসারদের দিকে। মাঝের সময়ে রোদ উঠলে ব্যাটসম্যানের। কারণ পিচের দু’ফুট নীচে জলের অবস্থান আর আবহাওয়ার ঠান্ডা ভাব উইকেটে অনেক সময় ধরে নাকি ভিজে ভাব রেখে দেয়। সিমারদের তাই এখানে পোয়াবারো। হরিয়ানার ‘লিড’ এখনই ২২২, এখনও ফেলতে হবে শেষ উইকেট। সচিনের মুম্বইয়ের কাজ তাই কঠিন নয়, বেশ কঠিন। পিচ কিউরেটর যশমের সিংহকেও বলতে শোনা গেল, “একমাত্র আপনাদের গাঙ্গুলি এখানে বড় রান পেয়েছেন। আর কাউকে মনে পড়ছে না।”
রাতে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ফোনে পাওয়া গেল না। কিন্তু বছর দেড়েক আগে এই পিচেই বাংলার হয়ে তাঁর দুর্ধর্ষ সেঞ্চুরি নিয়ে বলতে গিয়ে সে দিন লাহলিতে উপস্থিত তাঁর টিমমেটদের কেউ কেউ বলে দিলেন, লাহলির ‘ভৌতিক’ পিচে সে দিন ‘অন দ্য রাইজ’ ড্রাইভে যাননি সৌরভ। পুশ ছেঁটে ফেলেছিলেন। শুধু কাট মারতেন, আর পায়ের কাছে বল পেলে পাল্টা আক্রমণ।
বছর দেড়েক আগে নাকি ওই রঞ্জি ম্যাচে রোজ সকালে সৌরভকে দেখা যেত ভিজে টেনিস বল নিয়ে নেটে ঢুকতে। আগে প্র্যাক্টিস, তার পর ম্যাচে নামা। সোমবার সচিনকেও দেখা গেল, সকাল আটটা থেকে নেটে পড়ে। ভিতরে ঢুকে আসা বলে প্র্যাকটিস করে চলেছেন...।
কে জানে কী হবে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর

হরিয়ানা: ১৩২ ও ২২৪-৯।
মুম্বই: ১৩৬।

পুরনো খবর:




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.